১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবি মেনে নিলেন মমতা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি - সংগৃহীত

প্রবল চাপের মুখে পড়ে জুনিয়র ডাক্তারদের অধিকাংশ দাবি মানলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে কাজে ফিরবেন ডাক্তাররা।

কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাড়িতে তার ও প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সাথে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন সন্ধ্যা ৭টায়। ১২টার পর জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বের হন। বাসে উঠে তারা জানান, 'বৈঠক সদর্থক। তাদের প্রায় সব দাবি মানা হয়েছে। পুলিশ কমিশনারকে সরানো হচ্ছে। বাকিটা তারা বিক্ষোভস্থলে জানাবেন।’

মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিকদের জানান, 'মঙ্গলবারের মধ্যে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সরনো হচ্ছে। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাকেও সরানো হবে। তাদের সবাইকে অন্য পদ দেয়া হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, 'আমি ৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নিয়েছি। আর কী করব? এবার আশা করছি, তারা কাজে ফিরবেন।'

মমতা বলেছেন, 'জুনিয়র ডাক্তারদের পাঁচটি দাবি ছিল। তার মধ্যে প্রথমটি সিবিআই ও আদালতের বিষয়ে। বাকি চারটি দাবির মধ্যে তিনটি মেনে নিয়েছে সরকার। বিনীত গোয়েলকে পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। তাকে তার পছন্দের পদ দেয়া হবে। মঙ্গলবার বিকাল ৪টার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।’

মমতা বলেছেন, 'দাবি মেনে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) অভিষেক গুপ্তকে সরানো হচ্ছে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কৌস্তভ নায়েক এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশিস হালদারকেও সরানো হচ্ছে।'

মমতা জানিয়েছেন, 'কাউকে অসম্মান করা হয়নি। চিকিৎসকদের আস্থা নেই বলে ওদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের দাবিমতো হাসপাতালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে।'

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'হাসপাতালের নিরাপত্তা ও নানান সমস্যা দূর করতে মুখ্য। সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করা হবে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের মতামত জানাতে পারেন।'

মমতা বলেন, 'ওদের পক্ষ থেকে ৪২ জন মিনিটসে সই করেছে, আমাদের তরফে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ করেছেন। বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া হচ্ছে। জুনিয়র ডাক্তারদের তাই বলছি, এবার কাজে ফিরুন।'

জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিধাননগরে বিক্ষোভস্থলে এসে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা জানান, 'রাজ্য সরকার আমাদের কাছে নতিস্বীকার করেছে। ৩৮ দিন পর আমাদের জয় হয়েছে। এই জয় সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক, নার্স সকলের। সকলের সমর্থন না থাকলে এটা হতো না।'

তারপরই তিনি জানিয়ে দেন, তারা আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এখনই বিক্ষোভ ও কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন না। সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। তারা সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকেও নজর রাখবেন।

অবশেষে আলোচনা
এর আগে রাজ্য সচিবালয় নবান্ন গিয়েও ফিরে এসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা। বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি সরকার না মানায় তারা বৈঠক না করে চলে আসেন। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের বিক্ষোভস্থলে চলে যান এবং তাদের আলোচনার জন্য বসার অনুরোধ করেন। তারপর তারা কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গেলেও লাইভ স্ট্রিমিং ও ভিডিওগ্রাফি নিয়ে মতবিরোধের জেরে বৈঠক হয়নি।

রোববার রাজ্য সরকারের তরফে আবার বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ আসে। জানিয়ে দেয়া হয়, এটা পঞ্চম ও শেষবারের মতো আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। বৈঠকের কোনো লাইভ স্ট্রিংমিং হবে না। বৈঠকের মিনিটস রাখা হবে। দুই পক্ষ তাতে সই করবেন।

এই শর্তে রাজি হন জুনিয়র ডাক্তাররা। বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল ৫টায়। সইসাবুদ পর্ব মিটতে বেশ কিছুটা সময় যায়। তারপর প্রায় ৭টা নাগাদ তা শুরু হয়। রাত ১২টা নাগাদ জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বের হন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement