হাওরে জলাবদ্ধতা : সুনামগঞ্জে বোরো ধান আবাদে দুশ্চিন্তায় কৃষক
- তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:২১
সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি হাওরে জলাবদ্ধতার কারণে বোরো ফসল (ধানের চারা) রোপনে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। জামালগঞ্জ উপজেলার সর্ববৃহৎ ফসল ভান্ডার খ্যাত পাকনা হাওরে জলাবদ্ধতার কারণে কয়েক বছর ধরে বোরো ধান আবাদে ১০-১৫ দিন বিলম্ব হচ্ছে। ফলে কৃষকদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
চলতি বোরো আবাদ মৌসুমে হাওরের পানি ধীরগতিতে নিষ্কাশনের কারণে পৌষে ধানের চারা রোপনে কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় অনেক কৃষক।
সুনামগঞ্জের মানুষ বছরে একটিমাত্র বোরো ফসলের উপর জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। ফসল ঘরে উঠলে আনন্দে সময় কাটে তাদের সারা বছর। আর প্রাকৃতিক বা মনুষ্য সৃষ্টির কোনো বিপর্যয়ের কারণে ফসলের ক্ষতি হলে সারা বছর যায় তাদের অশ্রু জল ফেলে।
সুনামগঞ্জের বোরো ফসল ঠিকমতো ঘরে উঠলে দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখে। এই ফসিল হাওরের বোরো জমি রোপন করার উপযুক্ত সময় এখন।
জামালগঞ্জের পাকনা হাওর (ফেনারবাঁক ইউনিয়ন) ও হালি'র হাওরে (বেহেলী ইউনিয়ন) পানি ঠিকমতো নিস্কাশন না হওয়ায় বিপাকে রয়েছেন কৃষকরা।
জেলা জুড়ে ফসল রোপন করার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০-১৫ দিন পিছিয়ে পড়ার কারণে বৈশাখ মাসে ঠিক সময় মতো ফসল ঘরে উঠে না। আগাম বন্যার কবলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকেন কৃষকরা।
জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, ফেনারবাঁক ইউনিয়ন ও ভীমখালী ইউনিয়নের হাজারো কৃষক বছরে একটিমাত্র বোরো ফসল পাকনা'র হাওরে রোপন করেন। কিন্তু পাকনা হাওরে জলাবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার কৃষক দুশ্চিন্তায় থাকেন।
পাকনা হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, পাকনা হাওরের পানি নিষ্কাশনের রাস্তা প্রতি বছরের মতো এবারো গজারিয়া স্লুইসগেট ও ঢালিয়া স্লুইসগেট পর্যন্ত পলি মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। যার ফলে সময় মতো পানি নিষ্কাশন হয়নি। ১৪ হাজার ৪৪৮ হেক্টর বিস্তীর্ণ এই হাওরে বোরো ধানের জমি রয়েছে ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর ও অনাবাদী ২৯০০ হেক্টর, যা থেকে আনুমানিক ৬৫ হাজার ৫০০ টন ধান উৎপাদন হয়ে থাকে।
এলাকার সমাজকর্মী জুলফিকার চৌধুরী রানাসহ আরো কয়েক জনের প্রচেষ্টায় প্রথম দফায় গজারিয়া স্লুইচ গেটের উজান দিকের পলি মাটি কিছুটা সরিয়ে দিলে সাময়িক পানি নিষ্কাশনে কিছুটা উপকৃত হন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক সিরাজুল হক ওলি বলেন, হাওরের পানি নিষ্কাশন করা না হলে বোরো আবাদ বিলম্বিত হবে এবং আগাম বন্যায় ফসলহানির শঙ্কা থেকে যাবে।
তাই ফসলরক্ষায় আমরা জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছি। হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গজারিয়া স্লুইসগেট ও ঢালিয়া স্লুইসগেটের নালা খনন করে দিলে হাওরে বোরো আবাদ করে ঘরে ফসল তুলতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে।
কৃষক নবাব মিয়া বলেন, পানি নিষ্কাশনের সমস্যা নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরেই আমরা এই সমস্যার কারণে ধান চাষ নিয়ে বিরম্বনায় থাকি। আশা করি, স্থায়ী সমাধানে সরকারীভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি দেবেন।
এছাড়াও সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, ধর্মপাশা উপজেলাসহ কয়েকটি হাওরে পানি না নামায় বোরো আবাদ বিলম্বিত হচ্ছে। এতে কৃষকরা সময়মতো বোরো ফসল ঘরে তুলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরেছেন।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না হলে কৃষকরা ঠিকমতো ফসল রোপন করতে পারবে না। ফসল না হলে ফসল রক্ষা বাঁধ দিয়ে কি হবে? আমাদের কাছে খবর আছে, জেলার বিভিন্ন হাওরে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকদের ফসল রোপনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব হাওরে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ নেয়া জরুরী।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম মুঠোফোনে বলেন, জামালগঞ্জের পাকনার হাওরসহ কয়েকটি হাওরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাউবোকে সাথে নিয়ে কাজ করছি। হাওরের পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবো।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ফসলরক্ষার জন্য ৫৩টি হাওরে ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ-বেড়িবাঁধ ও ক্লোজার নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়েকটি হাওরে পানি নিস্কাশনের জন্য আমরা পাম্পের সাহায্যে কাজ করছি। আর যেখানে পলি মাঠি খনন করে পানি নিষ্কাশন করা দরকার, সেখানে প্রকল্প করে খননের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিচ্ছি। আশা করি এই সমস্যা দ্রুতই শেষ হবে। কৃষক ভাইদের ফসল রোপনে কোনো সমস্যা হবেনা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা