২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভারতে এবার ৭ বছরের মুসলিম ছাত্রের টিফিন নিয়ে বিতর্ক

তিন সন্তানের সঙ্গে সাবরা বেগম। - ছবি : বিবিসি

বছর সাতেকের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে বোমা মেরে স্কুল উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ করে চলেছেন বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ। পাশেই তার কথার সাথে সুর মেলানো শিক্ষকরা এবং বেশ কয়েকজন খুদে পড়ুয়া।

ছাত্রের মা তাদের সাথে সমানে তর্ক করে চলেছেন। অধ্যক্ষ ওই শিশুকে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন এবং অন্য শিক্ষকরা ছাত্রের মাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন এই দৃশ্যগুলোই ফুটে উঠেছে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া দুটি ভিডিওতে।

ঘটনাটা উত্তর প্রদেশের আমরোহা জেলার একটা বেসরকারি স্কুলের। এই ভিডিও দুটো ভাইরাল হওয়ার পর একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আমরোহার হিল্টন সিনিয়র সেকেন্ডারি বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অবনীশ শর্মা সাত বছরের ওই বালকের বিরুদ্ধে ‘স্কুলের ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা, টিফিনে আমিষ খাবার আনা এবং মন্দির ভেঙে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা পোষণ করার’ মতো অভিযোগ করছেন।

ছাত্রের অভিভাবক অবশ্য এই সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়ে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন শিশুর সাথে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয়েছে।

অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের একটা কমিটি এই ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

তদন্ত কমিটি জানিয়েছে যে স্কুলের অধ্যক্ষ ওই শিক্ষার্থী এবং তার মায়ের সাথে কথোপকথনের সময় যে ভাষা ব্যবহার করেছিলেন, তা ‘অনোপযুক্ত’ ছিল।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত হিল্টন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল বা তার অধ্যক্ষ অবনীশ শর্মার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

আমরোহার জেলা স্কুল ইন্সপেক্টর বিপি সিং বিবিসিকে জানিয়েছেন, স্কুলকে ‘শোকজ’ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

একই সাথে স্কুলের ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে অনুরাগ সাইনি অধ্যক্ষকে ‘শো কজ’ নোটিশ পাঠিয়ে সাত দিনের মধ্যে তার জবাব দিতে বলেছেন।

উল্লেখ্য, হিল্টন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মঙ্গল সিং সাইনি বিজেপির মন্ত্রী ছিলেন। তার ছেলে অনুরাগ সাইনি অবশ্য কয়েক বছর আগে সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।

তবে এই স্কুলকে কেন্দ্র করে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার মাঝেই গত ৯ সেপ্টেম্বর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য?
যে খুদে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অধ্যক্ষকে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলতে দেখা গিয়েছিল ওই ভিডিওতে, তার বাড়ি স্কুল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে।

সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ঘিঞ্জি জায়গায় তৈরি একটা তিনতলা বাড়ির বাইরে বসে আছেন বহু স্থানীয় নেতা ও কর্মী। বাড়ির ছাদে ছাত্রের মা সাবরা বেগমকে ঘিরে রয়েছেন সাংবাদিক ও স্থানীয় রাজনীতিবিদরা।

অনেক নেতাই শিশুর সাথে দেখা করে কথা বলতে চাইছেন। এদিকে বছর সাতেকের ওই ছাত্র মায়ের আঁচলের তলায় লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার মা সাবরা বেগম বললেন, ‘কিচ্ছু হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে।’

এরই মাঝে নেতারা ওই বালককে বারবার জিজ্ঞাসা করলে সে শুধু বলে, ‘আমি বড়ির (সোয়াবিন) বিরিয়ানি নিয়ে গিয়েছিলাম।’

এটুকু কথা বলেই চুপ করে যায় সে। স্থানীয় নেতারা মা ও শিশুর সাথে ছবি তুলে যাওয়ার সময় বলে যান, ‘ভয় পাবেন না, আমরা সবাই আপনাদের সাথে আছি।’

স্কুলের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ জন্মেছে। এই পরিবারের খবরাখবর নিতে এসেছিলেন দুই মুসলিম তরুণ।

তারা বলেন, ‘আমরোহা একটা মুসলিম জনসংখ্যা বহুল শহর। এখানে যদি কোনো মুসলমান শিশুকে এমন ঘটনার শিকার হতে হয় তাহলে অনুমান করা যায় যে যেখানে মুসলমানদের জনসংখ্যা কম সেখানে তাদের অবস্থা কী।’

একইসাথে ওই দুই তরুণ বলেছেন, 'আমরোহার স্কুলে একজন শিশুর প্রতি এই অবিচার বরদাস্ত করা হবে না।’

শিশুর মা কী বলছেন?
সাবরা বেগমের তিনজন সন্তানই হিল্টন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে পড়ে। বড় ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যে শিশুকে দেখা গিয়েছে সে তৃতীয় শ্রেণিতে এবং তার ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

ওই ঘটনার পর থেকে তার তিনজন সন্তানই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

সাবরা বেগম বলেন, 'সেদিন বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে দেখলাম ওর মুখ লাল হয়ে আছে। ও কিছু বলছিল না। একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল ওকে। আমি ওর ক্লাস টিচারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু উনি কিছু বলেননি।’

সাবরা বেগম জানিয়েছেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিও মধ্যে যেটা ক্লাসে রেকর্ড করা, সেটা ২ সেপ্টেম্বরের। আর অধ্যক্ষের সাথে তার তর্কাতর্কির ভিডিও পরদিন সকাল অর্থাৎ ৩ সেপ্টেম্বরের।

সাবরা বেগম বলেন, 'আমি যখন সন্তানের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসা করি, তখন তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং স্কুল থেকে সন্তানের নাম কেটে দেয়ার হুমকি দেন।’

ছাত্রের মা বলেন, 'ওরা বলছে আমার বাচ্চা স্কুল উড়িয়ে দেবে। ও নাকি হিন্দু বাচ্চাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার কথা বলে। আমিষ খাবার নিয়ে আসে।’

'ওরা কীভাবে সাত বছরের একটা বাচ্চাকে নিয়ে এমন কথা বলতে পারে?’

সাবরা বেগম জানিয়েছেন, ক্লাসরুমে তার ছেলেকে অধ্যক্ষ যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন তার ভিডিও দেখে বুক কেঁপে উঠেছিল।

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেছেন, 'একজন শিশুর বিরুদ্ধে কী করে এমন অভিযোগ উঠতে পারে? এত ছোট একটা বাচ্চাকে এই ধরনের প্রশ্ন কেউ কীভাবেই বা করতে পারে?’

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা সাবরা বেগম তার সন্তানরা বড় হওয়ার পর এখন আবার পড়াশোনা শুরু করছেন। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নার্সিং কোর্স করছেন তিনি।

নার্স হওয়ার প্রস্তুতি নেয়া এই মা চান তার বড় ভবিষ্যতে ছেলে ডাক্তার হোক। ছেলেও একই স্বপ্ন দেখে।

তার কথায়, 'আমার ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। তাই এত ব্যয়বহুল একটা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে আমরা আমাদের তিন সন্তানকে পড়াচ্ছি। স্কুলের বেতন দেয়া আমাদের পক্ষে সহজ নয়, তা সত্ত্বেও আমরা সাহস দেখিয়ে এগিয়েছি। কিন্তু এখন এই স্কুলের পক্ষ থেকে আমার ছেলের বিরুদ্ধে একটা এত গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমার সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।’

সাবরা বেগম আরো মনে করেন, মুসলমান বলেই তার সন্তানের সাথে এমন আচরণ করা হয়েছে।

তার অভিযোগ, 'যদি এটা যদি হিন্দু-মুসলিমের বিষয় না হয় তাহলে স্কুলের অধক্ষ্য এই ধরনের কথা কেন বলছেন? এর সহজ অর্থ হলো, ওরা নিজেরাই হিন্দু-মুসলমান (ভাগ) করছে।’

অধ্যক্ষ কী বলছেন?

ভাইরাল ভিডিওতে শিশুর প্রতি বিদ্যালয়ের অধক্ষ্য অবনীশ শর্মার যে আচরণ দেখা গিয়েছে সে তাকে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। শর্মা বলেছেন, 'আমার দুঃখ ও অনুশোচনা তো রয়েছে, কিন্তু ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে সেটা ঘটনাক্রমের পুরোটা নয়।’

'ভাইরাল ভিডিও এডিট করা এবং ছেঁটে ফেলা হয়েছে। আমি কখনো কোনো শিশুকে আতঙ্কবাদী (সন্ত্রাসী) বলিনি।’

তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে তোলা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, তিনি ধর্মের ভিত্তিতে কখনও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য করেননি।

অবনীশ শর্মা ব্যাখ্যা করেছেন গত ২৫ বছর ধরে তিনি শিক্ষার ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত রয়েছেন এবং গত ১২ বছর ধরে এই স্কুলের অধ্যক্ষ পদে আছেন। ।

তার কথায়, 'আমি হিন্দু। আমি একজন হিন্দুত্ববাদীও, কিন্তু কারো সাথে বৈষম্য করি না। উল্টে সবার প্রতি ভালবাসা দেখাই। আমি যদি বৈষম্য করতাম বা বিদ্যালয়ে যদি কোনো ধরনের বৈষম্য থাকত, তাহলে স্কুলের ৪০ শতাংশ শিশু মুসলমান হতো না।’

যদিও যে এলাকায় এই স্কুল, সেটা মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল।

অবনীশ শর্মার দাবি, তার স্কুলের বিরুদ্ধে আগে কখনো এমন অভিযোগ ওঠেনি এবং বাকি মুসলিম ছাত্রদের অভিভাবকেরা এই বিদ্যালয় নিয়ে নিয়ে সন্তুষ্ট।

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এক ডজনেরও বেশি মুসলমান পড়ুয়ার অভিভাবক এই ঘটনার তদন্তের জন্য তৈরি কমিটির সামনে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে তারা (অভিভাবকরা) জানিয়েছেন, তাদের সন্তানদের সাথে স্কুলে কখনো দুর্ব্যবহার করা হয়নি।

এই ঘটনায় বিবাদের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শর্মা জানিয়েছেন, ওই ছাত্রের ক্লাসের একাধিক সহপাঠীর বাবা-মা অভিযোগ করেছেন যে ছেলেটা স্কুলে আমিষ টিফিন নিয়ে আসে এবং ক্লাসের অন্য বাচ্চাদের ‘মুসলমান বানিয়ে দেয়ার’ কথা বলে।

তার কথায়, 'অন্য অভিভাবকদের তোলা এই অভিযোগগুলোর তদন্ত করার জন্য, আমি ক্লাসে গিয়েছিলাম এবং অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে কথা বলে অভিযোগের বিষয়টা নিশ্চিত করেছি। ক্লাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে ওই ছাত্র এইসব কথা বলে থাকে।’

স্কুলের অধ্যক্ষের দাবি খারিজ করে পড়ুয়ার মা সাবরা বেগম বলেন, তার সন্তান কখনো স্কুলে আমিষ খাবার নিয়ে যায়নি।

অন্যদিকে, অবনীশ শর্মা জানিয়েছেন, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) বা কোনো রাজ্যের বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের আওতায় কী ধরনের খাবার টিফিনে আনা উচিত বা উচিত নয়, সে বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ না থাকলেও হিল্টন স্কুলের নিজস্ব নিয়ম নির্ধারণ করে বিদ্যালয়ে আমিষ খাবার আনা নিষিদ্ধ করেছে।

তার যুক্তি, 'বাচ্চারা বাড়িতে কী খাবে সেটা তাদের পছন্দ। তবে আমাদের স্কুলের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা মেনে নিয়েছেন।’

আইন কী বলছে?
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে বলছেন, 'সুপ্রিম কোর্ট বলছে যেকোনো ব্যক্তি কী পরিধান করবেন, কী খাবেন এবং কাকে ভালবাসেন সেটা তার মৌলিক অধিকার।’

‘শিশুরও সেই অধিকার রয়েছে। স্কুলের নিয়ম থাকলেও সেখানে আমিষ আনা যাবে না এই বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।’

একই সাথে তিনি বলছেন, 'স্কুলের যদি (আমিষ এবং নিরামিষ সংক্রান্ত) এমন নিয়ম থাকে তাহলে এটাও থাকা উচিৎ কেউ আমিষ খাবার আনলে তার শাস্তি থাকবে, বা কোনো জরিমানা থাকবে। কিন্তু স্কুল থেকে বহিষ্কার করা একটা দাগের মতো। এটা শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য ভাল নয়।’

এই আইনজীবী যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন এই ঘটনাবলী ছাত্র বা স্কুল কারো পক্ষেই কিন্তু ভাল নয়।

সঞ্জয় হেগড়ে বলছেন, 'এই ধরনের অভিযোগ একেবারেই অন্যায়। এতে মিলে মিশে থাকা মানুষের সদ্ভাবের ওপর প্রভাব পড়বে।’

‘ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিৎ। সিবিএসই চাইলে তাদের নিয়ম অনুযায়ী এই স্কুলের স্বীকৃতিও বাতিল করতে পারে।’

আমরোহা জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

আমরোহা মিশ্র জনসংখ্যার শহর এবং এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সব সময়েই দেখা গিয়েছে। উদাহরণ দিয়ে আমরোহার জেএস হিন্দু কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মহেশ শরণ জানিয়েছেন, আশেপাশের জেলাগুলোতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলেও আমরোহা বরাবরই শান্তিপূর্ণ থেকেছে।

তার কথায়, 'একজন শিক্ষকের কাছে প্রত্যেক শিশু সমান, তা সে হিন্দু, মুসলিম বা অন্য যেকোনো ধর্মের হোক না কেন। এই ধরনের ঘটনা অবমাননাকর এতে যে পরিবেশ তৈরি হয় তা শিশু ও সমাজকে নষ্ট করে।’

'এটা অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা। স্থানীয় প্রশাসনের একে গুরুত্ব সহকারে দেখা এবং এমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত যাতে অন্য কোনো স্কুলে অন্য কোনো বাচ্চার সাথে এমন ঘটনা না ঘটে।’

রাজনৈতিক দোষারোপ

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরে রাজনীতিও চরমে উঠেছে। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রের সাথে দেখা করতে আসা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এর এক নেতা বলেন, 'আমাদের দল সঠিক স্তরে এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।’

একই সাথে নাগিনার সংসদ চন্দ্র শেখর আজাদের দলের কর্মীরা জেলা সদরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। স্কুলের অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করার দাবিতে সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটা স্মারকলিপিও জমা দেন।

ওই ছাত্রের পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও এখনো পর্যন্ত কোনো এফআইআর দায়ের করা হয়নি। পুলিশ সুপার কুনওয়ার অনুপম সিং এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।ঘটনাটাকে শিক্ষা বিভাগের বিষয় বলে অভিহিত করেন।

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বিভি সিং বলেন, 'আমরা তদন্ত করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। পরবর্তী পদক্ষেপ তাদের নিতে হবে।’

এটা যেহেতু শিশু অধিকার সম্পর্কিত বিষয়, তাই বিবিসির পক্ষ থেকে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল যে ঘটনা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ করছেন কি না।

তবে তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

‘ভলান্টিয়ার্স এগেনস্ট হেট’-এর আহ্বায়ক ডা. মেরাজ হুসেন বলছেন, 'এতদিনে এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করা উচিত ছিল। অধক্ষ্যকে গ্রেফতারও করা উচিত ছিল।’

তিনি বলেন, 'অধ্যক্ষ আদালতে তার পক্ষ উপস্থাপনের সুযোগ পেতেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সংখ্যালঘু কমিশন ও শিশু কমিশনেরও বিষয়টাকে তাদের নজরে নেয়া উচিত ছিল, কিন্তু এখনো তা হয়নি।’

মেরাজ হুসেন প্রশ্ন করেন, 'যদি এই শিশু মুসলমান না হতো এবং শিক্ষক হিন্দু না হতেন তাহলে এতদিনে উত্তর প্রদেশের সরকার এই বিষয়ে এতদিনে পদক্ষেপ নিয়ে নিত।’

‘এটা ধর্মীয় বিষয় নয়, এটা একজন শিক্ষার্থীর অধিকারের প্রশ্ন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শিক্ষার্থীর অধিকার রক্ষায় এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে শাস্তি দিতে কেউ এগিয়ে আসেনি।’

ছাত্রের মা সাবরা বেগম এখন আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, 'প্রশাসন যদি আমার সন্তানের প্রতি সুবিচার না করে, তাহলে আমি আদালতে যাব। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টেও যাব।’

‘এটা আর এখন শুধুমাত্র আমার সন্তানের বিষয় নয়, স্কুলে যাওয়া প্রত্যেকটা বাচ্চার বিষয়।’

এই সব কিছুর মধ্যে এখনো আতঙ্কে রয়েছে ওই খুদে ছাত্র। বারবার জিজ্ঞেস করে চলেছে তার পড়াশোনা আবার কবে শুরু হবে।

তার অন্য দুই ভাইও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement