০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩০, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

অবশেষে কানাইঘাটে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন হারিছ চৌধুরী

-

অবশেষে সিলেটের কানাইঘাটে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাবার এতিমখানায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আবুল হারিছ চৌধুরী।

আজ রোববার (২৯ ডিসেম্বর) আছর নামাজের পর দোয়া মাহফিল শেষে তাকে দাফন করা হয়। এতে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মীসহ আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। দাফনের আগে তাকে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার দেয়া হয়।

গার্ড অব অনার প্রদর্শন করেন কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন, কানাইঘাটে দায়িত্ব প্রাপ্ত গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: সাইদুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মামুন রশীদ মামুন কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল, কানাইঘাট উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাস্টার ফয়ছল আহমদ প্রমুখ।

রোববার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে তাঁর লাশ নিয়ে আসা হয় সিলেটের শাহী ঈদগাহ ময়দানে। দুপুর থেকেই শত শত সিলেটবাসী এসে ময়দানে সমবেত হন। বেলা আড়াইটার দিকে এখানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে শাহী ঈদগাহ ময়দানের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন বিএনপি নেতা ও হারিছ চৌধুরীর সহকর্মী বদরুদ্দোজামান সেলিম। দোয়া পরিচালনা করেন শাহী ঈদগাহ মসজিদের ইমাম আবদুল মুনিম।

দোয়া মাহফিলের পূর্বে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিম চৌধুরী, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কয়েকজন সহযোগী, রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বক্তব্য রাখেন।

হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিম চৌধুরী বলেন, আপনাদের প্রিয় হারিছ চৌধুরী সিলেটে ফিরেছেন। তবে জীবন্ত নয়, কফিনে বন্দী হয়ে। শত বাধা বিপত্তি প্রতিকূলতা পেরিয়ে এ অসম্ভবকে সম্ভব করতে যারা নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার প্রিয় নেতা হারিছ চৌধুরীর লাশ সিলেট আনতে দেয়নি। এমনকি তাঁর নামাজে জানাজা আমরা সেরকম করতে পারিনি। আজ আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি সিলেটে ফিরেছেন। বাবার এতিমখানায় তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়ন নির্যাতন ও রাজনৈতিক রোষানল থেকে বাঁচতে দীর্ঘকাল ঢাকায় নিজের নাম পরিচয় গোপন করে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান নাম ধারণ করে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় হারিছ চৌধুরী ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় পান্থপথ এলাকায় বসবাসকারী বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা মাহমুদুর রহমান নাম ধারণ করে আত্মগোপনে ছিলেন। তাই মৃত্যুর পর মাহমুদুর রহমান নামেই তাঁকে রাজধানীর অদূরে সাভারের একটি মাদরাসায় ৪ সেপ্টেম্বর দাফন করা হয়। তাঁর মেয়ে সামিরা তানজিম চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানান, তখন তার বাবা হারিছ চৌধুরীকে নিজ নামে কানাইঘাটে দাফন করতে চাইলেও শাসকগোষ্ঠীর নানা বাধা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তার লাশ কবর থেকে তোলা হয়। এরপর ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশের পরিচয় সনাক্ত করার পর মলাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।

কে এই হারিছ চৌধুরী

পুরো নাম আবুল হারিছ চৌধুরী। তবে হারিছ চৌধুরী নামেই সমধিক পরিচিত তিনি। জন্ম সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগর গ্রামের জমিদার বংশের চৌধুরী পরিবারে। পড়ালেখা করেছেন ঢাকার নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যোগ দেন জাগদলে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

বিএনপি গঠনের পর সংগঠনটির সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক হন হারিছ চৌধুরী। সেসময় তিনি সিলেটে বিএনপিকে গড়ে তোলেন। পরে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন হারিছ চৌধুরী। তবে ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী হন তিনি। আর ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হারিছ চৌধুরীকে রাজনৈতিক সচিব করেন খালেদা জিয়া।

ওই সরকারের আমলে ক্ষমতার অন্যতম ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠা হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। ছিলেন তারেক রহমানের বিশেষ আস্থাভাজন। ফলে দল ও সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হন তিনি।

২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ঝটিকা অভিযান শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার সপ্তাহখানেক পর ঢাকা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটে গ্রামের বাড়িতে আসেন হারিছ চৌধুরী। ওই রাতেই যৌথ বাহিনী তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

সেই থেকে হদিস নেই হারিছ চৌধুরীর। তাঁকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কেউ বলে তিনি সিলেটে, কেউ বলে ঢাকায়। আবার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য দিতে থাকেন কেউ কেউ। ভারত, ইরান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র—হারিছ চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে একেক সময় একেক দেশের নাম শোনা যায়। তবে নিশ্চিত করে কোনো তথ্যই জানা যায় না। তার পরিবার মুখে খোলে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অবস্থান শনাক্ত করতে পারে না।

লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকেও নানা সময় আলোচনায় উঠে আসে হারিছ চৌধুরীর নাম। বিশেষত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ আলোচিত কয়েকটি মামলার আসামি হওয়ায় এসব মামলার শুনানিকালে তার নামও আলোচনায় আসতে থাকে। এ দুই মামলাতেই দণ্ড হয় হারিছ চৌধুরীর। তবু তার খোঁজ মেলে না। ২০০৭ সালের পর প্রকাশ্যে তাকে কেউ দেখেছে বলেও জানা যায় না।

তবে আত্মগোপনে যাওয়ার পর হারিছ চৌধুরীকে আর কখনো প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক সহকর্মীদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেননি তিনি। এমনকি দেশে পরিবারের সদস্যদের সাথেও যোগাযোগ রাখতেন না। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে
মৃত্যুবরণ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
তালায় সড়ক দুর্ঘটনায় ভ্যানচালক নিহত বড়াইগ্রাম প্রেস ক্লাবে সভাপতি অহিদুল, সম্পাদক মান্নান ২০২৫ সাল হবে ঘৃণ্য অপরাধীদের বিচারের বছর : তাজুল ইসলাম থার্টি ফার্স্ট নাইট : আতশবাজি ফোটাতে গিয়ে রাজধানীতে দগ্ধ ৫ শীতে জবুথবু উত্তরের জনপদ গাইবান্ধা ২০২৫ সালে যতগুলো ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ সাবেক মন্ত্রী কামরুল ৪ দিনের রিমান্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর আওয়ামী পন্থী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারতের জিনিউজের প্রতিবেদন বানোয়াট : প্রেস উইং জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসায় বিদেশে ডলার নেয়ার সীমা শিথিল থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনের সময় ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল