২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বৈশ্বিক পানি সঙ্কট, সম্ভাব্য পানিযুদ্ধ, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

- ছবি : সংগৃহীত

বিশ শতকের পৃথিবী তেল নিয়ে বহু যুদ্ধ দেখেছে। একুশ শতকের পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে পানি নিয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধের দিকে। বর্তমানে তেলের যে গুরুত্ব, মিঠা পানির গুরুত্ব তার চেয়েও বেশি। পানিকে যে নেক্সট অয়েল বলা হচ্ছে, সেটাই ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝবার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ, পানি ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। পানি নিয়ে রাজনীতি বিশ্বব্যাপী চলমান এবং বড় শক্তিগুলো এটিকে গভীর ও স্পর্শকাতর খেলায় পরিণত করেছে। অনেক আগে, ১৯৯৫ সালে বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট ড. ইসমাইল সেরাগেলডিন বলেছিলেন, আগামী শতকে যুদ্ধ হবে পানি নিয়ে, যদি না আমরা এই মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নিজেদের আচরণে কোনো পরিবর্তন আনতে পারি।

সেই সতর্কবাণীর ২৭ বছর পরে জাতিসঙ্ঘ জানাচ্ছে, পানি ব্যবস্থাপনায় আমাদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি। সঙ্কটের মাত্রা তীব্র হয়েছে, হয়েছে বহুমাত্রিক। বিশ্ব পানি উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২৩ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘ। এতে বলা হয়, বিশ্বের ৩৫০ কোটি মানুষ এখন বছরে অন্তত এক মাস পানির ঘাটতির মধ্যে থাকেন। বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত পৃথিবীর দুই শ কোটি মানুষ। সাড়ে তিন শ কোটির বেশি মানুষ ভালো পয়ঃনিষ্কাশন সেবা থেকে বঞ্চিত। বিশ্বের শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ কম বিশুদ্ধ বা অনেকটা দূষিত পানি ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে আইপিসিসি বিশেষজ্ঞ প্যানেল জাতিসঙ্ঘের সাম্প্রতিকতম জলবায়ু প্রতিবেদনে স্পষ্ট করেছেন যে, বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ বছরের অন্তত একটি সময়ে তীব্র পানিসঙ্কটের মুখে পড়েন। আর পানিবাহিত রোগে সারা বিশ্বে প্রতি বছর গড়ে ২০ লাখ লোক মারা যায়।

বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ ‘বর্তমানে এমন এলাকায় বসবাস করে যেখানে পানির চাহিদা খুব উঁচুমাত্রায় বিদ্যমান অথবা পানির সঙ্কট প্রচণ্ড। এই সঙ্কট যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে পানির অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর ব্যবহার এবং দূষণ। আগে যেসব জায়গায় প্রচুর পানি পাওয়া যেত, বিশ্বের উষ্ণায়নের ফলে সেখানেও দেখা দিয়েছে সঙ্কট। অচিরেই পানি সঙ্কটের সরাসরি শিকার হবে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ। তাদের বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার কমবে শতকরা ৩০ ভাগ। জাতিসঙ্ঘ বলছে, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বসবাস করবে পানি সঙ্কটের এলাকাগুলোতে। এর বছর পাঁচেক পর পানির অভাবে বাস্তুচ্যুত হবে ৭০ কোটি মানুষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ এ খবর দিয়েছে।

এই যে বৃহত্তর সঙ্কট, এর মূলে আছে গুরুতর কিছু কারণ। পরিবেশের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত। জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, বন-জঙ্গল উজাড় হচ্ছে। তাপমাত্রা যাচ্ছে বেড়ে। আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জন্ম নেয়া খরায় ৮০ শতাংশ জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। অপর দিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যা মিঠা পানির উৎসগুলোকে ধ্বংস করছে, সেগুলোও হয়ে যাচ্ছে লবণাক্ত। ফলে সেই পানিও আর ব্যবহারযোগ্য থাকছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মিঠা পানির উৎস নষ্ট হচ্ছে কিংবা দূষিত হচ্ছে। ডায়রিয়াসহ নানা রোগও ছড়িয়ে পড়ছে। খরা দীর্ঘ হলে ইকোসিস্টেমের ওপর চাপ বাড়ে, যার ফলে বৃক্ষ ও পশু-পাখির ওপর পড়ছে মারাত্মক প্রভাব। মাত্রাতিরিক্ত গভীর নলক‚প স্থাপনের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সুপেয় পানির সঙ্কট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে নদী ও খালের পানি দূষিত হচ্ছে। দূষিত হচ্ছে আবাদি জমিও।

সমূহ পানি সমস্যায় যুদ্ধ ও সঙ্ঘাত যুক্ত করেছে ভিন্ন মাত্রা। যুদ্ধে পানির জন্য জরুরি বহু অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে। সিরিয়া, লিবিয়া, সুদান, ইরাক, সোমালিয়ায় এ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যুদ্ধরত বিভিন্ন গ্রæপ গ্রামীণ কুয়া ও পানির বিভিন্ন উৎসকে টার্গেট করছে। অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পানি, পানির উৎস।

মানুষের ব্যবহারের কারণে যেসব পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেটা পরিশোধনের কোনো প্রক্রিয়া নেই। এমন পানির ৮০ শতাংশই নানা রোগ-জীবাণু বয়ে প্রকৃতিতে ফিরে যাচ্ছে। বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত পানির ৪৪ ভাগই বিশুদ্ধকরণ ছাড়া পুনরায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

অকারণে কল ছাড়া, ট্যাংকি উপচে পানি পড়ার মতো ছোটখাটো বিষয়গুলো মোটেও ছোট নয়। কোনো কোনো শহরে অপচয়ের ফলে বিনষ্ট হয় ৩০-৪০ শতাংশ পানি। অন্যদিকে শহরগুলো বিশুদ্ধ পানির অভাবে গরিব। লিমা থেকে কেপটাউন, বসরা থেকে চেন্নাই- পানির জন্য হাঁপাচ্ছে। শহর এলাকায় যেসব মানুষ তীব্র পানি সঙ্কটের মুখে, ২০৫০ সালের মধ্যে তাদের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে শহর এলাকায় পানির চাহিদা বাড়বে ৮০ শতাংশ।

অপচয় ও দূষণের রয়েছে নানা মাত্রা। ছোট-বড় আরো বিবিধ কারণ পানিসঙ্কটের সাথে যুক্ত রয়েছে। মানুষ এ বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের সচেতন চেষ্টা ব্যাপকভাবে অনুপস্থিত।

পানিসঙ্কট সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আফিকার দেশগুলোতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসঙ্ঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, আফ্রিকার নাইজারে নিরাপদ পানির অভাব ৫৪ শতাংশ। কঙ্গোতে প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ খাবার, রান্না এবং ধোয়ামোছার জন্য অনিরাপদ পানি ব্যবহারে বাধ্য হয়। পাপুয়া নিউগিনি, চাদ, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, অ্যাঙ্গোলা ও মোজাম্বিকের মতো দেশে পানি সঙ্কট অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়ছে। পানিবাহিত রোগে প্রতিদিন মারা যায় হাজারো মানুষ; যাদের অধিকাংশই শিশু।

কিন্তু সঙ্কটের আসল চিত্র এটাই নয়। ২০১৭ সালে ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া ও নাইজেরিয়ার বিভিন্ন অংশের দুই কোটি মানুষ পানি সঙ্কটের কারণে ঝুঁকিতে পড়েন। সেখানে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট দেখা দেয়। এখন দেশে দেশে এমন সঙ্কটের ঝুঁকি আরো বেড়েছে। পানি সঙ্কটে কাতর ইয়ামান থেকে ভারত, মধ্য আমেরিকা থেকে আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল। এ সঙ্কটের ফলে সঙ্ঘাত বাড়বে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বৈরিতা বাড়বে, বাড়বে সামাজিক অস্থিরতা আর বাস্তুচ্যুতি। কোথাও পানি না থাকলে, নিরাপদ জীবনের খোঁজে লোকজন সেখান থেকে পালাতে বাধ্য হবে। বহুজাতিক কোম্পানি ও রাজনীতিবিদরাও পানির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় উঠেপড়ে লাগবে। এতে সঙ্ঘাত লেগে যেতে পারে।

পানির তীব্র প্রয়োজনীয়তার কারণে ইতোমধ্যে শক্তিমান রাষ্ট্রগুলো অন্যকে বঞ্চিত করেও নিজেদের পানি সঞ্চয়ে মনোযোগী। বিশেষত নদী অববাহিকায় উজানের দেশগুলোর বিশালাকার বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণে ভাটি অঞ্চলের দেশগুলোতে পানির প্রবাহ বন্ধ করছে বা কমিয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে এবং তা যুদ্ধের আশঙ্কাকে গুরুতর বাস্তবতায় পরিণত করছে। কারণ পানি আটকানোর ফলে কোথাও পানির অভাব তীব্র হয়, সেখানে মানুষকে হয় এমন জায়গায় স্থানান্তরিত হতে হয়, যেখানে পানি সুলভ, কিংবা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হয়, যারা তাদের পানির অধিকার কেড়ে নিচ্ছে!

পানির জন্য মানুষ বহু লড়াই করেছে অতীতে। পানির সাথে সংঘাতের সম্পর্ক জটিল, গভীর। নীল নদ নিয়ে প্রাচীন নুবিয়া ও মিসরের মধ্যে সঙ্ঘাত হয়েছে। বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন সঙ্ঘাত অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে। ব্যাবিলনীয় রাজা হাম্বুরাবির আমল থেকে এ অবধি পানি নিয়ে ছোট-বড় ৯২৫টি সঙ্ঘাতের বিবরণী পেশ করেছেন প্যাসিফিক ইনস্টিটিউটের প্রধান পেটার গ্লিক ও তার দল। তারা অনুসন্ধান করেছেন সেসব সঙ্ঘাত নিয়ে, যা ঘটেছে পানির জন্য। এমন সঙ্ঘাত তাদের হিসাবে ৩০০। এগুলো সরাসরি যুদ্ধ না হলেও এর প্রভাব ছিল যুদ্ধের সমান।

আমরা এখন এসব সঙ্ঘাতের কথা বলছি না। আমরা বলছি পানি নিয়ে সরাসরি বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার কথা। ১৯৮৫ সালে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব ভুট্রোস ঘালি বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে পরবর্তী যে যুদ্ধ আসন্ন, তা রাজনীতিভিত্তিক হবে না, যুদ্ধগুলো হবে পানিভিত্তিক। পোপ ফ্রান্সিস একটি মর্মান্তিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন। বলেছিলেন : ‘আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি যে, টুকরো টুকরো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে যে আমরা বসবাস করছি, তারা কি পানির জন্য একটি মহাবিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি না?’

বান কি মুন বলেছিলেন, ‘মানবতার পরিণতি গুরুতর। পানির ঘাটতি অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপদের হুমকি দেয় এবং এটি যুদ্ধ ও সঙ্ঘাতের একটি শক্তিশালী জ্বালানি।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল রিস্কস বাই ইমপ্যাক্টের তালিকায় প্রধান সঙ্কটের মধ্যে ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর পানির সঙ্কট থাকছে শীর্ষ পাঁচের মধ্যে। দীর্ঘ খরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে প্রায় দুই কোটি লোককে তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। ফলে খাদ্য ঘাটতি এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক বিপর্যয় এখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে খারাপ মানবিক সঙ্কট।

আজকের দুনিয়ায় সঙ্ঘাত চলছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। সবখানেই পানিতেও আগুন জ্বলছে কম-বেশি। সুদান ও মিসরের সাথে ইথিওপিয়ার নীল নদীবাহিত উত্তেজনা যুদ্ধের রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে। আমেরিকা বা ভারতের মতো দেশে নানা অঙ্গরাজ্যে পানি বণ্টন নিয়ে রয়েছে বিরোধ, উত্তেজনা। সেখানে কেউ কারো সাথে যুদ্ধ করছে না বটে, তবে মামলা করছে আদালতে।

বর্তমান পানির প্রাপ্যতা এবং ভবিষ্যতের অনুমান বিশ্লেষণ করে জাতিসঙ্ঘ নিশ্চিত করেছে, প্রায় ৩০০টি এলাকায় পানি নিয়ে সঙ্ঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। গবেষকদের মতে, আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরে পানিযুদ্ধের আশঙ্কা ৭৫-৯৫ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংক ও জাতিসঙ্ঘ পানিযুদ্ধের যে তত্ত¡টি বারবার উচ্চারণ করছে, তাকে নিরীক্ষা করেছে ইউরোপীয় কমিশনের যৌথ গবেষণা কেন্দ্র (ঔজঈ)। এই কমিশনের বক্তব্য হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং সম্পদের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ও সামাজিক অস্থিরতাকে ভয়ানক করে তুলতে পারে। এর ফলে রাজনৈতিক সমস্যা বাড়তে পারে এমন এলাকায়, যেখানে মিষ্টি পানির অভাব রয়েছে বা তৈরি হচ্ছে। পানির বিভিন্ন উৎস নিয়ে দেখা দিতে পারে সঙ্ঘাত। ২০১৮ সালে জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টারের তথ্যানুসারে, এ ধরনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্পট পাঁচটি। সেগুলো হচ্ছে নীল, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস এবং কলোরাডো নদী।

এর মানে পরিষ্কার। পানি নিয়ে যুদ্ধের প্রধান স্পট যেসব নদী অববাহিকা, তার দুই নদীর সাথে যুক্ত বাংলাদেশ। সেগুলো পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র। এই দুই নদীর পানি আটকাচ্ছে ভারত আপন প্রয়োজনে।

ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত রাজেন্দ্র সিং ভারতের ওয়াটারম্যান নামেও পরিচিত। তিনি জানান, ভারতে সরকার ও করপোরেট সেক্টর বিশেষভাবে পানির সর্বনাশ করছে।

স্বাধীনতার সময় গ্রামীণ ভারতজুড়ে ১৫ লাখ জলাশয় ছড়িয়ে ছিল। এর মধ্যে ১২ লক্ষেরও বেশি এখন হয় দখল, নয় দূষিত হয়েছে। প্রায় ৭২% জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ার ফলে মানুষ শুষ্ক অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে উজানের দেশ ভারত বাংলাদেশের প্রাপ্য পানি আরো বেশি আটকাবে এবং জীবন-মরণ সঙ্কট চাপিয়ে দেবে আমাদের মাথার ওপর।

বিশ্বে মিঠা পানির দেশের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। আমাদের মিঠা পানির প্রধান ক্ষেত্র নদী-নালা। কিন্তু পদ্মা-যমুনাসহ বাংলাদেশে অভিন্ন ৫৪টি নদীর মধ্যে ৪৭টি নদীর গতিপথে ছোট-বড় ৫ শতাধিক বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক এই নদীগুলোর পানি ভারত একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে চলছে। বাংলাদেশ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের ১৫৮টি নদ-নদী, খাল-বিল শুকিয়ে গেছে, বাংলাদেশ গুরুতর পানি সঙ্কটের শিকার। মরুকরণ হচ্ছে ব্যাপক, কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, নদীতে প্রবেশ করছে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি, উপক‚লীয় জেলাগুলোতে লবণাক্ততা বাড়ছে, ভূ-গর্ভের পানির স্তর অব্যাহতভাবে নেমে যাচ্ছে, প্রাণ ও প্রকৃতি হচ্ছে ভীষণ বিপন্ন।

জলবায়ুর প্রভাবজাত বৈশ্বিক পানিসঙ্কট এবং ভারতের এই পানি আগ্রাসন থেকে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ কতটা সক্রিয়, সে প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে সামনে যদি উজানের পানি আটকানোর ফলে সঙ্কট আরো বাড়ে, সে পরিস্থিতির উত্তরণে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক মহল কতটা সচেতন এবং তাদের কৌশল ও কর্মপন্থা কী, তা স্পষ্ট করার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।

লেখক : কবি, গবেষক

[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement