সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের টাকার পাহাড়
- আবদুল কাদের তাপাদার, সিলেট
- ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:২৯
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক কমিশন বাণিজ্য ও অন্যান্য আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার আসনের (সিলেট -৬) সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়াও অনুসন্ধানে লন্ডন ও আমেরিকায় আত্মীয় স্বজনদের কাছে টাকা পাচারের প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
মঙ্গলবার দুদকের মহা-পরিচালক মো: আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, নিজ স্ত্রী ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভাই ডাক্তার নজরুল ইসলাম এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বন্ধু কামাল আহমদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বিদেশে পাচারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধান চালানো হয়। গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় এ বিষয়ে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিন গত ৪ আগষ্ট বিকেল ৩টার দিকে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করে লাপাত্তা হয়ে যান এই সাবেক মন্ত্রী। বর্তমানে তিনি বিদেশে নাকি দেশে আত্মগোপনে তা জানা যায়নি।
জানা গেছে, সাবেক এই মন্ত্রী থানা ও আদালত মিলে দায়েরকৃত ছয়টি মামলার আসামি।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগে বলা হয়, সিলেট-৬ আসনের সাবেক এমপি এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কমিশন গ্রহণ করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। নিজ নামে উত্তরা আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাটসহ ৫ কাঠা জমি, নিকুঞ্জ আ/এ ৩ কাঠা জমির মালিকানা অর্জন করেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, নাহিদের ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী ডা. নজরুল ইসলাম এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বন্ধু কামাল আহমদের মাধ্যমে বিপুল অর্থ বিদেশেও পাচার করেছেন তিনি। মন্ত্রী থাকাকালে ঠিকাদারদের থেকে কোটি কোটি টাকা কমিশনের বিনিময়ে হাতিয়েছেন মর্মে জানতে পেরেছে দুদক। নিজ নামে, স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয়র নামে-বেনামে সম্পদ অর্জনের সত্যতা পেয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয় দুদকের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে নুরুল ইসলাম নাহিদ কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তী সংসদেও তিনি বিজয়ী হয়ে পুনরায় শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এ সময় বাংলাদেশের পরিবর্তে ভারতে বই ছাপানো হয়। ওই সময়ই অভিযোগ উঠে, তিনি ভারতে বই ছাপিয়ে ঠিকাদারদের নিকট থেকে শতো কোটি কমিশন বাণিজ্য করেছেন। এসব শিক্ষা বিভাগের সবাই অবগত ছিলেন। কিন্তু কেউ কথা বলতে সাহস করতেন না। নাহিদের আমলেই শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক সঙ্কট ঘনীভূত হয়। ফেলের হার কমিয়ে দিয়ে পাশের হার বাড়ানো হয়।
এক সময় নাহিদ সৎ ও গরীব রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিতি কুড়ালেও শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে তিনি আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে যান। দেশে বিদেশে তার বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছে বলে এখন জানা যাচ্ছে।