২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রাজনগরে প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢলে ৩০ গ্রাম প্লাবিত

- ছবি : নয়া দিগন্ত

মৌলভীবাজারের রাজনগরে প্রবল বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মনু কুশিয়ারা নদীর উপচেপড়া পানিতে ৩০টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

এ দিকে উপজেলার দুই দিকে প্রবাহিত মনু ও কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ২০২২-এর মতো ভারী বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দু’টি নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরেজমিনে নদী তীরবর্তী দুর্গত এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহ দিন যাবৎ প্রবল বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মনু কুশিয়ারা নদীর উপচে পড়া পানিতে উপজেলার ৩০টি গ্রামেরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। উপজেলার দু’দিকে প্রবাহিত মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুর্গত লোকজন ভারী বন্যার আশঙ্কা করছেন। টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও দু’টি নদীর উপচে পড়া পানিতে ইতোমধ্যে উপজেলার ফতেহপুর, টেংরা, উত্তরভাগ, কামারচাক ও রাজনগর সদর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মনু ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার প্লাবিত এলাকাগুলো হচ্ছে, ফতেহপুর ইউনিয়নের জাহিদপুর, চরকারপাড়, আব্দুল্লাহপুর, রশিদপুর, কাশিমপুর, সোনালুয়া, শাহপুর, বেড়কুড়ি, লামা বিলবাড়ি, সাদাপুর, তুলাপুর, উত্তরভাগ ইউনিয়নের ছিক্কাগ্রাম, কামালপুর, নয়াটিলা, আমনপুর, সুরিখাল, জুগিকোনা, কেশরপাড়া, সোনামপুর, উমরপুর, কান্দিগাঁও, রুস্তমপুর, রাজনগর সদর ইউনিয়নের নন্দীউড়া, ভূজবল, কামারচাক ইউনিয়নের পঞ্চানন্দপুর, হাটি করাইয়া, তেঘরি, টেংরা ইউনিয়নের রাউবাড়ি। প্লাবিত এসব এলাকায় খাবার পানি, গোখাদ্যসহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত এলাকার লোকজন আত্মীয়-স্বজন ও পাশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই আবার গবাদিপশু ও কষ্টার্জিত সম্পদের মায়ায় কষ্ট করে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।

এ দিকে, মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে বিগত ২০২২-এর মত স্থায়ী বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন অসহায় লোকজন।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান খান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দৃর্গতদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

দুর্গত এলাকার লোকজন এ প্রতিবেদককে জানান, সপ্তাহ খানেকের ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও মনু কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও উভয় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ তা প্রতিরোধে যথা সময়ে ব্যবস্থা নেয় না। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাদের।

আব্দুল্লাহপুর গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিমল দাশ (৭০) জানান, কুশিয়ারা নদীর উপচে পড়া পানি যাতে মানুষের বাড়ি-ঘরে না উঠে এজন্য নিজ উদ্যোগ নিয়ে দু’টি ভাঙ্গন মেরামত করেছি। এলাকার লোকজনও এ ব্যাপারে কাজ করছেন। তারপরও শুধু ফতেহপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মনু ও কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধমূলক কাজ চলমান রয়েছে। আপাতত বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে উভয় নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন মেরামত করা হয়েছে এবং নদী তীরবর্তী এলাকার ইউপি সদস্যদের নিকট ভাঙ্গন প্রতিরোধক জিও ও সিনথেটিক বেগ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ভাঙ্গন প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement