সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামি ওসি মঈনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ
- সিলেট প্রতিনিধি
- ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৪২
সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মঈন উদ্দিনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের আটকের কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
সোমবারই তাকে ছেড়ে দেয় হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানা পুলিশ। এ নিয়ে সিলেটের সাংবাদিক মহলে বিরাজ করছে ক্ষোভ। পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা দিতে যাচ্ছে সিলেটের সাংবাদিক সমাজ।
জানা গেছে, হবিগঞ্জের মাধবপুরে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করতে গিয়ে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে (৪৩) গ্রেফতার করেছিল বিজিবির টাস্কফোর্স। তবে তার কাছে অবৈধ অস্ত্র রক্ষিত আছে এমন কোনো প্রমাণ না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি।
হবিগঞ্জ ডিএসবি পুলিশ সুপার বলেন, সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা মঈনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে, সোমবার ভোররাতে হবিগঞ্জের মাধবপুরের গোপীনাথপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
মঈন উদ্দিন গোপীনাথপুর (মাস্টারবাড়ি) গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি ৫ আগস্টেও আগ পর্যন্ত কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। এর আগে ছিলেন সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ওসি। সিলেটে ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার দুপুরে বার্তা দেয়া হয়েছিল। পরে আরেকটি চিঠি ইস্যু করে হবিগঞ্জ ডিএসবি পুলিশ সুপার জানান, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৫৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন (হবিগঞ্জ)-এর সহকারী পরিচালক মো: ইয়ার হোসেন জানতে পারেন যে জেলার মাধবপুর থানার গোপিনাথপুর মাস্টার বাড়ি মনতলা গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এ সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেন। এ সময় টাস্কফোর্স কর্তৃক অবৈধ অস্ত্র জব্দ করার প্রয়োজনীয়তা থাকায় মনতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের রাত্রীকালীন টহল দলের সহযোগিতা নেন তিনি।
মো: ইয়ার হোসেন ১৪ জন বিজিবি সদস্যের টিম নিয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মনতলা গ্রামের মঈন উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। তবে অভিযানকালে ওই বাড়িতে কোনো প্রকার অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়নি। পরে মঈন উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি সুনামগঞ্জ জেলা একটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণ করলেও এ লাইসেন্সের বিপরীতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করেননি। তার নামে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি বৈধ কিনা এবং ওই লাইসেন্সের বিপরীতে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে তাকে নিয়ে বিজিবি দল মাধবপুর থানায় যায়। পরে মাধবপুর থানায় রক্ষিত বেসরকারি আগ্নেয়াস্ত্র রেজিস্টার যাচাই করে মঈন উদ্দিনের নামে কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার হেফাজতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়।
ছাত্র আন্দোলনের সময় সাংবাদিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরে আবার তার কাছে অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়নি বার্তা দিয়ে ওসি মঈন উদ্দিনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ওই সময় জানা যায়, তিনি একজন পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদ মর্যাদার কর্মকর্তা। এ অবস্থায় পুলিশ পরিদর্শক মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিজিবি কর্মকর্তা মো: ইয়ার হোসেনের কোনো অভিযোগ না থাকায় সোমবার বেলা ১১টার দিকে তাকে বাড়ি চলে যেতে দেয়া হয়।
শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। ঘটনার এক মাস পর নিহতের ভাই আবুল আহসান মো: আযরফ (জাবুর) ১৯ আগস্ট সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। এজাহারে আসামি হিসেবে পুলিশসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।
মামলার ২ নম্বর আসামি হলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো: সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩ নম্বর আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪ নম্বর আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান ও ৬ নম্বর আসামি ওই সময়ের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা