২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সুনামগঞ্জের হাওরে ভাসমান বীজতলায় গজিয়েছে ধানের চারা

সুনামগঞ্জের হাওরে ভাসমান বীজতলায় গজিয়েছে ধানের চারা - নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের হাওরের সম্প্রতি তিন দফা বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি হলেও কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন। হাওরের বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান বীজ তলায় ধানের চারা তৈরি করছেন কৃষকরা। জামালগঞ্জের ভীমখালি ইউনিয়নের গোলামীপুর গ্রামের কৃষক জসীম উদ্দিন, আব্দুল খালেক ও শাহানূর মিয়া ভাসমান বীজতলা তৈরি করে ধানের চারা গজিয়েছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সময় মতো রোপা-আমনের চাষ করতে না পারায় ভাসমান বীজতলার উৎপাদিত চারা বিনা মূল্যে চাষীদের বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে।

জামালগঞ্জের গোলামীপুর ও চাঁনবাড়িসহ বিভিন্ন গ্রামের ভেতরে পরিত্যক্ত গভীর নালায় কৃষকদের প্রচেষ্ঠায় গজিয়ে ওঠেছে ধানের চারা। গাঢ় সবুজের এই দৃশ্য দেখলে যে কেউ কৌতূহলবশত থমকে যাবেন। কর্দমাক্ত পানির ওপর ভাসমান অবস্থায় স্থির রয়েছে রোপা-আমনের দর্শনীয় বীজতলাটি। কুচুরিপানা ও মাটিকে প্রক্রিয়াজাত করে প্রস্তুত করা হয়েছে বিয়ার-২২ ধানের বপন উপযোগী বীজতলা। যা ধীরে ধীরে রোপণ উপযোগী হয়ে উঠছে। আর ক’দিন পরেই জমিতে রোপণ করা হবে এই ধান চারা। পরে রোপণকৃত এই বিআর-২২ ধানের গুচ্ছসারি হেমন্তের নবান্ন উৎসবে কৃষক-কৃষাণীর আনন্দ খোরাকে পরিণত হবে।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের গোলামীপুর গ্রামে কৃষকরা কচুরিপানা এক সাথে সংযুক্ত করে পঁচিয়ে তার উপর ধান চারার বেড তৈরি করেন। কচুরিপানার ওপরে ১ থেকে ২ ইঞ্চির মতো কাদামাটি বিছিয়ে এই বীজতলা তৈরি করা হয়। এভাবে ভীমখালী ইউনিয়নের ৮টি ও জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৮টি বীজতলায় ইতোমধ্যে চারা গজাতে শুরু করেছে। চলতি আমন চাষের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এসব ভাসমান বীজতলার তৈরি চারা। এসব বীজতলায় বিআর-২২ জাতের বীজ বপন করা হয়েছে। এই চারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। চারা বিতরণ শেষে এই বীজতলায় বিভিন্ন সবজি চাষ করা হবে বলে জানান কৃষকরা। ভাসমান বীজতলা প্রস্তুত করে তাতে ধান চারা উৎপন্ন করে এলাকায় সাড়া যাগিয়েছেন এলাকার কৃষক। এতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

জানা যায়, বন্যায় বিপর্যস্ত দুর্যোগে কাবু কৃষক সম্প্রদায়কে আপদকালীন সুবিধা দিতে জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এই ভাসমান কার্যক্রমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের পতিত বিল বা ডোবায় ভাসমান বেডে ধান বীজ বপনে উদ্বুদ্ধকরণ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এতে ফলনও ভালো হবে এবং পানিতে ডুবার আশঙ্কাও থাকবে না।

সরজমিনে ভীমখালী ইউনিয়নের কৃষক শাহানূর মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায় বন্যার পানিতে তার বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই তিনি ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছেন। চারা এখনো রোপনের উপযোগী হয়নি। জমি থেকে পানি নেমে গেলেই ধানের চারা লাগানো শুরু করবেন। তার বাড়ির সামনের পতিত খালে কলাগাছের ভেলায় বাঁশ ও দাড়ি দিয়ে চাটাই তৈরি করে তার ওপর কচুরিপানা ও মাটি দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে ধানের বীজ বপন করেন। সেই বপনকৃত ধান অঙ্কুরিত হয়ে চারায় রূপান্তরিত হয়েছে। আর সপ্তাহখানেক পরে এই চারা জমিতে রোপণের পর একই বেডে লালশাক ও ডাটা বপন করবেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কৃষি উপপরিদর্শক সত্যেন্দ্র কুমার দেবনাথ ও সাইদুল ইসলাম রুবেল বলেন, ‘রোপা-আমনের এ মৌসুমে প্রায় সময়ই বন্যাক্রান্ত হন কৃষক। তখন বীজতলা ডুবে গেলেও ভাসমান প্রক্রিয়ায় তারা যাতে বন্যা সমস্যা উতরিয়ে উঠতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা বিভিন্নভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। কৃষকরা যাতে ভাসমান বেডে ধান চারা উৎপন্ন করে সুবিধাভোগী হয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার কবল থেকে তাদের রক্ষা করতেই আমাদের এ প্রয়াস।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সালাউদ্দিন টিপু বলেন, ‘আকস্মিক বন্যার কারণে রোপা-আমন ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে চারার অভাবে কৃষকের অনেক জমি পতিত থেকে যায়। অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে চারা তলিয়ে গেলে কৃষকরা সঙ্কটের মুখোমুখী হন। এ সমস্যা সমাধানে ভাসমান বেডে রোপ-আপন ধানের বীজতলা তৈরি করে ১৫ থেকে ২০ দিনেই চারা জমিতে রোপণ করা যায়। কৃষকেরা সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা রোপণ করতে পারেন। ফলে রোপা-আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভবপর হয়। আকস্মিক বন্যা হতে রোপা-আমন আবাদে এটি একটি বড় প্রযুক্তি বলে ধরে নেয়া যায়।


আরো সংবাদ



premium cement