২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখীর হাসি

- ছবি - নয়া দিগন্ত

মৌলভীবাজারে এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর এখন যেন এক হলদে ফুলের রাজ্য। গাছে গাছে সূর্যমুখী ফুল দেখে মন জুড়িয়ে যায়। হাওরের বুক চিরে হলদে ফুলের রাজ্য প্রতিনিয়ত পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় সূর্যমুখী ফুলের হলুদাভাব দৃশ্য সহজেই মানুষকে কাছে টানে। সারি সারি সূর্যমুখী গাছের ডগায় বড় বড় আকারের ফুল, যেন দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ। বিকেলে যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়, ঠিক তখনই হাকালুকির সৌন্দর্য ফুটে উঠে! দূর থেকে মনে হয় যেন সূর্যমুখীর হাসিতে সূর্যের মেলা বসেছে। অপরূপ এই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন হাওর পাড়ে ভীড় করছেন পর্যটকরা।

হাকালুকি হাওরে হলুদ ফুলের মন মাতানো ঘ্রান আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের মায়ার ফসলি জমি। বিনোদনের পাশাপাশি মূলত তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দিচ্ছে।

চাষিরা বলেন, সূর্যমুখী চাষ করার পদ্ধতি মোটামুটি সহজ। প্রতি বিঘা জমিতে তিন কেজি বীজ, সামান্য সার ও কীটনাশক হলেই পর্যাপ্ত। সবকিছু মিলিয়ে খরচ হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে কৃষকের লাভ খুবই ভালো হয়। তাই দিন দিন এ চাষের প্রতি কৃষকরা ঝুঁকছেন বেশি।

হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা পর্যটক রোকেয়া রহমান ও ইমরুন নাহার সুমি বলেন, পড়ন্ত বিকেলে সূর্যমুখীর হাসি সত্যই অসাধারণ। সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমরা হাকালুকি হাওরে এসেছি। হাকালুকি হাওর এলাকায় তেলবীজ হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ যেন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারি সহায়তায় অল্প ব্যয়ে প্রচুর লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এশিয়ার এ বৃহত্তম হাওরে সূর্যমুখী চাষ হতে পারে অন্যতম সম্ভাবনাময় ফসল।

সূর্যমুখী বাগান দেখতে অসখ্য পর্যটক স্থানীয় সাংবাদিক জানান, হাওরের বুকে সূর্যমুখীর ফুলগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগছে। তবে হাওরে আসার রাস্তাঘাট ভালো না থাকায় এখানে আসতে খুবই কষ্ট হয়। সরকারের এদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।

সূর্যমুখী চাষি কামরুল ইসলাম ও সাইফুর রহমান বলেন, হাকালুকি হাওরের পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলনও খুবই ভালো হয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সূর্যমুখী চাষ আরোও সম্প্রসারণ করব। সরকারের কাছ থেকে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরামর্শের পাশপাশি বিনামূল্যে বীজ পেয়েছি।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, প্রনোদনার আওতায় জুড়ীতে ২৩০ জন কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছে। এবার উপজেলায় থেকে ২৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। চাষকৃত সূর্যমুখীর মধ্যে হাইসান-৩৩, আরডিএস ২৭৫ জাতের আবাদ করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো: মাহমুদুল আলম খান বলেন, জুড়ী উপজেলায় মোট ২৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সূর্যমুখ চাষ করে কৃষকরা যাতে লাভবন হয় সেই লক্ষ্যে সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। সূর্যমুখী ভোজ্য তেল হিসেবে গুণগত মানের দিক থেকে বেশ ভালো। বাজারে সূর্যমুখীর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় এবং উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের উপযোগী হওয়ায় এ বছর ভালো ফলনের মাধ্যমে চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমরা আশা করছি। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে আমরা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement