২০ দিনের আন্দোলন চায়ের স্বাদে কেমন প্রভাব ফেলবে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ আগস্ট ২০২২, ১৭:০৫
বাংলাদেশে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ২০ দিনের মতো আন্দোলন চলার পর প্রধানমন্ত্রী ১৭০ টাকা নতুন মজুরি ঘোষণার পর চা-শ্রমিকেরা সোমবার থেকে কাজে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর শনিবার এই ঘোষণা দেয়া হয়।
এ মাসের ৯ তারিখ থেকে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বাংলাদেশের চা বাগানগুলোর প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক।
শুরুতে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করলেও, ১৩ আগস্ট থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন।
প্রায় ২০ দিন ধরে বন্ধ ছিল চা পাতা তোলার কাজ।
বাংলাদেশ চা সংসদের সদস্যদের একজন ওয়াহিদুল হক বলেন, ‘সাধারণত একদম আগা থেকে কচি পাতা নেয়া হয়। এই ২০ দিনে গাছ অনেক বড় হয়ে গেছে, ডাঁটিগুলো শক্ত হয়ে গেছে। পাতাগুলোও কালো হয়ে গেছে। এখন গাছ ছেঁটে ফেলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কাটার পর আবার পাতা তোলার পর্যায়ে আসতে তিন সপ্তাহ লেগে যাবে। গাছ ছেঁটে ফেলার আগে কিছু পাতা হয়ত তোলা হবে। কিন্তু তার পরিমাণ অনেক কম হবে। যে বাগানের শ্রমিক যত বেশি তারা হয়ত দ্রুত অবশিষ্ট পাতাগুলো তুলে তারপর গাছে ছাঁট দেবে।’
তিনি জানান, বৃষ্টির মৌসুমেই চা গাছ সবচেয়ে বেশি বাড়ে। এই সময়েই সবচেয়ে বেশি ও ভালো মানের চা পাতা পাওয়া যায়।
এরপর অক্টোবর থেকে শীত মৌসুম পর্যন্ত পাতা খুব ধীরে ধীরে গজায়। এই সময় চা পাতা তোলা বন্ধ থাকে।
তিনি বলেন, ‘এখন বৃষ্টি যদি পর্যাপ্ত হয় তাহলে হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে আবার পাতা তোলার মতো গজাবে এবং সিজন শেষ হওয়ার আগে কিছু পাতা তোলা যাবে। বৃষ্টি না হলে খুবই সমস্যা হয়ে যাবে। সিজনটা পুরো চলে যাবে।’
তিনি জানান, ধর্মঘট চলাকালীন চা শিল্পে গড়ে প্রতিদিন ২০ কোটির মতো লোকসান হয়েছে।
চা বোর্ডের তথ্য মতে বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৭টি নিবন্ধিত চা বাগান ও টি এস্টেট রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগেই রয়েছে ১২৯টি বাগান ও টি এস্টেট। বাংলাদেশে সবমিলিয়ে দুই লাখ ৮০ হাজার একর জমিতে নিবন্ধিত বাগানে চা চাষ হচ্ছে।
এক চা-শ্রমিকের সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, ‘কিছু বাগানে কাজ শুরু হয়েছে। আজ আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি তাই আমরা কাল থেকে কাজে যাব সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। মজুরি আর একটু বেশি হলে আমরা খুশি হতাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাই আমরা কাজে যাচ্ছি। এখন গাছের আগা কেটে ফেলতে হবে কিনা, তারা (মালিক) কী করবেন আমরা বলতে পারছি না। কিন্তু এখন অনেক পাতা নেয়া যাবে না। পাতাগুলোর অতিরিক্ত বয়স হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বাগানে চা পাতা তোলার কাজ শুরু করেন শ্রমিকেরা। কোন ধরনের পাতা তোলা হবে সেটি শ্রমিকেরা চয়ন করেন।
সাধারণত একদম আগা থেকে কচি দুটি পাতা ও একটি কুড়ি তোলা হয়। আট ঘণ্টায় ২৩ কেজির মতো চা তুলতে হয় একজন শ্রমিককে। ফ্যাক্টরিতে সেটা ওজন করে নেয়া হয়। এরপর বাতাস ও নির্দিষ্ট তাপে কয়েক দফায় চা পাতা শুকিয়ে চা বানানো হয়।
মাধবপুর চা বাগানের ফ্যাক্টরির সর্দার লক্ষ্মী নারায়ণ প্রধান বলেন, ‘এখন বাগানে যে পাতাগুলো পাওয়া যাবে সেগুলো রীতিমত অকার্যকর হয়ে গেছে।’
চা পাতা থেকে চা গুড়ো তৈরির প্রধান ধাপগুলো বর্ণনা করেন তিনি।
বাগান থেকে তোলা চা পাতা শুকানোর প্রথম ধাপ হচ্ছে একটি ঘরে পাতাগুলো বিছিয়ে সাধারণ তাপমাত্রার বাতাসে ২৪ ঘণ্টার মতো রেখে দেয়া হয়।
এতে পাতার আর্দ্রতা হ্রাস পায়, পাতাগুলো নরম হতে শুরু করে এবং রাসায়নিক পরিবর্তন হয়।
এরপর সেগুলো মেশিনে নেয়া হয় কাটার জন্য। তারপর আবার মেশিনে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় শুকোনো এবং গুড়ো করা হয়।
চালুনি দিয়ে বিভিন্ন আকারের আট মানের চা বের করা হয়।
ভিন্ন কোনো বাগানে ভিন্ন পদ্ধতি ব্যাবহার করা হতে পারে তবে বাংলাদেশেই এভাবেই মূলত চা তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, ‘কচি পাতার চায়ে সবচেয়ে ভালো লিকার পাওয়া যায়। পাতা বুড়ো, কালো এবং শক্ত হয়ে গেলে চা যেমন হওয়ার কথা সে রকম হবে না। এমন পাতা দিয়ে চা বানালে সেই চায়ের লিকার ভালো হবে না। রং বেশি গাঢ় হবে এবং স্বাদ বেশি তেতো হবে।’
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা