জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি কেন মানতেই হলো মমতা ব্যানার্জিকে?

ভারতের আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বিচার চেয়ে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘দাবি’ কার্যত ‘মেনে নিলেন’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল, ডিসি নর্থ গুপ্তাকে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবাশিস হালদার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে কৌস্তভ নায়েককে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সোমবার গভীর রাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সে বিষয়ে ঘোষণাও করেন।

মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। নতুন পুলিশ কমিশনার হচ্ছেন মনোজ কুমার বর্মা। গোয়েলকে স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের প্রধান পদে নিয়োজিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে অভিষেক গুপ্তাকে উত্তর কলকাতার ডেপুটি কমিশনার পদ থেকে সরিয়ে ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসের দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়নের প্রধান করা হয়েছে।

কৌস্তভ নায়েককে স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ ইনস্টিটিউটের নির্দেশক পদ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, দেবাশিস হালদারকে সরিয়ে গণস্বাস্থ্য বিভাগের অফিসার ও স্পেশাল ডিউটি পদে আনা হয়েছে।

এই তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার বলেন, ‘এই পদক্ষেপ আমাদের দাবির ন্যায্যটাকে প্রমাণ করে।’

খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে গাফিলতি, তথ্য লোপাটের পাশাপাশি পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্ট দফতরের একাধিক কর্মকর্তাকে সরানোর দাবি জানিয়েছিলেন কর্মবিরতিতে থাকা জুনিয়র চিকিৎসকরা।

দীর্ঘক্ষণ বৈঠকের পর সোমবার সেই দাবি মেনে প্রশাসনিক রদবদলের প্রতিশ্রুতি দেন মমতা ব্যানার্জি।

সোমবার গভীর রাতে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিনীত (গোয়েল) যেখানে কাজ করতে চেয়েছেন, সেখানে পাঠানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘ওদের (জুনিয়র ডাক্তারদের) চারটি দাবির মধ্যে প্রথমটা (ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত) সিবিআইয়ের হাতে। ওদের বাকি চারটি দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা, ডিসি নর্থকেও সরানো হয়েছে। আমি ওদের কাজে যোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।’

আন্দোলনরত চিকিৎসকরা মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তারা এখনই আন্দোলন তুলে নিচ্ছেন না। সুপ্রিমকোর্টের তরফে একাধিকবার কর্মবিরতি তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা ‘সময়’ নিতে চান। প্রশাসনিক এই বদল বাস্তবায়িত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান তারা।

জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ অনিকেত মাহাত বলেন, ‘আমাদের সাথে মুখ্যমন্ত্রীর সফল বৈঠক হয়েছে। আমাদের দাবির অনেকটাই মেনে নিয়েছেন। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, ডিসি নর্থ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

তবে একে জয় বলে এখনই ভাবতে নারাজ তারা। তিনি বলেন, ‘এটা কিছুটা হলেও আমাদের জয়। আমাদের চিকিৎসকদের এবং আমাদের সাথে যে সাধারণ মানুষরা লড়ছেন তাদের সাফল্য। তবে পথ চলা এখনো বাকি আছে। এই আন্দোলন এখনই থামছে না। যতক্ষণ না আমরা এই অপসারণ বাস্তবায়িত হতে দেখছি ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।’

এখন প্রশ্ন হলো জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের জেরে কেন ‘পিছু হঠল’ রাজ্য সরকার?

‘নমনীয়’ রাজ্য সরকার?
জুনিয়র চিকিৎসকদের টানা আন্দোলন, সেখানে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-সহ সর্বভারতীয় চিকিৎসক সংগঠনের সমর্থন এবং বিপুল পরিমাণে নাগরিক সমাজের সামিল হওয়ার ফলে যে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার সে কথা মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

একইসাথে তাদের অভিমত, দাবি মেনে রদবদলের প্রতিশ্রুতির কিন্তু রাজনৈতিক দিকও আছে।

রাজ্য সরকারের সাথে বৈঠকের প্রসঙ্গ এনে মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের শুনানিতেও প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চকে জুনিয়র চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং।

অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী কপিল সিব্বল আশ্বাস দেন যে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে না রাজ্য সরকার।

তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তে গাফিলতি, তথ্য প্রমাণ লোপাট এবং ১৪ আগস্ট রাত দখলের কর্মসূচি চলাকালীন আরজি কর হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাসহ একাধিক প্রশ্ন তুলে পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি জানানো হয়েছিল।

সম্প্রতি সেই দাবিতে পুলিশের সদর দফতর লালবাজার অভিযানও করেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। পরে সেখানে ২২ ঘণ্টা ধরে ধর্না দেন।

তাদের দাবি, পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করে তাকেই তার ইস্তফা-সংক্রান্ত স্মারকলিপি তুলে দেয়া। তাদের রুখতে বিশাল ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল।

শান্তিপূর্ণ মিছিল আটকাতে এই বিশাল ব্যারিকেড নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে রাজ্য। পুলিশ ও আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মধ্যে ‘স্নায়ু যুদ্ধ‘ চলে পরদিন পর্যন্ত। ধীরে ধীরে ব্যারিকেড সরানো হয়। ওই চিকিৎসকদের সাথে দেখাও করেন পুলিশ কমিশনার।

ওই সময় রাজ্য সরকারের ‘নমনীয়’ ভূমিকাকে অনেকেই ‘নজিরবিহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ নিয়ে রাজি ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। সে কথা তিনি সংবাদ সম্মেলনেও জানিয়েছেন।

তার ব্যাখ্যা ছিল, পুলিশ কমিশনার নিজে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা এখনই সম্ভব নয় কারণ দুর্গাপূজার আগে তাকে সরালে পুলিশের প্রশাসনিক কাজে অসুবিধা হবে।

তবে সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর গলায় অন্য সুর দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘উনি (বিনীত গোয়েল) নিজে জানিয়েছিলেন নানান রকম কথা উঠছে। তার পরিবারও আছে। তাই তিনি পদ ছাড়তে চান।’

সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রবীণ সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিখা মুখার্জি বলেন, ‘যে সিপিকে ছাড়া দুর্গাপূজা হচ্ছিল না, তাকে এখন তিনি সরাচ্ছেন। এখন বলছেন পুলিশ কমিশনারের পরিবার আছে। তাদের কথা শুনতে হচ্ছে তাই তিনি সরছেন। এই বিষয়টা একটু গোলমেলে। আসলে একটা ন্যারেটিভ তৈরির ব্যাপার আছে।’

কাকে বার্তা দিলেন মমতা?
সোমবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো দেশ। একাধিকবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সাথে বৈঠকের চেষ্টা হলেও তা বিফল হয়েছে।

গত সপ্তাহে যে তিনবার নবান্নে বৈঠকের প্রস্তাব এসেছিল তার প্রত্যেকবারই মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য অপেক্ষা করেছেন বলে জানানো হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা এই বৈঠক সরাসরি সম্প্রচারের দাবিতে অনড় থাকায় বৈঠক হয়নি।

এরপর গত শনিবার আচমকাই মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে উপস্থিত হন স্বাস্থ্য ভবনের কাছে আন্দোলনকারীদের ধর্না মঞ্চে। শনিবারই সন্ধ্যায় আরো একবার বৈঠকের চেষ্টা হয়। যা বিফল হয়। কিন্তু তার আগে দীর্ঘক্ষণ নাটকীয় পরিস্থিতি চলেছে।

শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টে এই মামলার শুনানির আগে দু’পক্ষের বৈঠক হয় এবং বেশ কিছু দাবি তিনি মেনে নেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘তৃণমূলের শাসনকালে এই প্রথমবার মমতা ব্যানার্জি মাথা নোয়াতে বাধ্য হলেন কারো সামনে এবং তারা কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নন। জুনিয়র ডাক্তারদের নেতৃত্বে একটা গণ-আন্দোলনের জেরে তিনি পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছেন। এটা সাধারণ মানুষ, যারা এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন তাদেরও জয়।’

এদিকে, একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে শাসকদলের নেতাদের নাম জড়িয়েছে।

তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় একাধিক বিষয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনের তরফে ‘ধামা চাপা’ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সুপ্রিমকোর্টেও রাজ্য সরকারকে একাধিকবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে এ নিয়ে।

এই সমস্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি একটা ‘আস্থার’ অভাব দেখা গিয়েছিল। সেই আস্থা ফেরাতেও এই পদক্ষেপ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সাংবাদিক এবং লেখক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘শাসকের ভুল হলে সেটা শুধরে নেয়াটা দরকার। শুধু তাই নয়, জনমানসে শাসকের প্রতি আস্থার অভাব হলে সেটাও ফিরিয়ে আনতে হবে বৈকি।’

তবে তিনি জানিয়েছেন, এতটা না হলেও মুখ্যমন্ত্রীকে নমনীয় হতে দেখা গেছে।

স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্যের কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে নমনীয় হতে আগেও দেখা গেছে তা সে ভাঙ্গরে ইলেকট্রিক পোল বসানো নিয়ে সমস্যার ক্ষেত্রে হোক বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিকে সরানোর বিষয়ে।’

আবার জুনিয়র ডাক্তারদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের আন্দোলন হয়ে ওঠাও একটা কারণ বলে মনে করেন তিনি।

স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখানে কিন্তু আন্দোলনটা জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সাধারণ মানুষের দাবি হয়ে উঠেছিল। তৃণমূলের ভেতরেও এইটাই চাওয়া হয়েছিল যে তিনি যেন শিক্ষার্থীদের চিকিৎসকদের দাবি মেনে নেন।’

তিনি বলেন, ‘দাবি মেনে ওই কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিচ্ছেন বটে কিন্তু তার নিজের বিশেষ অনাস্থা নেই ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই কথাও জানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। বরং বোঝাতে চেয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা ছোট বলে তাদের দাবি দাওয়া একটু বেশিই মানা হয়েছে। তাই তার আস্থা ভাজনদের প্রতি তার আস্থা যে রয়েই গিয়েছে তা তিনি স্পষ্ট করেছেন।’

রাজনৈতিক কৌশল?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক দিকও রয়েছে। প্রবীণ সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিখা মুখার্জি বলেন, ‘এক ধাপ এগিয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে আসার মতোই এটাও রাজনীতির একটা কৌশল।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী অন্য একটা দিক উল্লেখ করেছেন।

তার মতে, ‘এই ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগের দাবি উঠছিল। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুলিশ-মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগেরও দাবি উঠছিল। পুলিশ কমিশনার এবং ডিসি নর্থকে সরিয়ে তিনি পুলিশ-মন্ত্রীকে বাঁচালেন। আবার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরিয়ে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বাঁচালেন।’

এই সিদ্ধান্তে বদল আসবে কী?
প্রশ্ন উঠেছে যাদের বিরুদ্ধে জুনিয়র ডাক্তাররা অভিযোগ তুলেছেন, দাবি মেনে তাদের অপসারণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাদের অন্যত্র বদলি করা হলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে কিনা?

চিকিৎসক গৌরব রায় বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার বা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাদের অন্যত্র সরানো হবে। দুর্নীতির আঁতুড়ঘর কী আর এতে পরিষ্কার হবে? এই একই কাজ তারা অন্যত্র গিয়ে চালাবেন।’

পুলিশের ডিজি রাজিব কুমারের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন আরজি কর হাসপাতালের সাবেক এই চিকিৎসক। তার কথায়, ‘এর আগেও তো পুলিশ কর্মকর্তা রাজিব কুমারের সময় দেখেছি। সারদা মামলায় তার নাম জড়ালেও পরে তাকে সসম্মানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’

তবে সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে প্রশাসনিক পদক্ষেপও যে ছোট বিষয় নয় তেমনটাই মনে করেন আন্দোলনকারীরা।

ওই আন্দোলনের সাথে যুক্ত অনিকেত মাহাত বলেন, ‘যাদের ইস্তফা চাওয়া হয়েছিল তাদের অন্যত্র সরানো হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এই পদক্ষেপও আমাদের কাছে সদর্থক। এর কারণ, বিনীত গোয়েল যে পদে ছিলেন, তার চেয়ে উচ্চপদ পুলিশে হয় না। যে দু’জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অন্যত্র সরানো হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয়। তাদের বর্তমান পদের যা গুরুত্ব সেখান থেকে তাদের অপসারণ কিন্তু অর্থবহ।’

এই প্রসঙ্গে তার মতামত জানিয়েছেন বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। তার কথায়, ‘একজন কর্মকর্তাকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরানোতে দফতরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সেদিক থেকে কোনো পরিবর্তন হবে বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বদল হবে তেমনটা মনে করি না।’

তিনি বলেন, ‘এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই অপসারণ বা রদবদল বাংলার রাজনীতিতে কোনো বদল আনবে কী? আমার মনে হয় নাগরিক আন্দোলনের এই যে রূপ দেখা গিয়েছে, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা, সেই আন্দোলন যদি চলতে থাকে তাহলে বৃহত্তর পরিবর্তন আসবে। চিকিৎসা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে সেগুলোর বিরুদ্ধে এই আন্দোলন যদি চলতে থাকে, তাহলে গোড়া থেকে পরিবর্তন আসবে। দৃষ্টিভঙ্গির বদল হবে।’

তিনি মনে করেন, ‘নয়ত মুখ্যমন্ত্রীর দাবি মেনে নেয়ায় জুনিয়র চিকিৎসকরা যে জয়ের মুখ দেখতে পেয়েছেন তা আরজি কর হাসপাতালের ঘটনাতেই আটকে থাকবে।’

এই প্রসঙ্গে অনিকেত মাহাত জানিয়েছেন, পরিবর্তন আনতে তারা আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমরা কর্মবিরতি তুলে কাজে ফিরতে প্রথম থেকেই আগ্রহী। সেটা তো আমরা করবই, কিন্তু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এই দুর্নীতি, সিন্ডিকেট এবং থ্রেট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। আমাদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য হাসপাতাল-কলেজেও একই অবস্থা সেটা দূর করতে হবে।’
সূত্র : বিবিসি