২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সবজি চাষে বছরে ৩ লাখ টাকা আয় উসমান গনীর

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী নরসিংপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম শ্রীপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে উসমান গনী। এক সময় নিজের ভিটে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। ছিলো না মাথা গোঁজার ঠাঁই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছিল। এখন নিজের বাড়ি-ঘর সবকিছু হয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম শ্রীপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বন্ধক জমি নিয়ে মাটি খুঁড়ে ফলিয়েছেন সবুজ-সোনালি শস্য। আর সে শস্যের সোনালি আভায় আলোকিত হয়েছে নিজের ঘর। নিজের আয়ের পাশাপাশি তার জমিতে বছর জোরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে এলাকার আটটি পরিবার। কৃষিকাজ ছেড়ে একাধিকবার উসমান গনী বিদেশে যেতে ইচ্ছে পোষণ করলেও তার জমিতে কাজ করা নারীরা তাকে বাঁধা প্রদান করে কান্নাকাটি করে কর্মসংস্থান হারানোর ভয়ে।

বন্ধক ৮০ শতাংশ জমিতে শিম, মরিচ, লালশাক, করলা, লেবু, কালা বেগুন, লাউ আরো অনেক রকমের সবজির চাষাবাদ করেন তিনি। সারা বছরই কোনো না কোনো জাতের সবজি চাষ করেন এই জমিতে। প্রতি বছর ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ হয়। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী ও সন্তানসহ ১০ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ নির্ভর করে তার চাষ করা সবজির আয়ে।

উসমান গনীর জমিতে কাজ করা রহিমা খাতুন বলেন, ‘প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ জন মানুষ আমরা তার জমিতে কাজ করি। এটাই আমাদের একমাত্র কর্ম, আমাদের আর কোনো কর্ম নেই। আমরা চাই উসমান গনী যাতে বিদেশে যেতে না হয়, সরকার যেনো তাকে ফসল ফলাতে সহযোগিতা করে।’

উসমান গনী নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। একটি ছোট ঘরে অনেক কষ্টে বসবাস করেছি মা-বাবা, ভাই-বোনদের নিয়ে। এখন নিজের বাড়ি হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শান্তিতে বাস করছি। পাশাপাশি এলাকার আটটি পরিবারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে আমাকে ঘিরে।’

তিনি জানান, ‘সীমান্তের নিকটে ৮০ শতংশ জমিতে ২০০৪ সাল থেকে কৃষিকাজ করেন তিনি। সবজি চাষের পাশাপাশি ধান ও চাষ করেন তিনি। এতে গত বছরে যে পরিমাণে ধান পেয়েছেন, তাতে পরিবারের সদস্যের সারা বছরের খাবার রেখে আরো ধান বিক্রি করতে পেরেছেন।’ তবে কৃষিকাজে সরকারি দফতরের পরামর্শ ও সহযোগিতা না পেয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন উসমান গনী।

তিনি আরো বলেন, ‘এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি। সারা বছরই বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করি। অনেক সময় নতুন জাতের সবজি চাষ করতে গিয়ে লোকসানে পড়তে হয়েছে। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শ পেলে এই লোকসানের শিকার হতাম না।’

উসমান গনী আরো জানান, ‘তার বাপ-দাদার পেশা ছিল কৃষিকাজ। তাই লোকসান হলেও এই পেশায় যুক্ত হয়ে আছেন। কিন্তু কোনো সময়ে সরকারি কোনো লোককে দেখিনি আমাদের কাছে আসতে। কৃষি অফিসের কাজ কী? কে কৃষি অফিসার, কে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, আমরা জানি না, চিনিও না। কোনো দিন নামও শুনিনি।’

রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, ‘উসমান গনী ৮০ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করেন। অল্প জমি হলেও বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেন তিনি। এছাড়াও প্রতি বছর ধান চাষ করেন। এই দুই পদ্ধতির চাষাবাদে ভালোই চলছে তার সংসার।

সবজি ক্ষেত দেখতে আসা দর্শনার্থী ফয়জুল ইসলাম বকুল ও কয়ছর মোহাম্মদ পারভেজ জানান, ‘এলাকার অনেক মানুষ পরামর্শ ও সহযোগিতার অভাবে কৃষিজমি পতিত রেখে দিয়েছেন। প্রথম সবজি চাষ করেই তারা লোকসানর সম্মুখীন হয়েছেন। তাই পরে আর চাষাবাদ আগ্রহ বাড়েনি।’

তারা আরো জানান, ‘সবজি চাষে সরকারি পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে কোনো জমি অনাবাদি থাকবে না। এলাকার মানুষ সব জমি চাষাবাদ করবে।’

দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন জানান, ‘সরকারি অনুদান চাহিদার চেয়ে কম আসে। দোয়ারাবাজার উপজেলা ঘনবসতি হওয়ায় সবাইকে একসাথে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

কৃষকদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনবল সঙ্কট থাকায় সকল কৃষকদের কাছে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবুও আমাদের দু’জন কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। কৃষকরা নিজের আগ্রহে কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখলে সহজ হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement
দ্বিতীয় দিনের উত্থানে পুঁজিবাজার বিমানবাহিনীর আকাশ থেকে ভূমিতে গোলাবর্ষণ মহড়া প্রদর্শন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত অ্যাডভোকেট সাইফুল নিহতের ঘটনায় আইআইইউসি ভিসি ট্রাস্টের শোক প্রকাশ ইউনিলিভার বাংলাদেশের সাসটেইনেবিলিটি ব্লু বুক প্রকাশ প্রাইম ব্যাংক ও এফএমওএর ডকুমেন্ট বিনিময় সাউথইস্ট ব্যাংক ও বিডা-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ঢাবি বাঁধন-এর নবীনবরণ ও রক্তদাতা সম্মাননা অনুষ্ঠিত সিলেটে দেড় কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ শুধু বিসিএস পরীক্ষার পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হোন : চবি ভিসি চুয়েটের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ২৪ অথবা ২৫ জানুয়ারি

সকল