২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তীব্র শীত উপেক্ষা করে চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষক

তীব্র শীত উপেক্ষা করে চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষক - ছবি : নয়া দিগন্ত

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশায় ঘর থেকে বের হওয়াই যেন দায়।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রয় দুপুর ২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলেনি। সকালের এই শীতের ঘন কুয়াশায় কৃষকরা বের হয়েছে জমিতে বোরো ধান চাষের জন্য।

তীব্র শীত উপেক্ষা করে জমিতে পানি সেচ দিয়ে হাল চাষ করছেন কেউ। কেউ বা মই ও কোদাল দিয়ে জমির উঁচু-নিচু সমান করে চারা রোপন করেছে অনেকে। কৃষি প্রধান এই অঞ্চলে শাক-সবজি ও সরিষা চাষ হলেও অর্থকরী প্রধান ফসল হিসাবে বোরো ধানই একমাত্র ভরসা।

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পাখিটিকি হাওর, ডেঙ্গাই হাওর, পুটির বুক, বুঝির হাওর, খাগড়া হাওর প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড, হরুফাতা হাওর, মরা খান্দি হাওর ঘুরে সরেজমিনে কৃষকরে এই ব্যস্ততার চিত্র দেখা যায়। কর্ম ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকরা মাঠেই খাচ্ছেন দুপরের খাবার।

এদিকে আগের বছরে বোরো ও আমন মওসুমে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবারো বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বোরো আবাদে করছেন কৃষকরা। তবে বেশ কয়েকটি হাওরে সেচ ও পানি সঙ্কটের কারণে বোরো আবাদ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন কৃষক। অন্যদিকে ফলন ভালো পেতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তেমন সহযোগিতা ও পরামর্শ পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করছেন কোনো কোনো কৃষক।

জানা গেছে, চলতি বছর আবহাওয়া বোরো চাষের অনুকূলে থাকায় ও বীজতলা রোগ-বালাই না থাকায় চাষিরা বোরো চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা ৩০ থেকে ৪০ দিন বয়সী চারা জমিতে রোপণ করছেন। কয়েক বছরের টানা বন্যায় এ অঞ্চলের মানুষের আনেক ক্ষতি হয়েছে সে জন্য তারা চলতি বছরের পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পুরোদমে বোরো রোপণ শুরু করেছেন বলে কৃষকেরা জানান।

এলাকার কৃষকরা বলছেন তেল, সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর তাদের খরচটা গতবারের চেয়ে বেশি হচ্ছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দেয়া তথ্য মতে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে শুধু জৈন্তাপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে পাঁচ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাষ করা জমিতে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৪৫৩ টন চাল। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৩০ ভাগ জমিতে রোপণ করা হয়েছে বোরো ধান। ফলন ভালো পেতে তীব্র শীত উপেক্ষা করে চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষকরা। কিছু সংখ্যাক জমিতে চাষ হবে হাইব্রিড ধান।

জৈন্তাপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চলছে বোরো আবাদ। কলের লাঙল ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি চাষ করে তৈরি হচ্ছে বোরো ক্ষেত। দেয়া হচ্ছে জমিতে সার ও সেচ। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় সেচ পাম্প থেকে পানি নিচ্ছেন চাষিরা। আবার কোথাও সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হচ্ছে ইরি ধানের চারা।

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের ব্যাপারে আশাবাদী তারা। পাশাপাশি ধান উৎপাদনের খরচ বাড়ায় উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এবার বোরো মৌসুমে বেশ কয়েকটি জাতের চারা রোপন করা হচ্ছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিআর-১৪, বিআর-১৬, ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-২৯। এছাড়া এ মৌসুমে ব্রিধান-৪৫, ব্রিধান-৪৭, বিনাধান-৮, ব্রি-হাইব্রিড ধান-১ ও ব্রি-হাইব্রিড ধান-২ জাতগুলো চাষ করা হচ্ছে।

জৈন্তাপুর উপজেলার হেমু হাউদপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, বোরো রোপণের জন্য জমি তৈরি করা হচ্ছে। তিনি চলতি মৌসুমে দুই একর জমিতে বোরো চাষাবাদ করছি। এখন পর্যন্ত এক একর জমিতে বোরো রোপণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবার ভালো ফলন হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

জৈন্তাপুর উপজেলার বাগেরখার গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, তিনি এ বছর তিন একর জমিতে বোরো রোপণ করবেন। এ সপ্তাহের মধ্যে জমিতে চারা রোপণ কাজ সম্পন্ন হবে।

তিনি আরো বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে এখনো আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হয়নি। আমরা সরকারিভাবে সার বা বীজ কোনো কিছু পাইনি। সার ও উন্নত জাতের বীজ পেলে আমরা আরো উপকৃত হতাম।

জৈন্তাপুর উপজেলার মাঝপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম ও জয়নাল আবেদীন বলেন, এ বছর ১০ একর জমিতে বোরো রোপণ করেছি। তবে এবার তেল ও সারের দাম বাড়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরীও বেড়েছে। কৃষিবান্ধব এই সরকারের কাছে ধানের ন্যায্য দাবি করেন তারা।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, কয়েক বছর থেকে বন্যায় এ অঞ্চলের কৃষকের অনেক ক্ষতি করে তাই তারা এবার আগাম বোরো চাষে নেমেছে। জৈন্তাপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে পাঁচ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।গত বছরের তুলনায় এবার জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। চাষ করা জমিতে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন চাল। আমরা কৃষকদের জমি চাষের সঠিক ব্যবহারসহ নানান পরামর্শ প্রদান করছি। কৃষকের মাঝে সার, বীজ দেয়া হয়েছে। আশাকরি গত বছরের তুলনায় এ বছর আমরা ভালো ফলন পাব।


আরো সংবাদ



premium cement
আইনজীবী হত্যায় উত্তাল চট্টগ্রাম জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভক্ত না হতে মাহাথিরের আহ্বান ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর তিন মাস পার হলেই সব ঋণ খেলাপি মিয়ানমারের জেনারেল মিন অংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইলেন আইসিসির প্রসিকিউটর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন : ফখরুল আইনজীবীর হত্যাকারী ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ শুভ কান্তি দাস কে? এশিয়া ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড পেল অধিকার চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ

সকল