সিলেটের ৯ পাথর কোয়ারী খুলছে : ব্যবসায়ী শ্রমিকদের মুখে হাসি
- আবদুল কাদের তাপাদার, সিলেট
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৪৯, আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:২৪
সিলেটের সুনামগঞ্জের গেজেটভুক্ত নয়টি কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধের সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়। ফলে অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পাথর কোয়ারীতে উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ
শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে।
কোয়ারী খুলে দেয়ার খবরে কোয়ারী এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ লক্ষাধিক শ্রমিক ও লক্ষাধিক ব্যবসায়ীর মুখে হাসি ফুটেছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরিনা আফরিন মোস্তফা সাক্ষরিত এক স্মারকপত্রে ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাথর কোয়ারী বন্ধের যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) তা বাতিল করে সরকারি এক আদেশ জারি করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, ‘সারা দেশের গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারী, সিলিকাবালু কোয়ারী, নুড়ি পাথর, সাদা মাটি উত্তোলনসহ অন্যান্য সকল কোয়ারীর ইজারা আপাতত বন্ধ থাকবে মর্মে গৃহীত সিদ্ধান্তটি এতদ্বারা নির্দেশক্রমে বাতিল করা হলো।’
এই খবর সিলেটে পৌঁছার পর কোয়ারী এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, ‘মন্ত্রণালয়ের কোনো আদেশ তারা এখনো পাননি। তবে লোকমুখে তিনি শুনেছেন। আদেশ পেলে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যথাশীঘ্র সম্ভব পাথর কোয়ারী খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সিলেট স্টোন ক্রাসার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, পাথর ও পর্যটন ব্যবসায়ী
ইলিয়াস উদ্দিন লিপু মঙ্গলবার দুপুরে দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, ‘মৌসুমের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। মার্চ পর্যন্ত পাথর কোয়ারীতে কাজ করা যাবে। যা অত্যন্ত কম সময়। প্রশাসন ঢিলেমি না করে তাড়াতাড়ি অফিসিয়ালি কোয়ারী খুলে দেয়ার আয়োজন না করলে টাকা খরচ করেও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এমনিতেই দীর্ঘদিন কোয়ারী বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা এখন পথে বসেছেন। সবকিছু হারিয়ে তারা নিঃস্ব প্রায়।’
জাফলং বল্লাঘাট পাথর ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আনেয়ার হোসেন আনু মঙ্গলবার দুপুরে (১৪ জানুয়ারি) নয়া দিগন্তকে জানান, পাথর কোয়ারীর নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। আমাদের হাতে তা এসেছে। তবে প্রশাসনের হাতে শুনেছি এখানো পৌঁছেনি। প্রশাসনের উচিত যতো শীঘ্র সম্ভব কোয়ারী খুলে দেয়া। কারণ মৌসুম পার হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। কোয়ারী বন্ধ থাকায় গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে শ্রমিক ব্যবসায়ী মিলে ৮ থেকে ৯ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাড়াতাড়ি পাথর উত্তোলনের সুযোগ পেলে হয়তো এর সামান্য কিছু হলেও পুষিয়ে নেয়া যাবে।’
২০১৮ সালে হাইকোর্টে পরিবেশবাদী সংস্থা পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক মামলায় এবং পরে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সিলেটের সবকটি পাথর কোয়ারী বন্ধ করে দেয়া হয়। এরও দুই বছর আগে থেকে স্থানীয় প্রশাসন প্রতিবেশি একটি দেশ থেকে এলসির মাধ্যমে পাথর আমদানি করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কোয়ারী বন্ধ করে রাখে বলে অভিযোগ করে আসছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
সিলেটের কোয়ারী বন্ধ থাকলে প্রতিবেশী একটি দেশের পাথর আমদানিতে এদেশের কিছু ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের লোকজন নানাভাবে লাভবান হন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ীরা।
সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল ভিত্তি ধরা হয় কোয়ারী কেন্দ্রীক ব্যবসাকে। এই ব্যবসায় শত শত ব্যবসায়ী হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু কোয়ারী বন্ধ করে দেয়ায় অনেকেই এখন
নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
সিলেটের ইসলামি ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে নয়া দিগন্তকে জানান, ‘আমাদের ব্যাংকের বিশাল বিনিয়োগ কোয়ারীর পাথর ব্যবসার খাতে। কিন্তু দীর্ঘদিন কোয়ারী বন্ধ থাকায় অনেক ব্যবসয়ায়ী এখন দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। ব্যাংকও মারাত্মক সংকটে পড়েছে।
কোয়ারী চালু হলে হয়তো ব্যবসায়ীরা আমাদের ঋণ পরিশোধে এগিয়ে আসবেন। আমরা কোয়ারী খোলার খবরে উন্মুখ হয়ে বসে আছি।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা