২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মৌলভীবাজারে খাসির চামড়া পুঁতে ফেলা হয়েছে মাটির নিচে

-

মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী বালিকান্দি চামড়া ব্যবসায়িরা এবার কোরবানির খাসির চামড়া ক্রয় করেননি। শঙ্কা সিন্ডিকেটের দৌরাত্মা। আর এই চামড়া বিক্রয় না হওয়াতে মনু নদীর পাড়ে মাটির গর্তে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

মঙ্গলবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বালিকান্দি এলাকায় দেখা গেছে, মনুনদীর পাড়ে কয়েক শত খাসির চামড়া মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। এতে এবারেও কয়েক লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে খাসির চামড়া খাতে।

মৌলভীবাজারে গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারো পশুর চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি। প্রত্যাশিত দামে বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই খাসি ও গরুর চামড়া দান করেছেন মাদরাসা অথবা এতিমখানায়। আর এসব চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংলিষ্ট প্রতিষ্ঠান।

সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও প্রতি পিস গরুর চামড়া ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার দরে বিক্রি হয়েছে। খাসির চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারের নিকট চামড়া বিক্রি করতে না পেরে পৌর বাস ট্রার্মিনাল ও বালিকান্দি এলাকায় ফেলে যান অনেকে। আর এসব খাসির চামড়া মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।

ঈদের দিন বিকেলে প্রচুর পরিমাণ গরু ও খাসির চামড়া মৌলভীবাজার পৌরবাস টার্মিনালে জমে ছিল। সেখানেও দেখা যায় বিক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম।

মঙ্গলবার ভোরে চামড়াগুলো পচে পরিবেশ দূষণ হওয়ার আশঙ্কায় পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তা অপসারণ করেছে।

স্থানীয় এতিমখানার সদস্য জাহেদ বলেন, ‘আমাদের এতিমখানা পরিচালনা জন্য বড় অঙ্কের আয়ের উৎস হলো চামড়া বিক্রির টাকা। এবার কি দিয়ে এতিমখানা চলবে ভেবে পাচ্ছি না।'

বালিকান্দি গ্রামের ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘রাতের বেলা বিভিন্ন চামড়া সংগ্রহকারী এসে বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া দিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে কিন্তু আমরা রাখতে পারিনি। অনেকে রাস্তায় চামড়া রেখে পালিয়ে যায়।’

স্থানীয় মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা বছরে একবার চামড়া সংগ্রহ করি যা বিক্রি করে এতিম অসহায়দের সাহায্য করি। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবত এ সুযোগ পাচ্ছি না। স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতে না পেরে বালিকান্দি নিয়ে যাই। রাত পর্যন্ত কোনো ক্রেতার দেখা পাইনি। অবশেষে বিনামূল্যে দিতে চাইলেও কেউ তা নেননি।’

মৌলভীবাজার চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বালকান্দি গ্রামের হাফিজ মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে এইবার চামড়া কম সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন শঙ্কা একটাই যদি সিন্ডিকেটের কবলে না পড়ি। তাহলে ব্যবসায় কিছুটা স্বস্তি আসবে। ছাগলের চামড়ার মূল্য নেই। অনেকেই মাটিতে পুঁতে ফেলেছে ।’

বালকান্দি গ্রামের চামরা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শওকত আলী বলেন, ‘বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা ধরে রাখার জন্য আমরা সবসময় ব্যবসা করি আমাদের অনেক টাকা ঢাকা ও নাটোরের টেনারী মালিকরা আটকিয়ে রেখেছে। সরকারিভাবে যে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। টেনারী মালিকরা আমাদের প্রতি বছর ওই পরিমাণ মূল্য দেয় না। আমরা চামড়া ক্রয় করে লবণজাত করার পর তার অর্ধেক দাম আমাদের দেয়। এতে আমাদের লোকসান হয়। তাদের সাথে দরকষাকষি করে আমরা পারি না। যার কারণে কাঁচা চামড়া ক্রয় করতে আগ্রহী নয়। আমাদের কাছে খাসির চামড়া বিক্রি করতে না পারায় কেউ মাটিতে পুঁতেছে । এতে আর কিছু না হলেও একটা শিল্প ধ্বংস হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘এবারের ঈদে আমরা সীমিত পরিমাণ চামড়া ক্রয় করেছি। খাসির চামড়া ক্রয় করিনি। এগুলো প্রক্রিয়াজাত করে কোথাও বিক্রি করা যায়। মৌলভীবাজারে এ পর্যন্ত ১৪ থেকে ১৫ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে।’


আরো সংবাদ



premium cement