১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কোয়ালিটি চা উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা : টি বোর্ড চেয়ারম্যান

সিলেটে টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান - ছবি : নয়া দিগন্ত

কোয়ালিটি চা উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ চা বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো: সরওয়ার হোসেন বলেছেন, ‘চলতি মৌসুমে এবার আমাদের একটু ডিফেসেন্সি যাবে। এবার আমরা উৎপাদন টার্গেটে যেতে পারব না। তবে যতটুকু জেনেছি অক্টোবর পর্যন্ত বেশিরভাগ বাগান গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি উৎপাদন হয়েছে।’

রোববার (১০ নভেম্বর) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের আয়োজনে প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের কক্ষে চতুর্থবারের মতো পাঁচদিন ব্যাপী ‘টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ প্রশিক্ষণ কোর্স-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ চা প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হকের সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কোর্স-এর উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি মেজর জেনারেল শেখ মো: সরওয়ার হোসেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের যুগ্ম সচিব ইয়াছমিন পারভীন তিরবীজি, বাংলাদেশ চা গবেষণা কন্দ্রের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো: ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান ও ফিনলে চা কোম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনের সহ-ব্যবস্থাপক জি এম শিবলী।

চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘দামের চেয়ে কোয়ালিটির চ্যালেঞ্জটা বেশি। কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করার জন্য দামটা ধরে রাখতে পারছে না। চায়ের কোয়ালিটি উন্নতি করতে পারলে দাম অবশ্যই পাবে। কিন্তু এখন যেহেতু কোয়ালিটি উন্নতি হচ্ছে না, তাই দাম পড়ে যাচ্ছে। লোকজন ভালো চায়ের সাথে খারাপ চা মিশ্রণ করে বাজারে বিক্রি করছে। যার কারনে দাম বাড়ছে। মানুষ যখন বেশি টাকা দিয়ে একটা জিসিন কিনতে যাবে তখন ভালোটাই কিনবে। তাই ভালো চা করতে পারলে দাম অবশ্যই পাওয়া যাবে। এছাড়া যদি প্রশাসনিক কোনো চ্যালেঞ্জ থাকে আমরা সবাই মিলে সেটা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করব।’

ন্যাশনাল চা কোম্পানির বাগানে উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই চা বাগান (এনটিসি) সরাসরি টি বোর্ডের অধীনে না। এ ব্যাপারে মন্ত্রনালয় ও এনটিসি আলাদা মিটিং হচ্ছে। কিভাবে এই রুগ্নদশা থেকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা যায়। আমরাও এটাতে যুক্ত হচ্ছি। সবাই মিলেই চেষ্টা করছি যাতে করে এনটিসির যে চ্যালেঞ্জ সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

শুধু বাগানে পাতা নষ্ট হচ্ছে সেটা না, অনেক চা গুদামে আছে সেটাও একটা ইস্যু, অনেক শ্রমিক রয়েছে যারা কাজ করতে পারছে না এবং অনেক পাতা বাগানে পড়ে আছে সেগুলো উৎপাদন করতে পারছে না। সবদিক থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছে উত্তোরণের জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে স্বদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। ওই বাগানের আগের এমডি এবং চেয়ারম্যান নেই। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে একজন এমডি, একজন চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে চার থেকে পাঁচজন বোর্ড অব ডাইরেক্টর নিয়োগ করা হয়েছে। সবাই মিলে চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই সমস্যা থেকে সমাধানের দিকে যেতে পারব।

অবৈধ পথে নিম্নমানের চা আমদানি এবং দেশীয় চা বিদেশে রফতানির ব্যাপারে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, টি বোডের্র পক্ষ থেকে আমরা মনিটরিং আরো জোড়দার করব। উত্তরবঙ্গে আমাদের মনিটরিং আরো বাড়বে। যাতে করে আমরা কোয়ালিটি আরো ধরে রাখতে পারি। আমরা যতই পরিকল্পনা করি না কেন যদি কোয়ালিটি চা উৎপাদন করতে না পারি তাহলে রফতানি করা সম্ভব না। আমরা সবার সাথে কথা বলছি, কোয়ালিটি চা উৎপাদনের জন্য। এজন্য ডিপ্লমেটিক চ্যানেলে আমাদের যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি কোয়ালিটি উন্নত করতে হবে।

চোরাইপথে যেসব চা পাশের দেশ থেকে আসছে তা রোধ করার জন্য আমরা বিজিবিকে অনুরোধ করব। যাতে করে বর্ডার মনিটরিং তারা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যেসব এলাকা দিয়ে নিম্নমানের চা অবৈধভাবে নিয়ে আসে সেসব বর্ডারে যেন তারা নজরদারি আরো বাড়িয়ে দেন।

তার আগে চেয়ারম্যান বিটিআরইর ভ্যালু অ্যাডেড চা প্রদর্শন ঘুরে দেখেন। এখানে ১২ রকমের কোয়ালিটি চা প্রদর্শন করা হয়। এগুলো হলো প্রিমিয়াম ব্ল্যাক টি, অর্থডক্স টি, অলং টি, গ্রীন টি, হোয়াই টি, ইম্পেরিয়াল জেসমিন টি, মাসালা টি, এলোভেরা অ্যান্ড পাইনএ্যাপল টি, মর্নিং টি, চিনা লিচি টি, তুলশি টি, চামমিল টি।

এদিকে পাঁচদিন ব্যাপী এই ‘টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধনী দিনে দেশের ৮০ থেকে ৯০ টি চা বাগানের প্রতিনিধি উপস্থিত রয়েছেন। টি টেস্টিং ছাড়া চায়ের ভালো-মন্দ কেউ বিচার করতে পারবে না। টি টেস্টিং সম্পর্কে যদি জানা না থাকে, চায়ের ১০ টা গ্রেড সম্পর্কে যদি ধারণা না থাকে, তাহলে ভালো চা-খারাপ চা বুঝতেই পারবে না। এটা বাগান মালিক হোক বা বাগানের ব্যবস্থাপক হোক কিংবা চা ব্যবসায়ী হোক, এটা সবার জন্য জানা থাকা প্রয়োজন। এ কর্মশালার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের ধারণা দেয়া হবে কিভাবে টি টেস্ট করতে হয়। এর পর তাদেরকে ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট দেয়া হবে বলে নয়া দিগন্তকে জানান টি টেস্টার অ্যান্ড টি মেকার এবং এ কর্মশালার ট্রেইনার মো: মুজিবুর রহমান।


আরো সংবাদ



premium cement