তরুণ-তরুণীকে আটকে দেয়া হলো বিয়ে, রিসোর্টে হামলা
- সিলেট ব্যুরো
- ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:২৬
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ১৬ জন ছেলে-মেয়েকে আটক করেন স্থানীয়রা। এরপর তাদেরকে সামাজিকভাবে বিয়েও দেন তারা। পুলিশে হস্তান্তর না করে কাজী ডেকে তড়িগড়ি করে বিয়ের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে রিসোর্টে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জনমনে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের এমন অভিযানকে সাধুবাদ জানালেও নেপথ্যে চাঁদাবাজী রয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এবারই প্রথম নয়, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলেও চাঁদা না দেয়ায় একাধিকবার রিসোর্টে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
তরুণ-তরুণীদের আটকের সময় রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আটকদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর না করে সামাজিকভাবে বিয়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ১৬ জন তরুণ-তরুণীকে আটক করা হলেও ৮ জনকে বিয়ের শর্তে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অভিভাবক না আসায় ৮জন তরুণ-তরুণীকে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, জনতা কর্তৃক কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে আটকের খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু স্থানীয়রা পরিবারের কাছে তাদের হস্তান্তর করেছেন বলে শুনেছি। তবে আমি বারবার তাদেরকে বলেছি আটকদের আমাদের জিম্মায় দিয়ে দেন। আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করব। কিন্তু তারা তা শুনেননি। এরপর বিয়ে হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং পুলিশকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রিসোর্ট ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে বিএনপি দাবিদার একাধিক গ্রুপ রিসোর্টের দিকে দৃষ্টি দেন। এতে মালিকপক্ষ বিপাকে পড়ে যান। কোন্ পক্ষকে চাঁদা দিবেন তা ঠিক করতে পারেননি। ফলে কোনো পক্ষেরই মন রাখতে পারেননি তারা। সম্প্রতি একটি পক্ষ তাদের ওপর ক্ষেপে যায়।
এদিকে রোববার বিকেলে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার অনুসারী কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মীর নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন রিসোর্টে গিয়ে হামলা চালায়। তারা রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আসবাবপত্রে আগুণ ধরিয়ে দেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্কে শুরু থেকেই অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘটিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এটি নামে পার্ক হলেও রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্রামের কক্ষ। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও প্রেমিক-প্রেমিকারা এসব কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিরাপদে অসামাজিক কার্যকলাপ করেন।
রোববার বিকেলে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে স্থানীয়রা পার্কে হানা দিয়ে কক্ষের ভেতরে ১৬ তরুণ-তরুণীকে আটক করেন। তাদের বয়স ১৬ থেকে ২১ বছর ছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় মোগলাবাজার থানাপুলিশ। তবে স্থানীয় মুরুব্বিরা পুলিশে সোপর্দ না করে এসব ছেলে-মেয়েদের অভিভাবকদের খবর দিয়ে বিয়ের বন্দোবস্ত করেন।
এ ব্যাপারে রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টের এমডি হেলাল আহমদ বলেন, আমাদের রিসোর্টে পুলিশের নির্দেশনা মোতাবেক ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে বিশ্রাম নিতে দেয়া হয়। রোববারও ছেলে এবং মেয়েরা আলাদাভাবে বিশ্রাম নেয়ার জন্য ভোটার আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। হঠাৎ করে একদল যুবক রিসোর্টে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তারা আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগও করে। ম্যানেজারের রুম থেকে ছেলে-মেয়েদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ছিড়ে ফেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর তাদের আটক করে রিসোর্টের চাবি নিয়ে নেয়। এরপর আটককৃতদের তারা বিয়ে দিয়েছেন বলে শুনেছি। হামলায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর রিসোর্টটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা তাজরুল ইসলাম তাজুলের নেতৃত্বে এলাকার মুরব্বীরা মিলে সামাজিকভাবে বিয়ের উদ্যোগ নেয়ার প্রেক্ষিতে ছেলে-মেয়েদের তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের জিম্মায় না দিয়ে এমন বিয়ের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছেলের অভিভাবক জানান, আমাদের কাছে ইজ্জত বড় বিষয়। তাই কোনো কিছু না ভেবে সব শর্ত মেনে সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছি। এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা তাজরুল ইসলাম তাজুল বলেন, স্থানীয় সাধারণ জনতা রিসোর্টটি ঘেরাও করে আপত্তিকর অবস্থায় ১৬ জন তরুণ-তরুণীদের আটক করে। তারপর পুলিশের সাথে পরামর্শ করে আমরা ৮ জনকে বিয়ের শর্তে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। আর ৮ জনকে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছি। এখানে চাঁদাবাজির কোনো ব্যাপার কখনো শুনিনি। এলাকাবাসীর অনুরোধে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে আমি এসেছি। তবে সামান্য ভাঙচুর হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে এসএমপির মিডিয়া কর্মকর্তা উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ডও অপরাধ। তবে কেউ আইন হাতে তুলে নেয়া উচিত নয়। তাদেরকে আটকের পর পুলিশের হাতে তুলে দেয়া উচিত ছিল। যেহেতু পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল। জোরপূর্বক বিয়ে দেয়াও অপরাধ। কেউ যদি জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসে তাহলে আইনি সুবিধা পাবে।