সিলেট এমসি ছাত্রাবাসে মারামারি : অপপ্রচারের শিকার ছাত্রশিবির
- এমজেএইচ জামিল, সিলেট
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৫৩
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে মারামারির ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে কলেজ ছাত্রাবাসের ১ম ব্লকে এ ঘটনা ঘটেছে। মারামারিতে তালামীয নেতা মিজানুর রহমান রিয়াদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা জাকিরুল ইসলাম নামের দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এই মারামারিকে কেন্দ্র করে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী তালামীয নেতা মিজানুর রহমান রিয়াদ ফেইসবুক একটি কমেন্টকে কেন্দ্র করে তার ওপর হামলার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করছেন। তবে ছাত্রশিবির এটি অস্বীকার করে বলছে, এরকম কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে ছাত্রশিবিরের দূরতম সম্পর্কও নেই। ঘটনাটিতে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
অপরদিকে এই ঘটনার পেছনে প্রেমঘটিত বিষয় রয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি চলছে। এছাড়া তালামীয নেতা মিজানুর রহমান রিয়াদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাথে গোপন যোগাযোগ ও তথ্য পাচারের অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, বুধবার মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ১ম ব্লকের ১১১ নং কক্ষে তালামীয নেতা মিজানুর রহমান রিয়াদের রুমে তিনজন শিক্ষার্থী প্রবেশ করেন। তখন তারা তার কাছে একটি নেতিবাচক পোস্টের কমেন্টের ব্যাপারে জানতে চান। সেখানে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বিষয়টি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরে সেখানে আরো দুই-তিনজন শিক্ষার্থী প্রবেশ করলে রিয়াদ ও তার রুমে থাকা সহপাঠি তাদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে একজন রিয়াদকে ধাক্কা দিলে তিনি দরজার ছিটকিনিতে পড়ে পায়ে আঘাত পান। পরে ছাত্রাবাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আহত অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার সহ-তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক বলে জানা গেছে।
এদিকে তালামীয় নেতা মিজানুর রহমান রিয়াদ ও তার রুমমেটের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা জাকিরুল ইসলাম আহত হন। তিনিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালামীয নেতা মিজানুর রহমান রিয়াদ কয়েকদিন থেকে ফেসবুকে নানা ধরনের উস্কানীমূলক পোস্ট ও কমেন্ট করে আসছেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধেও নানা নেতিবাচক কমেন্ট করছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে হোস্টেলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। সম্প্রতি কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি নিউজের কমেন্টে তালামীয নেতা মিজানুর রহমান রিয়াদ লিখেন, ‘কীসের জন্য এত ত্যাগ করলাম। দিনের বেলা পুলিশের টিয়ারশেল আর লাঠিচার্জ। রাতে পালিয়ে থাকলাম। সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের স্বপ্নে এত ছাত্র প্রাণ দিল। এখন যদি গুপ্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বসেন তাহলে এই ত্যাগের মূল্য কী।’
রিয়াদ অভিযোগ করেন, ফেসবুকের একটি কমেন্টের জেরে তার ওপর এমসি কলেজ ছাত্রশিবির কর্মীরা হামলা করেছে। এ সময় কয়েকজনের নামও উল্লেখ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাইল খান বলেন, এ ঘটনায় শিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দুই শিক্ষার্থীর মাঝে তর্কের জেরে এরকম ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটিতে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা জুলাই বিপ্লবের পর থেকে দেখে আসছি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মদদপুষ্ট সংগঠন তালামীয নেতাকর্মীরা ছাত্রশিবিরের কর্মকাণ্ডকে মেনে নিতে পারছে না। বরং উল্টো পালিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ক্যাম্পাসে গোপন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, যার অংশ হিসেবে তালামীয নেতা ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করছেন। তার সাথে যুক্ত হয়ে ফ্যাসিস্ট ছাত্রলীগ, তাদের দোসর ও তৃতীয় একটি পক্ষ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য তিলকে তাল বানিয়ে ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে এমসি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো: রিয়াজ জানান, ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা জানতে পেরেছি রাতের সাড়ে ১১টার পর কিছু শিক্ষার্থী রিয়াদের রুমে যায়। তার সাথে কথা কাটাকাটি হয় একপর্যায়ে তাকে মারধর করে। এতে কোনো সংগঠনের কেউ জড়িত ছিল না। যাদের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, ঘটনার পর আমরা হাসপাতালে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি। তখন সে আমাদের জানায়, তাকে যারা হামলা করেছে তারা শিবিরের সাথে জড়িত। হাসপাতালে এবং তার পায়ের দিকে একটি স্টিচ (সেলাই) দেখতে পেয়েছি। তার নাক ফোলা ছিল। চিকিৎসক জানিয়েছেন পায়ের রগ কাটার মত কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পায়ে কোনো বস্তুর আঘাতে থেঁতলে গেছে। তাই একটি স্টিচ (সেলাই) করতে হয়েছে। তার শারীরীক অবস্থা ভালো। তাকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে এসএমপির মিডিয়া অফিসার ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ছাত্রাবাসে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি খবর আমরা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। এরপরও আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি, ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করছি। কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা