‘প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন’
- এম জে এইচ জামিল, সিলেট
- ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৪৩
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো: জালাল উদ্দিন বলেছেন, ‘বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় আমাদের প্রাইমারি শিক্ষা অনেক পিছিয়ে আছে। প্রাথমিকেই আমাদের শিশুদের একটা বিশাল অংশ বিভিন্ন কারণে ঝরে পড়ে। আজকের শিশুরা আগামী দিনে জাতিকে নেতৃত্ব দিবে। তাই প্রাইমারি থেকেই তাদের মেধার বিকাশে মানসম্মত ও সময়োপযোগী শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্রাকের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে।’
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকালে সিলেটে ব্র্যাক একসেলারেটেড এডুকেশন মডেল বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সফলতার পাশাপাশি সীমাবদ্ধতার বিষয়ও আলোকপাত করেন। কাউকে না কাউকে এই ব্যর্থতার দায়ভার নিতেই হবে। তা না হলে এই ব্যর্থতা থেকে উত্তরণ ঘটানো যাবে না।’
এ সময় সিলেট সদরের পীরেরবাজারে ব্রাক লার্নিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম।
ব্র্যাকের এডুকেশন স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মাইগ্রেশন প্রকল্পের পরিচালক সাফি রহমান খানের সভাপতিত্বে সভায় বিভিন্ন উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী শিক্ষা অফিসার, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্রাক শিখন স্কুলের শিক্ষকরা অংশ নেন। এ সময় অনুষ্ঠানে আদিবাসী শিশু শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লাঠি নৃত্য প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও মতামত প্রদান করেন। প্রধান শিক্ষকরা ব্র্যাকের বিদ্যালয়গুলোকে ইতিবাচক সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সাথে আরো বেশি সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ দেন তারা। ব্র্যাক প্রকল্পের বিদ্যালয়ের কর্মসূচি যেন কোনোভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে ব্যহত না করে সেদিকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান শিক্ষকরা। সরকারি কর্মকর্তারা ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান। এ সময় আরো বক্তব্য দেন ব্রাকের ইএমডিসি কর্মসূচি ব্যবস্থাপক কামরুস সালাম।
সভাপতির বক্তব্যে সাফি রহমান খান বলেন, ‘শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি তুলনামূকভাবে দুর্বল। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে ঝরে পড়ে। এই দুর্বলতা শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রেও ভোগান্তিতে ফেলে বলে মন্তব্য করেন তিনি।’
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ আকস্মিক প্রাদুর্ভাবের ফলে বাংলাদেশের সকল স্কুল ১৮ মাসের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং এ সময় শ্রেণিকক্ষে প্রচলিত সকল শিখন-শেখানো কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীরা বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং এর হারও বাড়তে থাকে। যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতায় ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির প্রকল্প ‘Educate the Most Disadvantaged Children in Bangladesh’ (EMDC)-এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য একসেলারেটেড মডেলে শিক্ষাব্যবস্থা করা হচ্ছে।
১০ মাসের এই মডেলের মধ্যে রয়েছে চার মাসের একটি ক্যাচ-আপ কম্পোনেন্ট (Bridge Course) এবং ছয় মাসের নির্দিষ্ট শ্রেণিভিত্তিক শিখন প্রক্রিয়া, যা শিক্ষার্থীদের পূর্বের শিখন ঘাটতি পূরণ করে পুনরায় আনুষ্ঠানিক স্কুলে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে। বর্তমানে ‘EMDC’ প্রকল্পটির তৃতীয় বর্ষ চলছে এবং ২৮ হাজার ৭৫০ শিক্ষার্থী এক হাজার ১৫০ টি ব্র্যাক স্কুল থেকে এই মডেলে শিক্ষা সম্পন্ন করেছে। আরো ২০ হাজার শিক্ষার্থী ৮০০টি ব্র্যাক স্কুলে অধ্যয়নরত আছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই প্রকল্পটি শেষে এক লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী পাঁচ হাজার ৯০০টি এক কক্ষ বিশিষ্ট স্কুল থেকে ১০ মাসের একসেলারেটেড মডেলে শিক্ষা লাভ করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা