০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩০, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

সিলেটের ১০ নম্বর কূপে তেলের খনি, মজুদ দেড় কোটি লিটার

- ছবি - সংগৃহীত

সিলেট গ্যাসফিল্ডের অনতিদূরে গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন বাঘের সড়ক এলাকায় সিলেট ১০ নম্বর কূপে তেলের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। তেলের এই খনিতে উত্তোলনযোগ্য মজুদ প্রায় দেড় কোটি লিটার বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান স্লামবার্জার। এই খনি থেকে দৈনিক ৬০০ ব্যারেল হারে উত্তোলন করলে ১০ বছর তেল উত্তোলন করা যাবে। ১০ নম্বর কূপ থেকে সিলেট গ্যাস ফিল্ড পর্যন্ত (প্রায় ৭ কিলোমিটার) পাইপলাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হলে তেল উত্তোলন শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। ১০ নম্বর কূপে তেলের পাশাপাশি তিন স্তরে ১০৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে স্লামবার্জারের রিপোর্টে বলা হয়েছে।

আজ সোমবার সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো: রেজাউল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, মজুদ দেড় ব্যারেলের বেশিও হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল তেল উত্তোলন সম্ভব বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে

স্লামবার্জারের রিপোর্টে ১৪.৮ মিলিয়ন ব্যারেল (প্রায় দেড় কোটি) তেল উত্তোলনযোগ্য বলা হয়েছে। দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল (১ ব্যারেল সমান ১৬৯ লিটার) তেল উত্তোলন করা সম্ভব। ফিল্ডটিতে আরেকটি কূপ খননের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, সিলেট ৯ নম্বর কূপেও গ্যাসের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ তেল মজুদ রয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিল সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্লামবার্জার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। আমাদের টিম এটি মূল্যায়ন করছে। তবে ভালো পরিমাণে মজুদ আশা করা হচ্ছে।

সিলেট-১০ কূপের ১৩৯৭ থেকে ১৪৪৫ মিটার গভীরতায় তেলের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের সময় প্রথম দিন ২ ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল উঠেছে। আপাতত কূপটি বন্ধ রাখা হয়েছে। মজুদের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কনসালট্যান্ট ফার্ম স্লামবার্জারকে নিযুক্ত করা হয়। সেই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানিয়েছে, এই কূপের তেলের কোয়ালিটি উন্নতমানের। সিলেট-১০ থেকে পাওয়া তেল বুয়েট এবং ইস্টার্ন রিফাইনারীতে প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা এই তেল উৎকৃষ্টমানের বলে রিপোর্ট দিয়েছে।

২০২৩ সালের নভেম্বরে সিলেট-১০ কূপের খনন শেষ হয়। কূপটিতে তেলের পাশাপাশি গ্যাসের তিনটি স্তর পাওয়া গেছে। স্তরগুলোর অবস্থান হচ্ছে ২৪৬০ থেকে ২৪৭৫ মিটার, ২৫৪০ থেকে ২৫৭৬ মিটার ও ৩৩০০ মিটার গভীরতায়। গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ ১০৬ বিলিয়ন ঘনফুট হতে পারে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আশা করছে।

১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায় হরিপুরে। সিলেটের হরিপুর ৭ নম্বর কূপ থেকে ১৯৮৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে তেল উত্তোলন শুরু হয়। সে সময় তেল উত্তোলন স্থায়ী হয় পাঁচ বছর। তারপর বন্ধ হয়ে যায়। ১০ নম্বর কূপ থেকে তেল উত্তোলন শুরু হলে ৩৭ বছর পর বাংলাদেশে আবার তেলযুগের যাত্রা শুরু হবে।

বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৭ লাখ ৬১ হাজার ৩২০ টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ এসেছে দেশীয় উৎস (গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে উপজাত-কনডেনসেট) থেকে। আর ৯২ শতাংশ জ্বালানি যোগান এসেছে আমদানি থেকে। ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে ৬৩ শতাংশ হচ্ছে ডিজেল আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েল রয়েছে ১৪ শতাংশ।


আরো সংবাদ



premium cement