২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জামালগঞ্জে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

জামালগঞ্জে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ - প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জামালগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: রেজাউল কবির ও তার সহকারি রবিন হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরের ফসল রক্ষায় ১৫ নম্বর প্রকল্প নির্মাণকারী (পিআইসি) সভাপতি জাহিদ হাসান পিন্টু জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।

সদয় অবগতির জন্য অনুলিপি প্রেরণ করা হয় নির্বাহী প্রকৌশলী পাউবো সুনামগঞ্জ। উপজেলা চেয়ারম্যান জামালগঞ্জ। হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সুনামগঞ্জ ও সাংবাদিকবৃন্দের কাছে।
অভিযোগকরী পিন্টু পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে ২০২১-২২ অর্থ বছরে হালির হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মানের কাজের ১৫ নম্বর প্রকল্প কমিটি (পিঅইসি) সভাপতি ছিলেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, জাহিদ হাসান পিন্টু হালির হাওরের উপ-প্রকল্পের ১৫ নম্বর পিআইসির সভাপতি হয়ে একটি প্রকল্প নেন। পাউবোর চার্ট অনুযায়ী মাটির কাজ যথাযথভাবে তিনি সম্পন্ন করেন। এরপর আগাম বন্যা আসায় জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে হাওরে তার বাঁধকে আরো মজবুত করার লক্ষ্যে বাঁধে তিনি আরো কাজ করেন। ওই সময় পাউবোর জামালগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: রেজাউল কবিরের নির্দেশে তার সহযোগী রবিন হাসান তাকে অকথ্য ভাষায় কথা বলেন, হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন, অথবা লোক মারফতে তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে সমন্বয় করার জন্য ঘুষের টাকা দেয়ার প্রস্তাব করেন। না হয় তিনি মাটির পরিমাণ কমিয়ে দেবে এতে করে কাজের পরিপূর্ণ বিল পাবে না বলেন। পরে পিআইসির সভাপতি বারবার কান্নাকাটি করলেও কোনো কাজ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

অভিযোগে আরো রয়েছে, বিল পেতে হলে মিটমাট করেন, না হয় কোনো কাজ হবে না এমনটিও বলেন তারা। যার ফোন রেকর্ড তিনি সংরক্ষণে রেখে স্থানীয় সিনিয়র কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী, হাওর-বাঁচাও আন্দোলনের নেত্রীসহ অনেককেই শুনান।

রবিন হাসানের অকথ্য ভাষায় হুমকির বিষয়টি জামালগঞ্জ অংশের পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল কবিরকে জানালে তিনি কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পাশ কাটিয়ে যান। এই অবস্থায় ভাটি এলাকার একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় হাওরের বেরিবাঁধে কাজ করায় তারা হয়রানি ও অভিশাপ এর মধ্যে পরিণত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, ‘কিছু দিন আগে আমি আমার কাজের মাস্টার রুল জমা দিতে গেলে রেজাউল কবির আমার সাথে রাগারাগি করেন এবং আমার কাজের বিল ভালো হবে না বলে আমাকে বিদায় করে দেন। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়েরের কথা তিনি শুনতে পারলে আমাকে কোনো বিল না দেয়ার হুমকি প্রদান করেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিআইসির বেশ কয়েকজন জানান, পাউবোর রেজাউল কবির বেশ কয়েক বছর ধরে জামালগঞ্জ থেকে প্রকল্প নির্মানকারী অনেকের সাথে যোগসাজশ করে বিল তোলার সময় বিভিন্ন কায়দায় উৎকোচ হাতিয়ে নিচ্ছেন। অতীতেও জামালগঞ্জে এই পদে থাকা নেহার রঞ্জন দেবনাথের অনিয়মের পথ ধরে রেজাউল কবির খুব গোপনে জামালগঞ্জ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযুক্ত জামালগঞ্জ অংশের পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল কবির বলেন, ‘আমার সহকারী রবিন হাসানের একটি রেকর্ডিং শুনেছি এটা হয়তো এডিটিং অথবা কিছুটা ভিন্নও হতে পারে। কোনো ঘুষ বা উৎকোচ আমি চাইনি। তিন বছর ধরে আমি জামালগঞ্জে আছি, বিল তোলার ক্ষেত্রে কোনো না কোনো কারণে অনেকের সাথে অনেকভাবেই সমন্বয় করে চলতে হয়। আমি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।’

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘পাউবোর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে সিন্ধান্ত নেবেন। তাদের তদন্ত কাজে আমরা সহাযোগীতা করব। আমরা চাই, হাওরের ফসল রক্ষা কাজে স্বচ্চতা থাকুক। মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট ব্যাস্থা নেবেন।’

জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, ‘অভিযোগের অনুলিপি আমি পেয়েছি। তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্তের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব।’

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদারকে মোবইলফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের কপি আমি পেয়েছি। দু’জন প্রকৌশলীর সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি যাচাই-বাছাই করে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবেন। তদন্ত কমিঠির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement

সকল