ভারতে ‘দীর্ঘ’ আটকের প্রতিবাদে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনশন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৪
মিয়ানমারের এক শ’র বেশি নারী ও শিশুসহ রোহিঙ্গা মুসলমানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এক শিবিরে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখার প্রতিবাদে সোমবার থেকে তারা অনশন করছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন দমনপীড়নের পর ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়েছেন। তাদের ঘরে ফেরার আশা খুব কম। মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব ও প্রাথমিক অধিকার ব্যাপকভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।
ভারতের অঙ্গরাজ্য অসমের মাটিয়া ট্রান্সিট শিবিরে বিক্ষোভের সাথে সম্পৃক্ত এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘এই বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন প্রায় ১০৩ জন রোহিঙ্গা মুসলিম, ৩০ জন খ্রিস্টান চিন শরণার্থী (এরাও মিয়ানমারের বাসিন্দা)।
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) দেয়া শরণার্থী শংসাপত্রও রয়েছে অনেকের।
ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করা নথিবিহীন অভিবাসন-প্রত্যাশীদের জন্য ওই দেশের সবচেয়ে বড় ডিটেনশন কেন্দ্র এটি।
ওই ব্যক্তি বলেন, ‘অনেকের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তারপরও তারা ডিটেনশন কেন্দ্রে আটক রয়েছেন। তারা অপরাধী নন, তারা নির্যাতন এড়াতে পালিয়ে এসেছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ৩৬ জন রোহিঙ্গা বিক্ষোভকারীর ইউএনএইচসিআরের শংসাপত্র রয়েছে।
ব্যক্তিটি আরো বলেন, ‘জেলের অবস্থা ভালো নয়। আত্মীয়রাও সেখানে দেখা করতে যেতে পারেন না…তারা শুধুমাত্র মুক্তি চান এবং যেখানে জীবনের মান ভালো সেখানে চলে যেতে চান।’
ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা চাইছেন, তাদের ইউএনএইচসিআরের হাতে তুলে দেয়া হোক এবং তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন দেয়া হোক।
তিনি আরো বলেন, গত কয়েক মাস ধরে তারা অসম সরকারকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য চিঠি লিখেছেন।
অসমের সবচেয়ে সিনিয়র আমলা রবি কোটা বলেন, ‘তারা মুক্তির দাবি করছেন।’
তিনি যোগ করেন, ‘তাদের সমস্যা বুঝতে’ ও এই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে রাজ্য সরকার কারা ও অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের শিবিরে পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘একক আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতেই সকলে আটক হয়ে নেই। তাই আমরা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করছি এই নির্দেশিকাগুলো কী, অভিযোগগুলো কী এবং আইনি অবস্থাটাই বা কী।’
শরণার্থীদের প্রাথমিকভাবে কতদিন শিবিরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারেনি রয়টার্স।
ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে বলেছে, গোটা ভারতে অভিবাসন ডিটেনশন কেন্দ্রে ৬৭৬ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন এবং এদের মধ্যে ৬০৮ জনের বিরুদ্ধে চলমান কোনো বকেয়া মামলা বা দণ্ডাজ্ঞা নেই।
তারা বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক আইন ও আদর্শ বজায় রেখে ইউএনএইচসিআর অবস্থান নিচ্ছে যে, আশ্রয়প্রার্থীদের আটক শেষ পথ হিসেবে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ হওয়া উচিত।’
তারা আরো যোগ করেছে, সকল আশ্রয়প্রার্থী ও ডিটেনশন কেন্দ্রে আটক শরণার্থীদের পরিস্থিতি সমাধান করতে ইউএনএইচসিআর নয়াদিল্লির সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।
অধিকার গোষ্ঠী রোহিঙ্গা মানবাধিকার উদ্যোগ (আরফোরআর) জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে ভুগছে, তাদের পানির অভাব রয়েছে এবং শিবিরে তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হয়।
আরফোরআরের প্রধান সাবরে কাইও মিন বলেন, ‘আমাদের মানুষগুলো গণহত্যা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়েছেন। যে দেশে তারা আশ্রয় চেয়েছিল সে দেশে তারা বন্দি হলেন।’
বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকে এই শরণার্থীদের মুক্তি দিতে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করে বলেছে, তাদের আটক ‘গুরুতর অন্যায়।’
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা