১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণে শ্রীমঙ্গলে চা-শ্রমিকদের আনন্দ মিছিল
- শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা
- ২৮ আগস্ট ২০২২, ১৮:৩৬
প্রধানমন্ত্রীর সাথে মালিকপক্ষের বৈঠকের পর ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণের সিদ্ধান্তের পর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরে আনন্দ ও বিজয় মিছিল করেছেন চা-শ্রমিকরা। তার আগে এখানকার বেশির ভাগ বাগানের চা-শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। তবে রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক বাগানের শ্রমিকরা কাজে যাননি।
রোববার বিকেলে শহরের মৌলভীবাজার রোড থেকে কয়েক শত নারী ও পুরুষ চা-শ্রমিক প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ ও বিজয় মিছিল করে শহরের চৌমূহনা চত্তর ঘুরে কলেজ রোড হয়ে ভাড়াউড়া চা বাগানের দিকে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে চলে যান। এ সময় লক্ষ্য করা যায় তাদের চোখে-মুখে বিজয়ের চিহ্ন।
জানা যায়, চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি নির্ধারণে গত শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ১৩ জন চা শিল্প মালিকের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস গণমাধ্যমকে বলেন, চা-শ্রমিকদের আশা প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের পক্ষ হয়ে মালিকদের সাথে কথা বলে মজুরি বাড়াবেন। সেটাই তিনি করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী রোববার থেকে সবাইকে কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শিগগিরই চা শ্রমিকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১৭০ টাকা মজুরি মেনে দীর্ঘ ১৫ দিন লাগাতার কর্মবিরতির পর চা-শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। ফলে চা বাগানগুলোতে চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল ফিনলে টি কোম্পানির মালিকানাধীন ভাড়াউরা চা বাগানের নাট মন্দিরের পাশে গেলে দেখা যায়, নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা দলে দলে জড়ো হয়ে চা পাতা তুলতে বিভিন্ন সেকশনের দিকে ভাগ হয়ে যাচ্ছেন। এ সময় ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিকদের কাজে যোগদানে উৎসাহ দিতে দেখা যায়।
অন্যদিকে, শ্রমিকদের পদচারণায় দীর্ঘ দিনের নীরবতা ভেঙেছে চা বাগানের। চা পাতা তোলার স্থানে গেলে দেখা যায়, নারী চা-শ্রমিকরা তাদের পোশাক পরিবর্তন করে সেকশনে সেই পুরনো রেওয়াজে মনের আনন্দে পাতা তুলছেন। এ সময় নারী শ্রমিক জিৎনী হাজরার নিকট ১৭০ টাকা মজুরির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথায় ১৭০ টাকা মজুরিতে খুশি হয়ে কাজে যোগ দিয়েছি। একই বাগানের পুরুষ শ্রমিক প্রেম সাগর রবি দাস প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ১৭০ টাকা মজুরিতে আমরা খুশি।
ভাড়াউড়া চা বাগানে শ্রমিক ময়না হাজরা বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী হাজিরা ১৭০ টাকা করেছে। এতদিন ঘরে বসে ছিলাম। এক বেলা খাইছি, আরেক বেলা খাইতে পারছি না।’
একই কথা জানালেন, মঞ্জু হাজরা, বিদ্যাবতী হাজরা। ভাড়াউড়া চা-বাগানের পায়েত কমিটির সভাপতি নুর মোহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী মজুরি নির্ধারণ করায় চা-শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাগানে পাঠিয়েছি। তারা বাগানে কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শ্রমিক বাঁচাও, মালিক বাঁচাও এবং বাগান বাঁচাও’ সর্বদিক বিচার বিশ্লেষণ করে যে মজুরি ১৭০ নির্ধারণ করেছেন সেটা আমরা মেনে নিয়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার বাগানের সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় সব বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি। তবে সোমবার থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন শ্রমিক নেতারা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১৭০ টাকা মজুরি আমরা মেনে নিয়েছি। রোববার বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে কিছু কিছু বাগান বন্ধ রয়েছে এবং কিছু কিছু বাগান খোলা থাকায় শ্রমিকরা আনন্দ মিছিল করে কাজে যোগ দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
ভাড়াউড়া চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক গৌতম দেব বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। যদিও রোববার বাগান সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। তবে এবার চা-শ্রমিকরা খুশি তাদের মানসম্মত মজুরি পেয়ে।
উল্লেখ্য, দৈনিক ১২০ টাকা থেকে মজুরি বৃদ্ধির ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করে দেশের সবকটি চা বাগানের শ্রমিকরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা