২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কুলাউড়ায় খাসিয়াদের সশস্ত্র তাণ্ডব : বনবিভাগের ৩ কর্মচারীসহ আহত ৬

৪৬ খাসিয়ার বিরুদ্ধে থানায় মামলা
হামলায় আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) এবং ইনসেটে চোখে আহত ইছহাক আলী - ছবি : নয়া দিগন্ত

কুলাউড়ার নলডরী বিটের নুনছড়া পাহাড়ী এলাকায় সামাজিক বনায়নের জন্য পলি ব্যাগে চারা উত্তোলনের সময় খাসিয়াদের অতর্কিত সশস্ত্র তাণ্ডবে বন বিভাগের তিন কর্মচারী ও উপকারভোগীসহ ছয়জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এসময় খাসিয়াদের গুলাইলের আঘাতে একজন বনকর্মীর চোখ নষ্ট হওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চোখে গুরুতর জখম হওয়া ইছহাক আলীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি আহতদেরকে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার সকাল ৬টার দিকে এ হামলা চালায় খাসিয়ারা।

ঘটনার খবর পেয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং বনকর্মী ও উপকারভোগীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বনবিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জের নলডরী বিটের নুনছড়া ও রুশনাবাদ পাহাড়ী এলাকায় সামাজিক বনায়নের জন্য পলি ব্যাগে চারা রোপণের কাজ করে আসছিল বনবিভাগের স্টাফ এবং উপকারভোগী সদস্যরা। শনিবার সকাল ৬টার দিকে ৪০/৪৫ জন খাসিয়ার একটি দল তীর, ধনুক, গুলাইল, লাটিসোঠাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিতভাবে ফরেস্টের লোকজন এবং উপকারভোগী শ্রমিকদের উপর হামলা করে। হামলায় বনপ্রহরী আব্দুল হালিম, জিয়াউর রহমান, প্রতাব চন্দ্র দেব এবং উপকারভোগী শ্রমিক ইছহাক আলী, এলাইছ উদ্দিন ও ফজলু মিয়া গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে চোখে গুরুতর জখম হওয়া ইছহাক আলীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি গুরুতর আহত পাঁচজনকে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় কুলাউড়া রেঞ্জের নলডরী বিট অফিসার জহিরুল ইসলাম নুনছড়া পুঞ্জির হেডম্যান ববরিং খাসিয়া, সিলভেষ্টার তালসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৩৫ জনসহ ৪৬ খাসিয়ার বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এদিকে শনিবার বিকাল ৪টায় বনবিভাগের লোকজন প্রেসক্লাব কুলাউড়ায় এই ঘটনার বিস্তারিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুলাউড়া রেঞ্জার রেজাউল হক।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, খাসিয়ারা একতরফা ভাবে বনবিভাগের লোকজনের উপর হামলা করেছে। বার বার হামলার ঘটনা ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের কারণে সরকারি কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হামলার পরও ঘটনাস্থলে বনবিভাগের লোকজন রয়েছে। ফলে তাদের উপরও ফের হামলার আশঙ্কা রয়েছে। বনবিভাগের লোকজন রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায়। এভাবে সরকারি দায়িত্ব পালন করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ইতিপূর্বেও সরকারি বনায়নে বাধাসহ বাঁশ বিনষ্টকরণের অপরাধে কুলাউড়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরি ও একটি মামলা করা হয় খাসিয়াদের বিরুদ্ধে।

এব্যাপারে কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রেজাউল হক বলেন, খাসিয়ারা বনবিভাগের জায়গা জবরদখলের উদ্দেশ্যে আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে শনিবার বনবিভাগের তিনজন কর্মচারী এবং তিনজন উপকারভোগী শ্রমিককে গুরুতর আহত করেছে।

তিনি বলেন, গত ২০-২১ অর্থবছরে বনবিভাগ উক্ত পাহাড়ী এলাকায় ১০ হেক্টর বনভূমিতে সামাজিক বনায়ন করছে। কিন্তু খাসিয়ারা দফায় দফায় সামাজিক বনায়নের জায়গা জবরদখলের উদ্দেশ্যে বনকর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকিসহ একাধিকবার নানা সমস্যা করে আসছে।

এব্যাপারে কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভুষন রায় জানান, ‘বনবিভাগের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। অপরদিকে খাসিয়ারাও বনবিভাগের বিপক্ষে অভিযোগ নিয়ে আসছে বলে মোবাইল ফোনে আমাকে অবহিত করেছে। তাদের অভিযোগের বিষয়টিও দেখব আমরা।’

এব্যাপারে অভিযুক্ত নুনছড়া পানপুঞ্জির মন্ত্রী (হেডম্যান) ববরিন খাসিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, বনবিভাগের লোকজনের উপর হামলার ঘটনা জেনে আহতদের দেখতে কুলাউড়া হাসপাতালে গিয়েছি। বনবিভাগকে বলেছি থানায় মামলা করার জন্য। বিষয়টি নিয়ে আগে থেকেই ঝামেলা চলছে। রোববার খাসিয়া ও বনবিভাগকে নিয়ে বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই খাসিয়াদের হামলা দুঃখজনক।


আরো সংবাদ



premium cement