০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

দোয়ারাবাজারে বাড়ছে শিশুশ্রম নজরদারি নেই প্রশাসনের

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নে চেলানদীতে গেলে দেখা যায় আট থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুরা পাথর উত্তোলনের কাজ করছে। তাদের মধ্যে রয়েছে আবু বক্কর, শামিম, তোফাজ্জল ও হোসাইন। আরো এক বছর আগে থেকেই তারা কাজের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছে।

জানা গেছে, পাশের সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি রয়েছে তারা। তারা সপ্তাহে এক থেকে দু’দিন স্কুলে যায় আর বাকি দিনগুলোতে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে টাকা উপার্জনে ব্যস্ত থাকে।

পড়াশোনা ফেলে কাজে আসার কারণ জানতে চাইলে জবাবে তারা এক ফালি হাসি উপহার দিলেও লজ্জায় কিছু বলতে পারেনি। শুধু আবু বক্কর, শামিম, তোফাজ্জল ও হোসাইনই নয়, তাদের মতো কমপক্ষে কয়েক শতাধিক শিশু দোয়ারাবাজার উপজেলায় বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত। কেউ বালু-পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করছে, কেউ রেস্তোরাঁয় কাজ করছে। কেউ আবার অটোরিকশা চালাচ্ছে অথবা গ্যারেজসহ বিভিন্ন দোকানে কাজ করছে।

অভিভাবকদের অসচেতনতা, মালিকপক্ষের অসাধুতা এবং প্রশাসনের নজরদারির অভাবে দোয়ারাবাজারে ক্রমেই শিশু শ্রমিক বাড়ছে।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে, ‘শিশু’ অর্থ ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করেনি এমন ব্যক্তি এবং ‘কিশোর’ অর্থ ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করেছে কিন্তু ১৮ পূর্ণ করেনি এমন ব্যক্তি।

জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০ অনুসারে, শিশুদের আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে দেয়া যাবে না এবং কিশোরদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ দেয়া যাবে না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসকের কাছ থেকে শিশু-কিশোরদের সক্ষমতা সনদ নিয়ে শর্তসাপেক্ষে হালকা কাজে নিয়োগ দেয়া যাবে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানায়, শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য। এসব পরিবারের
সদস্যদের মাথাপিছু আয় দৈনিক ১০০ টাকারও কম। দোয়ারাবাজার উপজেলার বেশিভাগ পরিবার অসচ্ছল। ফলে এসব পরিবারের শিশুরা অর্থ রোজগারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হচ্ছে। পরিবারের প্রয়োজনে তাই শিশুরা লেখাপড়ার পরিবর্তে এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ শুরু করতে বাধা পাচ্ছে না।

উপজেলার ২ নম্বর বাংলাবাজার ইউনিয়নের বাংলাবাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে, এ এলাকায় আট থেকে ১০ বছরের শিশুশ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। তারা হালকা থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে মোটর ওয়ার্কশপ, ওয়েল্ডিং মেশিন, গ্যাস কারখানা, লেদ মেশিনের কাজ, রিকশা চালানো, বাস-ট্রাকচালকের সহকারী, নির্মাণকাজ, গৃহকর্মী, ইটভাঙা, ইটভাটা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, স্টিলের আলমারির দোকান ইত্যাদিতে কাজ করা। তবে বাংলাবাজারটি উপজেলার জনবহুল ও সবচেয়ে বড় বাজার হওয়ার ফলে এসব কারখানায় শিশুশ্রমিকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সামনে চায়ের দোকানে কাজ করে সিফাত (১২)। এ সময় তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের আর্থিক দৈন্যতার কারণে কাজে যোগ দিতে হয়েছে তাকে।

সিফাত বলে, ‘মা পরের বাড়িতে কাজ করে। টাকার অভাবে আমি পড়তে পারি না। এখানে কাজ করে যে টাকা পাই বেশিভাগই বাড়ি পাঠিয়ে দিই।’

দোয়ারাবাজারে কর্মরত শিশুরা নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত। ভাড়ায় অটোরিকশা চালায় সাগর (১৪)। সে জানায়, দৈনিক ২০০ টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হয় অটোর মালিককে। ভাড়া পরিশোধ করে প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা সে বাড়িতে নেয়।

উপজেলার বাংলাবাজারে রাজমিস্ত্রি কাজ করে জমসিদ আলী। সকাল ৯টায় কাজে এসে বিকেল ৫টায় বাড়িতে যায় সে। এতে তার উপার্জন হয় ২৫০ টাকা।

জমসিদ আলী জানায়, গত নভেম্বর মাসে তার সাথে কাজ করা এক শ্রমিক স্টিলের শাটার তোলার সময় তা হাত থেকে পরে গেলে তার পায়ে প্রচন্ড ব্যথা পায়। সে বলে, ‘আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করি। এ বয়সে আমাদের খেলাধুলা ও পড়াশোনার সুযোগ থাকা দরকার। অথচ সে সব কিছুই আমরা পাই না। ভালো খাবারও খেতে পাই না।’

শিশুশ্রমে যুক্ত হওয়ার পেছনে প্রশাসনের নজরদারিকে দুষছেন উপজেলার সচেতন সুশীল সমাজ। অন্তত পাঁচজন দোকান মালিকের সাথে কথা বললে তারাও একই দাবি করেন।

তাদের ভাষ্যমতে, প্রশাসনের লোকজন তদারকিতে আসে না। তদারকিতে এলেও টাকা-পয়সা দিলে এ বিষয়ে তারা আর পদক্ষেপ নেয় না। তাছাড়া শিশুদের মা-বাবারা স্বেচ্ছায় তাদের কাজে পাঠায়। শিশুদের কম টাকায় কাজে লাগানো যায়, এটাও শিশুশ্রমের একটা বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছেন উপজেলার বিভিন্ন বাজারের দোকান মালিকরা।

এ বিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলাটি সীমান্ত অধ্যুষিত হওয়ায় এই এলাকায় কর্মক্ষেত্রের অভাব রয়েছে। তাই বেশিভাগ পরিবারই দরিদ্র। দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই কম বয়েসে বিভিন্ন কাজে জড়িত হচ্ছে।

শিশুশ্রম বন্ধে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, শিশুশ্রম বন্ধে প্রশাসন সামাজিকভাবে সচেতনতামূলক বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে। তবে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে দারিদ্র্য দূরীকরণ হবে। আর দরিদ্রের সংখ্যা কমে গেলে শিশুশ্রম ও কমে আসবে।


আরো সংবাদ



premium cement
হাসিনা-রেহানা-জয়-টিউলিপসহ ৭ জনের ব্যাংক হিসাব তলব ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পরীক্ষিত ও স্বীকৃত বিচার হবে : অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাম্পের কেনার ইচ্ছা প্রকাশের পর গ্রিনল্যান্ড সফরে তার ছেলে চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন খালেদা জিয়া মেসি ও সুয়ারেজের সাথে আবারো দেখা যাবে নেইমারকে! সাবেক ওসি নেজাম উদ্দিনকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ সব পাঠ্যবই ছাপা কখন সম্ভব হবে? মিরসরাইয়ে আগুনে পুড়ল বসতঘর ও গবাদি পশু বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া প্রধান উপদেষ্টার সাথে জামায়াত আমিরের বৈঠক সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের নামে দুদকের মামলা

সকল