০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

সিলেট সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি : ৩ স্টেশনে বন্ধ আমদানি-রফতানি

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সিলেট সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিতর্কিত ও বহিস্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠনের নেতাদের উস্কানির পাশাপাশি ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় চলছে বিক্ষোভ।

এসব উগ্রবাদিদের বাধায় সিলেটের তিনটি শুল্ক স্টেশনে বন্ধ রয়েছে আমদানি ও রফতানি। গত তিন দিন থেকে সবকটি স্টেশনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন দু’দেশের আমদানি ও রফতানিকারকরা। দু’দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ শঙ্কায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে আছে বলে জানিয়েছে সিলেট বিজিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার থেকে সীমান্তের ওপারে ভারতীয় উগ্রবাদী একটি সংগঠনের বাধায় সিলেটের জকিগঞ্জ, সুতারকান্দি ও জুড়ি শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য বাংলাদেশ-ভারতে আমদানি ও রফতানিসহ সবধরণের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কিছু স্টেশনে মাঝে মাঝে পাথর-কয়লা আমদানি হলেও রফতানি বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, ভারতের শ্রীভূমির (করিমগঞ্জ) সীমান্তে সনাতনী ঐক্য মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের বিক্ষোভকারীরা সিলেটের জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছেন। সোমবার সকালে কিছু কমলা বাংলাদেশে এলেও পরে আন্দোলনকারী সংগঠনটির বাধার মুখে আর কোনো পণ্য আসেনি। এর আগে সকালের দিকে জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের শ্রীভূমি (করিমগঞ্জে) থেকে ছয় টন কমলা বাংলাদেশে আমদানি হয়। পরে সেখানকার বিক্ষোভকারীরা আমদানি-রফতানিসহ সব ধরণের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। ফলে বাংলাদেশী আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের এলসি করা মালামালের গাড়ি ভারতের শ্রীভূমি শুল্ক স্টেশন থেকে ফেরত যায়। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন আমদানীকারকরা।

আমদানি-রফতানি বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ভারতের শ্রীভূমি (করিমগঞ্জ) শুল্ক স্টেশনে সেখানকার বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ করে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের এলসি করা মালামালের গাড়ি ফেরত দিয়েছেন। এ নিয়ে জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন থেকে আমরা ভারতের শ্রীভূমি (করিমগঞ্জ) শুল্ক স্টেশনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও সেখানকার কর্মকর্তারা কল রিসিভ করেননি। জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতে কোনো পণ্য দীর্ঘদিন ধরে রফতানি হয় না। সুতারকন্দি শুল্ক স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশী প্রাণ, আকিজসহ কয়েকটি কোম্পানির পণ্য ভারতে যায় বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

এ দিকে ভারতের শ্রীভূমির (করিমগঞ্জ) একটি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালের দিকে বাংলাদেশের সুতারকান্দি শুল্ক স্টেশন দিয়ে রফতানি হওয়া পটেটো, কেকসহ কিছু পণ্য সনাতনী ঐক্য মঞ্চের সদস্যরা করিমগঞ্জে পুড়িয়ে ফেলেছে। এমনকি বাংলাদেশী পণ্য বয়কটের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য ভারতের উত্তর আসামের এমএলএ কমলাখ্যা দে পুরকায়স্থ শ্রীভূমির (করিমগঞ্জ) জেলা প্রশাসককে একটি চিঠিও দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সুতারকান্দি সীমান্ত এবং শ্রীভূমি স্টিমারঘাট হয়ে নদীপথে রফতানি ও আমদানি বন্ধ করার অনুরোধ করছি।

জানা গেছে, সিলেটের তামাবিলে ভারতীয় সীমান্তে উত্তেজনা না থাকলেও রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমদানির মধ্যে মাঝে মাঝে পাথর ও কয়লার ট্রাক আসছে বলে তামাবিল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি পুরোপুরি বন্ধ না হলেও নাম মাত্র পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে তামাবিল স্থল বন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান সন্ধ্যায় দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘তামাবিল স্টেশনের ভারতীয় অংশ থেকে কোনো জটিলতার খবর পাইনি। তবে আমদানি একেবারে কমে গেছে। মাঝে মাঝে পাথর ও কয়লার ট্রাক দেশে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশ থেকেও তেমন কোনো পণ্য রফতানি হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।’

সীমান্ত এলাকায় কোনো শঙ্কা নেই বলে জানান সিলেট ব্যাটালিয়ন-৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: হাফিজুর রহমান। তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমার আওতাধিন সীমান্ত এলাকায় কোনো শঙ্কা নেই। এর পরও পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে সুতারকান্দি ও জুড়ি স্টেশন দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। রোববার বিয়ানীবাজারের শেওলা শুল্কস্টেশনের ওপারে ভারত অংশের সুতারকান্দি শুল্কস্টেশন এলাকায় সনাতনী ঐক্যমঞ্চ 'বাংলাদেশ চলো' বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা আসাম পুলিশ ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢোকার চেষ্টা চালায়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। এ সময় আন্দোলনকারীরা সুতারকান্দি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি-রফতানি বন্ধের দাবিও তোলেন।

শেওলা স্থল বন্দরের ইনচার্জ হাসান আহমদ দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবারও শেওলা সীমান্ত পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। আমাদের এদিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমদানি-রফতানিকারকরা নিজে থেকেই কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিবি-৫২ অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মেহেদী হাসান দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, সুতারকান্দি সীমান্তে ভারতে কিছুটা গন্ডগোল হয়েছে। যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। সেটা ভারত সরকার কন্ট্রোল করেছে। আমাদের সীমান্তে সবসময় সতর্ক থাকি। এর পরও বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। কোনো সমস্যা হলে যাতে আগে জানতে পারি এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় এলাকাবাসীদেরকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

এদিকে ভারতীয়দের বিক্ষোভ নিয়ে একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের আটকাতে কাটাতারের বেড়া ব্যবহার করে ভারতীয় আইনশৃংখলা বাহিনী। এতে ভারতীয় উগ্রবাদী নাগরিকরা অংশ নেয়। হিন্দু ঐক্যমঞ্চ নামে একটি সংগঠনের নামে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে। ভারতীয়দের এমন আগ্রাসন সহজভাবে নিচ্ছেন না সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। অনেকেই তাদের আতঙ্কের বিষয়টি জানিয়েছেন। যদিও বিজিবির বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তারা সাধারণ জনগণকে আশস্ত করতে কাজ করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement