সীমান্তে বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা, লাশ নিয়ে গেল ভারতীয় পুলিশ
- সিলেট ব্যুরো
- ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৩৪
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্তে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা অভিযোগ উঠেছে। বৃদ্ধের লাশ ভারতীয় পুলিশ নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার সকালে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে ভারতের খোয়াই জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বৃদ্ধ জহুর আলী (৬০) চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ডুলনা গ্রামের মনসুব উল্লাহর ছেলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএসএফ ও সীমান্তের ওপাড়ের ভারতীয় লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জহুর আলী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। গত শনিবার (৫ জানুয়ারি) পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন তিনি।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে আসার সময় গ্রামের হাট-বাজারে বিক্রির উদ্দেশে জহুর আলী অল্প মূল্যে কিছু লুঙ্গি কিনে নিয়ে আসেন। সেগুলো নিয়ে তিনি সোমবার বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকালে চুনারুঘাটের বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকার লোকজন ভারতীয় সীমান্তের গৌরনগর এলাকায় এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখে। এ সময় সীমান্ত এলাকায় প্রচারিত হয় যে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশের। তখন স্থানীয় বাংলাদেশীরা ওই লাশ শনাক্তের চেষ্টা করেন।
এদিকে ভারতীয় লোকজন লাশটির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে বাংলাদেশের অনেকেই তা দেখে চুনারুঘাট উপজেলার পশ্চিম ডুলনা গ্রামের জহুর আলীর বলে শনাক্ত করে। তবে তিনি ভারতে গেলেন কী করে, তা জানা যায়নি।
জহুর আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন এবং স্থানীয় গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুল মালেক জানান, তারা সীমান্ত থেকে খবর পেয়েছেন যে বিএসএফ ও স্থানীয় এলাকার কিছু মানুষ জহুর আলীকে সীমান্ত এলাকা থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। পরে তারা লাশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। ভারতীয় লোকজন তাদের এ ঘটনা জানিয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমিও সাংবাদিক ও স্থানীয় সূত্রে ভারতে এক ব্যক্তির লাশ পাওয়ার খবর শুনেছি। তিনি কিভাবে সেখানে গেলেন এবং মারা গেলেন এর সঠিক তথ্য এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে স্থানীয় থানা পুলিশ বিজিবির সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। বিজিবি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে শুনেছি।’
চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুর আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দেখতে পাই, ভারতের খোয়াই পুলিশ নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করতে সীমান্ত এলাকায় গৌরপুরে আসে। পরে তারা এ লাশ উদ্ধার করে ত্রিপুরার খোয়াই হাসপাতালের মর্গে নিয়ে গেছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন জহুর আলীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ করেছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিজিবি হবিগঞ্জ-৫৫ ব্যাটালিয়ন জানিয়েছে, ভারত সীমান্তে নিহত জহুর আলীর পরিবারের সাথে কথা বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তিনি ঢাকায় একটি কোম্পানির নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। তিনি গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। ৬ জানুয়ারি কোনো এক সময়ে হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন গুইবিল বিওপির মানিকভান্ডার এলাকার মেইন পিলার ১৯৬৮/এম-এর কাছ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের প্রায় তিন কিলোমিটার অভ্যন্তরে স্থানীয় জনগোষ্ঠী খোয়াই থানার অন্তর্গত গৌড়নগর এলাকায় রাস্তার পাশে এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় খোয়াই থানায় খবর দেয়। ভারতের খোয়াই থানা থেকে একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে খোয়াই জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে নিশ্চিত করেন। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট থানার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে লাশ বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়।
হবিগঞ্জ বিজিবি-৫৫ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজিলুর রহমান বলেন, বিএসএফ তাদের জানিয়েছে যে এ মৃত্যুর বিষয়ে তারা সেখানকার পুলিশের মাধ্যমে জেনেছে। এর আগে তারা কিছুই জানত না। কিভাবে জহুর আলীর মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টি তারাও তদন্ত করছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা