২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সুনামগঞ্জের হাওরে বাউল সম্রাট শাহ্ আ: করিম লোক উৎসব

সুনামগঞ্জের হাওরে বাউল সম্রাট শাহ্ আ: করিম লোক উৎসব - নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের হাওরে বাউল সম্রাট শাহ্ আ: করিম লোক উৎসব উদযাপিত হয়েছে। 'আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, গেরামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম। কেন পিরীতি বাড়াইলেরে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি। কোন মেস্তোরি নাও বানাইল, কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূর পঙ্খী নাওয়ে, বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে সইগো বসন্ত বাতাসে'- এমন অসংখ্য কালজয়ী বাউল গানের রচয়িতা বাউল সম্রাটের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।

এই এলাকা থেকে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গান ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। শিক্ষা নিয়ে শুদ্ধ সুরে বাউল গান গাইবেন শিল্পীরা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্মস্থান হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজান ধল গ্রামের মাঠে বৃহস্পতিবার বিকেলে দু'দিনব্যাপী ২০২৪ শুরু হয় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯তম লোক উৎসব এবং তা চলে আজ শুক্রবার দিবাগত রাত পর্যন্ত।

সন্ধ্যা ৭টায় উজান ধল গ্রামের মাঠে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে দু'দিনব্যাপী এই লোক উৎসবের উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।

শাহ আব্দুল করিম পরিষদ ও ধল গ্রামবাসীর যৌথ আয়োজনে এবং ব্যন্ড লেটরী কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স বিকাশ লিমিটেড এর সার্বিক সহযোগিতায় দু'দিনব্যাপী এই লোক উৎসব উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শাহ আব্দুল করিম পরিষদের সভাপতি শাহ আব্দুল করিম পূত্র শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে ও দিরাই উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা পারমিতা দাসের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শফিউর রহমান, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার(অতিরিক্ত ডি আইজি) মোহাম্মদ এহসান শাহ,অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ হুমায়ূন কবীর, দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান খন্দকার, দিরাইয়ের ভূমি কমিশনার (এ্যাসিল্যান্ড) জনি রায়, ব্যন্ড লেটরী কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স বিকাশ লিমিটেডের ইভিপি হেড অব ডিপামেন্টের হুমায়ূন কবির, দিরাই থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

দেশের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে বাউল সম্রাটের জন্মস্থান উজান ধল গ্রামে তার ভক্তবৃন্দ, বাউল শিল্পী আর শত শত দর্শনার্থী ছুটে এসেছে। বাউল সম্রাটের শেষ ইচ্ছা ছিল তার উজানধল বাড়িতে গানের সঙ্গীতালয় প্রতিষ্ঠা করা এবং রাস্তাঘাট পাকা করার। কিন্তু তা না হওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উৎসবে আসা বাউলের ভক্তরা।

শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি দিরাইয়ের তাড়ল ইউনিয়নের উজান ধর গ্রামে পিতা ইব্রাহিম আলী ও মাতা নাইরজান বিবির ঘরে জন্মগ্রহন করেন এবং ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি মৃতুবরণ করেন। তিনি তার জীবদ্দশায় একহাজারের উপরে বাউল গান রচনা করে গেছেন এবং ২০০১ সালে তিনি লোক সঙ্গীতের উপরে একুশে পদকপ্রাপ্ত হয়ে সরকার তাকে পুরস্কারে ভূষিত করেন।

এ ব্যাপারে বাউল সম্রাটের পুত্র শাহ নূর জালাল জানান, তার পিতা একটি গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি সবসময়ই লোভ লালসার উধের্ব ছিলেন। তিনি তার জীবদ্দশায় অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা বুকে লালন করে মানুষকে নিয়ে, মানুষের মাঝে বিভেদ দূর করে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ আর খ্রিস্টান- সবাই আমরা এক মায়েরই সন্তান এমন নীতি ছিল তার পিতা শাহ আব্দুল করিমের। তিনি তার পিতার আশা ছিল, একটি সঙ্গীতালয় হবে এখানে। সকল ভক্তরা এবং আগামী প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাউল গান শিখে দেশকে আরো সমৃদ্ধ করবে। এজন্য সরকারের উদ্যোগের প্রতি আহবান জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ব্যন্ড লেটরী কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স বিকাশ লিমিটেডের ইভিপি হেড হুমায়ূন কবির বলেন শাহ আব্দুল করিম একজন গুণী মানুষ ছিলেন। তাই বিকাশ কোম্পানি গত কয়েক বছর ধরে লোক উৎসবে সহযোগিতা করে আসছে।


এ ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি শাহ মিজান শফিউর রহমান বলেন, তিনি চাকরির সুবাদে এই সিলেট বিভাগে অবস্থান করায় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের একজন গানভক্ত মানুষ। তাই তিনি বাউল প্রেমে উদ্বুদ্ধু হয়ে ছুটে এসেছেন এই লোক উৎসবে। তিনি শাহ আব্দুল করিমকে একজন আধ্যত্মিক সাধক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার গুণী মানুষ বলে আখ্যায়িত করেন এবং উজানধল গ্রামে বাউলের বাড়িতে আসা যাওয়ার যে রাস্তাটি রয়েছে, তা আরো প্রশস্ত করতে সরকার ও জেলা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম একজন ক্ষণজন্মা গুণী মানুষ ছিলেন। তার বাড়িতে একটি সঙ্গীতালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং রাস্তাঘাটসহ এখানে ভক্তদের আসা-যাওয়া এবং থাকার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


আরো সংবাদ



premium cement