২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`

রাজনীতিতে জামায়াত অনেক পরীক্ষা দিয়েছে, এ টি এম আজহারকে মুক্তি দিন : রফিকুল ইসলাম খান

সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত অনেক পরীক্ষা দিয়েছে। নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করবেন না। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ টি এম আজহারকে মুক্তি দিন। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী থাকতে হবে।’

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট জেলা জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণ অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছে। প্রধান বিচারপতিকেও পালাতে হয়েছে। জ্যুডিশিয়াল কিলারদের প্রহসনের বিচারে জননেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম এখনো কারাগারে কেন জাতি জানতে চায়। আমরা জীবন দিয়েছি, রক্ত দিয়েছি, জুলুম-নিপীড়নের শিকার হয়েছি। কিন্তু হার মানিনি, মানবোও না।

তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পরে তৎকালিন বিরোধী দলের সাজাপ্রাপ্ত সকলেই মুক্ত হয়েছেন। তাহলে আজহার ভাই এখনো জেলে কেন? ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্টকে বিদায় করে আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন, আর আজহার ভাই জেলে থাকবেন তা হবে না। ফ্যাসিস্টের যেসব দোসররা সরকারের ভেতরে বাইরে রয়েছে আমরা তাদের চিনি। তারা জননেতা আজহারের মুক্তি বাধাগ্রস্থ করছে। এদের সরকার থেকে বিদায় করুন। অন্যথায় পরিণতি ভালো হবে না ‘

হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ শেষে রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল জননেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে সমাপ্ত হয়।

রাজপথে জামায়াতের মিছিল ঘিরে নেতাকর্মীদের উচ্ছাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সিলেট মহানগর ও জেলার আওতাধীন সব উপজেলা পৌর থানা ও ওয়ার্ড শাখার নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে পুরো সিলেট নগরী মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মহানগর সেক্রেটারি মো: শাহজাহান আলী ও জেলা সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীনের যৌথ পরিচালনায় রেজিস্ট্রারি মাঠে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান।

মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান আরো বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করতে নতুন আইন করে অবৈধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এই আইন দেশ-বিদেশে কোথাও বৈধতা পায়নি। সেই ট্রাইব্যুনালের বিচারে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ, সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলী, আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ও কারাগারে হত্যা করেছে। পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর সেই অবৈধ ট্রাইব্যুনালের কোনো রায় এদেশে কার্যকর থাকতে পারেনা। অবৈধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বিচারপতিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘জননেতা এটিএম আজহারের বিচারের সময় সাক্ষী বলেছেন, তিনি ছয় মাইল দূর থেকে নাকি আসামিকে খুন করতে দেখেছেন। অথচ বাস্তবে তিনি নিজের সামনের সামান্য দূরত্ব ঠিকমতো দেখতে পারেন না। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেলু শিকদার বানিয়ে প্রহসনের রায়ে সাজা দিয়ে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনি নিজে অবগত আছেন। আপনাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত আদালতে টানা-হেঁচড়া করা হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আদালতে বসিয়ে রাখা হয়েছে, ৫ তলা পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়ে উঠতে বাধ্য করা হয়েছে। সেই হাসিনার প্রতিহিংসার বিচারে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে এখনো বন্দী থাকতে হবে কেন? আজকে শুধু সিলেট নয়, সারাদেশে আজহার ভাইয়ের অনুসারীরা গর্জে উঠেছে। অবিলম্বে তাকে মুক্তি না দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আর এ দায় আপনাকেই নিতে হবে।’

বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ও হাফিজ মাওলানা আনওয়ার হোসাইন খান, মহানগর নায়েবে আমির ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, জেলা সহকারী সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম ও মাওলানা মাসুক আহমদ, সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী ও সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, সাবেক ফেঞ্চুগঞ্জ চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, সাবেক গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিল আহমদ রাজু ও ফেডারেশনের সিলেট জেলা সভাপতি ফখরুল ইসলাম খান, ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ, শাবি ছাত্রশিবির সভাপতি তারেক মনোয়ার, ছাত্রশিবির সিলেট জেলা পশ্চিমের সভাপতি মনিরুজ্জামান পিয়াস ও জেলা পূর্বের সভাপতি মারুফ আহমদ রাজু প্রমূখ।

সমাবেশের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফিজ মাওলানা মশাহিদ আহমদ। এতে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন মাজেদ মাহফুজ ও সুজাউল হক শামীম।


আরো সংবাদ



premium cement