২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৫ রজব ১৪৪৬
`
সিজিএস সংলাপে বক্তারা

ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন, তবে নির্বাচন আটকে রেখে নয়

সিলেটে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ আয়োজিত সংলাপ। - ছবি : বাসস।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত সংলাপে বক্তারা বলেছেন, ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন, তবে নির্বাচনকে আটকে রেখে নয়।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সিলেটের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এই দাবি জানান।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি বিভাগে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। এরই অংশ হিসেবে শনিবার সিলেটে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। খবর বাসস।

সংলাপে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদুল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

অ্যাডভোকেট এমাদুল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধানে যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের পক্ষে মানুষের মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদানের মত সক্ষমতা ছিল না। কিন্তু এখনতো বাংলাদেশ আগের চেয়ে অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সক্ষম একটি দেশ। দেশ পুনর্গঠনের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা এ অধিকারগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্র থেকে তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’।

তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগকে আলাদাভাবে ক্ষমতা প্রদান করা প্রয়োজন’।

অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে সংবিধান থাকলেও কখনই সাংবিধানিক শাসন ছিল না। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করলেও ১৯৭৫ এ এসে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সেই সংবিধানের মূল স্পিরিটকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।’

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘জন্ম লগ্ন থেকেই বাংলাদেশের মানুষ বহুবার গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে রাজপথে নেমেছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রতিবারই তাদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে আন্দোলনের স্পিরিটকে নষ্ট করেছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরেও এখন নানা পক্ষের দিক থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের প্রচেষ্ঠা লক্ষ করা যাচ্ছে’।

তিনি বর্তমান পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘দেশ এখন একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশে সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে, এ নিয়ে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যেবাক-বিতন্ডা চলছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের যেই জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল, তা থেকে কি আমরা দূরে সরে যাচ্ছি?’

সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান দুই মাসের আন্দোলন নয়, এটি প্রায় ১৫ বছরের আন্দোলনের ফসল।

তিনি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান সরকারকে বিএনপি প্রথম থেকেই সমর্থন জানিয়ে এসেছে এবং এখনও সমর্থন অব্যাহত আছে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে আমরা চাই এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।

সিলেট মহানগর বিএনপি’র সভাপতি রেজাউল হাসান লোদী বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে বিএনপি ৩১ দফা ঘোষণা করেছে এবং এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আগামী ৫০ বছরের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে একটি দলের মাঝে কুক্ষিগত করে আওয়ামী লীগকে তার মূল্য দিতে হয়েছে। এর থেকে শিক্ষা নিয়ে চব্বিশের আন্দোলনকেও যেন কেউ একটি গোষ্ঠীর কাছে কুক্ষিগত না করে।

সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির ফখরুল ইসলাম বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন দেয়া উচিৎ। এছাড়া সবার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা উচিৎ। এ সরকার বেশি দিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চাইলে তারা মানুষের সমর্থন হারাবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলার মুখপাত্র মালেকা খাতুন সারা বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রথম কাজ হতে হবে দেশে অর্থনৈতিক সমতা ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা।

তিনি জানান, বিগত সরকার গত ১৫ বছরে দেশের সামাজিক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতকে ধবংস করে ফেলেছে। এ খাতগুলোয় প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করেই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা উচিৎ।

একই সংগঠনের নেতা পলাশ বখতিয়ার বলেন, বর্তমান সরকারকে কেউ কেউ অনির্বাচিত সরকার বলে অবিহিত করেছেন। মানুষ ভোট দেয় কাগজে সিল দিয়ে, কিন্তু বর্তমান সরকারকে মানুষ ভোট দিয়েছে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে। এ সরকার মানুষের রক্ত দিয়ে সিল দেয়া নির্বাচিত সরকার। তিনি জানান, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনমুখী, তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করেই নির্বাচন করতে হবে। আর এতে মানুষের সমর্থন রয়েছে কিনা তার জন্য গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন’র সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা চালু করতে হবে। এর পাশাপাশি, নির্বাচনে ‘না ভোট’ এর ব্যবস্থার পুনরায় চালু করতে হবে।

উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে এডকো’র নির্বাহী পরিচালক লক্ষী কান্ত সিংহ বলেন, বাংলাদেশের জনগণ হলেও আমরা বাঙালি নই, আমাদের নিজস্ব পরিচয় রয়েছে। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী বাংলাদেশে বসবাসকারী উপজাতিদের তাদের পরিচয়ের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংলাপ আন্দোলন, সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), যুবউন্নয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা মতামত প্রকাশ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনে জিতে লুকাশেঙ্কো বললেন, ‘পশ্চিমাদের পাত্তা দিই না' প্রথমবারের মতো ভারত থেকে আমদানি হলো মসুর ডাল শিগগিরই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে : মান্না বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ডিএমপির নির্দেশনা বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত রাজবাড়ীতে হত্যা মামলায় ২ জনের মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ৬ বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে ভারত-চীনকে বাঁধ নির্মাণের আহ্বান গোঁজামিলের ভোটার তালিকা মেনে নেয়া হবে না : মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ইইউ বাংলাদেশের সাথে বিস্তৃত অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের পক্ষে ‘হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত কোনো আপস হবে না’ রেলের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহবান মন্ত্রণালয়ের

সকল