১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১, ১৩ রজব ১৪৪৬
`

মৌলভীবাজারে জমে উঠেছে মাছের মেলা

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজারে জমে উঠেছে মাছের মেলা - ছবি : নয়া দিগন্ত

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজারে জমে উঠেছে মাছের মেলা। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। সদর উপজেলার শেরপুরে দু’ শ’ বছরের ঐতিহ্যর এ মেলা কুশিয়ারা নদীর পাড়ে জমে উঠেছে।

দু’ দিনব্যাপী এ মেলা মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত চলবে।

অয়োজকরা জানান, প্রায় ৩০ একর ভূমি জুড়ে চলছে মেলা। এ মেলায় রয়েছে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। এর সাথে রয়েছে লোকজ ঐতিহ্যর নানা আসবাবপত্র, পিঠাপুলি ও গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত নানান জাতের জিনিসপত্র।

ব্যবসায়ীরা জানান, মেলায় ২০টি পাইকারি দোকান ও ২৫০জন খুচরা বিক্রেতা রয়েছেন। কোটি টাকার ওপরে এ মেলায় বেচাকেনা হবে। মাছ কিনতে মেলায় ভিড় করেন ক্রেতারাও। পৌষ সংক্রান্তি উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পিঠা ও খাবার তৈরির বড় যোগান হয় মেলার মাঠ দিয়ে। মেলায় পাঁচ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা মূল্য মাছের দাম হাঁকা হয়েছে।

বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ কিনতে করতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছ কিনতে তারা মেলায় এসেছেন। তবে মাছের দাম এবার কিছুটা কম।

মাছ বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মেলায় নদী ও হাওরের মাছ নিয়ে আসা শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। মাছের মেলা বলেই মাছের দিকে জনতার চোখ।’

মাছ ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, ‘১০ লাখ টাকার মাছ কিনেছি। দাম কমে যাওয়ায় বেকায়দায় রয়েছি।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকানে নানা আকারের বোয়াল, রুই, কাতলা, চিতল, বাঘাইড় নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ঐতিহ্যবাহী এ মেলা এখন এলাকার অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে।

সরকার বাজারের ক্রেতা কফিল উদ্দিন বলেন, ‘এ মেলা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। আমরা প্রতি বছর অপেক্ষায় থাকি কখন মেলা শুরু হবে। কারণ অনেক দুর্লভ মাছ আছে যা একমাত্র এ মেলায় পাওয়া যায়।’

এছাড়া মেলায় বিভিন্ন ধরনের খাবার হোটেল, তিলুয়া-বাতাসা, খৈ, মুড়ি, নানারকম মৌসুমী ফল, শিশুদের খেলনা, কিশোরী, তরুণীদের প্রসাধনী, শীতের কাপড়-চোপড়, বাঁশ-বেত ও কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, ঘর-সংসারের নানারকম মাটির বাসন-কোসন, কাঠের জিনিস, লৌহ শিল্পের অনেক সামগ্রী ও গ্রামীণ কৃষি যন্ত্রপাতি, হরেকরকম চোখ ধাঁধানো পণ্যের দোকান বসেছে।

মেলার ইজারাদার কর্ণেল আহমেদ বলেন, ‘শেরপুর বাজারের আশেপাশের পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রামের মানুষ মিলে আমরা মেলা পরিচালনার জন্য ইজারা নেই। এখানে ঢাকা রাজশাহী, খুলনা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে আসেন। মেলায় ২০টি পাইকারি দোকান ও ২৫০টি খুচরা মাছের দোকান রয়েছে। প্রায় কোটি টাকার ওপরে বেচাকেনা হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

অপরদিকে, পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারো মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বসেছে মাছের মেলা। পৌর শহরের নতুন বাজারে বসে এ মেলা। মেলা উপলক্ষে চাষের মাছের পাশাপাশি রকমারি দেশী মাছ নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। আর ক্রেতারা পছন্দের মাছটি কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন হাসিমুখে।

বিকেলে পৌর শহরের মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায়, রকমারি মাছের মেলা বসেছে বাজারে। প্রায় সব রকমের দেশীয় মাছ সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকেই দাম-দর করছেন। সেইসাথে পছন্দ আর দামে মিলে গেলে সৌখিন ক্রেতারা মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এবারের মাছের মেলায় চাষের মাছের পাশাপাশি প্রচুর হাওর, বিল ও নদীর দেশী মাছ বেশি উঠেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

মাছ বিক্রেতা মো: আকবর মিয়া জানান, পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মাছের বাজারে অন্যান্য মাছের সাথে মূল আকর্ষণ থাকে হাওর ও নদীর আইড়, চিতল ও বোয়াল মাছের। তাই তারা এসব টাটকা মাছ সংগ্রহ করেছেন সবচেয়ে বেশি। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, ব্রিগেড রয়েছে তাদের সংগ্রহে রয়েছে বলে তারা জানান।

মাছ কিনতে আসা মো: কাসেম মিয়া জানান, পৌষ সংক্রান্তির এই মাছের মেলায় বাজারে প্রচুর পরিমাণে মাছ উঠেছে। কিন্তু এসব মাছ সব বড়লোক আর টাকাওয়ালাদের জন্য। আমরা মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তদের এসব মাছ কেনা করা সম্ভব নয়। তবে সাধ্য না থাকলেও নজর বোলাতে তো অসুবিধা নেই! তাই দেখতেছি ঘুরে ঘুরে। সাধ্যের মধ্যে হলে মাছ কিনে নিব।

মাছ কিনতে আসা লিটন শীল বলেন, ‘বর্তমানে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মাছ কেনা একটি ট্র্যাডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ সময় বড় মাছ বাজারে আসে তাই মাছ কিনতে বাজারে আসা।’

শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আক্তার হোসেন বলেন, ‘পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে বাজারে বড় বড় মাছ আনা হয়েছে। একসাথে এতো মাছ সারা বছর বাজারে চোখে পড়ে না। গত বছরের তুলনায় এবারের পৌষ সংক্রান্তিতে মাছ কিছুটা কম উঠেছে বলেও তিনি জানান।’


আরো সংবাদ



premium cement