২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সপ্তাহের ব্যবধানে সিলেট ও সুনামগঞ্জে আবারো বজ্রপাতে ৮ জনের মৃত্যু

-

এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিলেট ও সুনামগঞ্জে আবারো বজ্রপাতে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত পৃথক সময়ে বজ্রপাতে তাদের মত্যু হয়। এর মধ্যে সিলেটে তিনজন ও সুনামগঞ্জের পাঁচজন রয়েছেন।

এর আগে, গত ২১ সেপ্টেম্বর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে সাতজনে প্রাণহানি ঘটেছিলেন।

জানা গেছে, আজকের বজ্রপাতে সিলেটে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার ভোরে উপজেলার বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের সাড়ইল গ্রাম সংলগ্ন ডুবির হাওরে, দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার কাটিমারা গ্রামে এবং কোম্পানীগঞ্জের রাজনগরে পৃথক বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।

বিশ্বনাথে নিহত রেদওয়ান আহমদ (১৯) সাড়ইল গ্রামের ওলিউর রহমানের ছেলে এবং সিলেট এমসি কলেজের বিএসএস প্রথম বর্ষের ছাত্র। আর সিলেট সদর উপজেলায় নিহত আনছার আলী (৫৫) পেশায় দিনমজুর। কোম্পানীগঞ্জে মারা যান মাসুক আহমেদ (৪১) নামে একজন।

বিশ্বনাথে নিহতের ভাই সুফিয়ান আহমদ জানান, গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে মাছ ধরার উদ্দেশ্য আমরা পুকুর সেচকালে বিকট শব্দ হলে আমরা দুই ভাই পুকুরপাড়ে লুটিয়ে পড়ি। আমাদের অন্য সহযোগীরা ঝাঁপ দেন পানিতে। জ্ঞান ফিরলে উঠে দেখি, ঝলসে গেছে ভাইয়ের মুখের একপাশ। পরে প্রতিবেশী ও স্বজনদের সহায়তায় তাকে সিলেট নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফরিদ আহমেদ বলেন, দুপুরে নিজ বাড়ির পাশে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আনছার আলী। তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। তিনি ঠেলাগাড়ি চালানো, দিনমজুরসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করতেন। বজ্রপাতের আঘাতে তার শরীর ঝলসে গেছে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রাজনগর স্কুলের পাশের মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান মাসুক আহমেদ। তিনি উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্য রাজনগর গ্রামের কনু মিয়ার ছেলে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সুনামগঞ্জে শনিবার রাত থেকে বৃষ্টিসহ বজ্রপাত শুরু হয়ে রোববারও অব্যাহত রয়েছে। রোববার ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বজ্রপাতে তিন উপজেলার চার জেলের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে দোয়ারাবাজারে মাছ ধরার সময় দুই জেলে, জামালগঞ্জে এক, ছাতকে একজন মারা যান।

এদিকে, বিশ্বম্ভরপুরে আরেকজন মারা গেছেন। তবে তার মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। বজ্রপাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার মৃত্যু হতে পারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল ৭টায় দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের পলিরচর গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে জালাল মিয়া (৩০) ও একই গ্রামের নুরুল হকের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৮) বাড়ির পাশের হাওরে মাছ ধরতে যায়। এসময় বজ্রপাতে মৃত্যু হয় তাদের।

এদিকে, জামালগঞ্জে ভোর রাতে আরেক বজ্রপাতের ঘটনায় শরিফ মিয়া (৩৫) নামের আরেক জেলের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার কালাগোজা গ্রামের আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে। বাড়ির পাশের নয়াহাওরে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মারা যান তিনি।

এছাড়াও ছাতক উপজেলার ৩ নম্বর সদর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা সুন্দর আলী নামে আরেক জেলে মারা গেছেন। বাড়ির পাশের হাওরে সকালে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার হন তিনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অপরদিকে, বিশ্বম্ভরপুরে বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তির সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ ধারণা করছেন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু হয়েছে তার। তবে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, বজ্রপাতেই মারা গেছেন তিনি।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন রোববার দুপুরে নয়া দিগন্তকে বলেন, সুনামগঞ্জের তিন উপজেলায় বজ্রপাতে চারজন জেলে মারা গেছেন। এছাড়া বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একজন মারা গেছেন। মৃতদের ব্যাপারে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement