২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আবারো উত্তপ্ত সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণ

পিপি ফয়েজকে প্রতিহতের ঘোষণা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এটি এম ফয়েজকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) আদালত প্রাঙ্গণে এক বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করে এ ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা।

এদিকে জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ ল'ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের পক্ষ থেকেও আইন কর্মকর্তা পদে সুবিধাভোগী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। ল'ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের উদ্যোগে ইতোমধ্যে আইন উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে।

এর আগে রোববার বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নেতৃত্বে নবনিযুক্ত পিপি-জিপির কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। একই দিন জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের উদ্যোগে আদালত চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। অবিলম্বে বিতর্কিতদের নিয়োগ বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারীও দেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নবনিযুক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নিয়োগকে প্রত্যাখ্যান করে সিলেটের আদালতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা। একপর্যায়ে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে নিয়োগপ্রাপ্ত পিপি অ্যাডভোকেট এটি এম ফয়েজের ৩ নম্বর বার হলের দ্বিতীয় তলায় বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা।

সিনিয়র আইনজীবী মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিুবুর রহমান হাবিবের সভাপতিত্বে ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুল আহমদ চৌধুরীর পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটওয়ারী রিপন, জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমদ, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল ফাত্তাহ তুহেল, অ্যাডভোকেট এজাজ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আনছারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ, অ্যাডভোকেট উবাদুর রহমান ফাহমি, অ্যাডভোকেট শাহজাহান সিদ্দিকি, অ্যাডভোকেট আয়েশা সিদ্দিকা, অ্যাডভোকেট তানভীর আক্তার খান, অ্যাডভোকেট জাফর ইকবাল তারেক, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি, অ্যাডভোকেট আলী হায়দার ফারুক, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, অ্যাডভোকেট সাজেদুল ইসলাম সজিব, অ্যাডভোকেট মোবারক হোসেন, অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী, অ্যাডভোকেট নুর আহমদ, অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই রাজন, অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক খান রাজ, অ্যাডভোকেট তাজ রিহান জামান, অ্যাডভোকেট বদরুল আলম লিটন, অ্যাডভোকেট শামীম আহমদ, অ্যাডভোকেট হাবিব আহমদ, অ্যাডভোকেট মঞ্জুর এলাহী সামি, অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম রায়হান, অ্যাডভোকেট নাজমুল হুদা সাহান, অ্যাডভোকেট সাহেদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খুরশেদ আলম, অ্যাডভোকেট গোলাম রসুল সুমেল, অ্যাডভোকেট মুমিনুল হক, অ্যাডভোকেট মোজাক্কির হোসেন, অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন সাদিক, অ্যাডভোকেট রুহুল আমীন, অ্যাডভোকেট কামরুল আমিন, অ্যাডভোকেট কাজী সেবা আক্তার, অ্যাডভোকেট সাহেদ আহমদ, অ্যাডভোকেট জাবেদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খায়রুল আমিন ও অ্যাডভোকেট স্বপন আহমদ প্রমুখ।

এ সময় আইনজীবীরা বলেন, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট এটি এম ফয়েজকে প্রতিহত করা হবে। তার বিরুদ্ধে আদালতের আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত। তাকে প্রতিহত করতে সকল আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ। অ্যাডভোকেট এটি এম ফয়েজ একজন বহুরূপী ও বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিএনপিতে এলেও বিগত খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। দলে তার সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা, অনুপস্থিতি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের আইনি সেবা দেয়ায় বিতর্কিত ভূমিকার কারণে এক সময় আইনজীবী ফোরামের সভাপতির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

তিনি দু’বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্বপরিবারে স্থায়ীভাবে পাড়ি জমান। ৫ আগস্টের খুনি হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে ফিরে তিনি পিপি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেন এবং সংশ্লিষ্টদেরকে ভুল বুঝিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদটি বাগিয়ে নেন। যা সিলেটের আইন অঙ্গনের সর্বস্তরের আইনজীবীদের মর্মাহত করেছে। নেতারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনা করে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত এটি এম ফয়েজকে পরিবর্তনের জোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ল'ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল খালিক দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সিলেটের আদালতে জিপি হিসেবে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এবং পিপি হিসেবে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনিও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তিনি প্রবাসে ছিলেন।’

এছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তাদের তালিকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ফ্যাসিবাদবিরোধী দোসররা স্থান পেয়েছে। যা খুবই দুঃখনজনক। আদালতের পরিবেশ ও সুষ্ঠু বিচারকার্য পরিচালনার স্বার্থে ওই পিপি ও জিপি তালিকা বাতিল করে আইন পেশায় সৎ, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন তালিকা প্রকাশের জোর দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নবনিযুক্ত পিপি অ্যাডভোকেট এটি এম ফয়েজ উদ্দিন দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমার বিগত দিনের অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে পিপি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমি ২২ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আমার ব্যাপারে কারো আপত্তি থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানানো যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘মুষ্টিমেয় কয়েকজন আইনজীবী কাঙ্খিত পদবি না পেয়ে আশাভঙ্গের বেদনা থেকে আন্দোলন করছেন। তাদের সাথে সাধারণ আইনজীবীদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি নিয়মিত অফিস করছি। বৃহস্পতিবারও আদালতে দায়িত্ব পালন করেছি। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালনে আমার কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে।’

উল্লেখ্য, ১৬ অক্টোবর সিলেটের সকল কোর্টে ১০৩ জনকে পাবলিক প্রসিকিউটর, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর থেকে দু’পাবলিক প্রসিকিউটর-পিপিসহ বিতর্কিত আইন কর্মকর্তাদের অপসারণ চেয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের নেতারা আন্দোলন করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল