গঙ্গা ও তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ক্ষোভ মমতার
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৯
পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশের সাথে পানিবণ্টন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, 'ফারাক্কা ব্যারেজ কমিউনিটি মানুষের জীবন-জীবিকার উপর নির্ভরশীল। আমিও বাংলাদেশকে দিয়েছি। কিন্তু আমি বাংলার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেব। কারণ, এখানকার মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য কেন্দ্র অগ্রিম চুক্তি করে দিচ্ছে। বাংলা কোনো আলোচনায় থাকতে পারছে না।’ আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পানি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে দৃশ্যত পানিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সোমবার বিধানসভায় তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, বিধানসভা থেকে একটি কমিটি পানি নিয়ে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় সেচ মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেই সাথে লোকসভা এবং রাজ্যসভা থেকে তৃণমূলের সংসদীয় দলও যাবে সেচ মন্ত্রণালয়ে। বন্যার সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকেও কথা বলে এসেছেন বলে জানিয়েছেন মমতা।
সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। একাধিক বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রধান প্রসঙ্গ ছিল পানিবণ্টন। ডিভিসির পানি ছাড়ার বিরোধিতা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ এবং ভুটানের নদী প্রসঙ্গ তুলেছেন। জানিয়েছেন, ভুটানের ছাড়া পানিতে প্রতি বছর উত্তরবঙ্গের ক্ষতি হয়। পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়েই কেন্দ্র তাতে সম্মতি দিয়ে দেয়। এবার ভারত-বাংলাদেশ নদী কমিশনের আদলে ভারত-ভুটান নদী কমিশন গড়ে তোলার কথা বলেছেন মমতা। নীতি আয়োগের বৈঠকেও সেই প্রস্তাব জানিয়ে এসেছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘নীতি আয়োগের বৈঠকে ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন নিয়ে আমি বিশদে কথা বলে এসেছি। পশ্চিমবঙ্গ হলো নৌকার মতো। সব পানি আমাদের রাজ্যে এসে পড়ে। আমাদের ভুগতে হয়। বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রেকর্ড করে এসেছি।’
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ভুটান এবং সিকিমে বৃষ্টি হলে উত্তরবঙ্গে ক্ষতি হয়। ভুটান থেকে কেন্দ্রকে জানানো হয়, কিন্তু রাজ্যকে জানানো হয় না। বন্যায় বনভূমি, চা-বাগান শেষ হয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণ ভেসে যাচ্ছে। পানিচুক্তি নিয়ে দিল্লিতে আমি নিজের অবস্থান জানিয়ে এসেছি।’
বন্যার প্রসঙ্গে বাজেটে বঞ্চনার কথাও বলেন মমতা। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির জন্য বিহার এবং আসামকে টাকা দেয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গকে কিছু দেয়া হয়নি। যা নিয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার কথায়, ‘বন্যা নিয়ে বাজেটে বিহার, অসমকে টাকা দেয়া হলো। পশ্চিমবঙ্গ কিছু পেল না। বিজেপি সরকারকে সেলাম।’
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনা না করে বিভিন্ন চুক্তি করা, চুক্তি নবীকরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মমতার। তিনি বলেন, ‘ফারাক্কা চুক্তি আবার নবীকরণ করেছে। তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি সরকার। এই সংক্রান্ত বিষয়ে অনলাইনে সতর্কবার্তা দেয়া যায়। কিছুই করা হয়নি। ২০২৬ সালে ফারাক্কা চুক্তি নবীকরণ হবে। ২০২৪ সালেই ঠিক করে দেয়া হচ্ছে কমিটি। যে কমিটি পাঠানো হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রের ৯ জন এবং রাজ্যের একজন প্রতিনিধি রাখা হচ্ছে।’
তিস্তা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘সিকিম ১৪ হাইড্রোপাওয়ার করে তিস্তার জল অনেকটাই নিয়ে নিয়েছে। প্রতি বছর দার্জিলিং, কালিম্পং পানিতে ভেসে যায়। তিস্তা বন্ধ করে দিলে তো উত্তরবঙ্গ খাবার পানি, সেচের পানি পাবে না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে পানিচুক্তির বিষয়ে এপার বাংলার স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘ফারাক্কা ব্যারেজ কমিউনিটি মানুষের জীবন-জীবিকার উপর নির্ভরশীল। আমিও বাংলাদেশকে দিয়েছি। কিন্তু আমি বাংলার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেব। কারণ, এখানকার মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য কেন্দ্র অগ্রিম চুক্তি করে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ কোনো আলোচনায় থাকতে পারছে না।’
মালদহে প্রতি বছর ভাঙনের প্রসঙ্গও বিধানসভায় তুলে ধরেছেন মমতা। বলেছেন, ‘ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে বন্যা হলে মালদহে ভাঙন হচ্ছে। ২০০৫ সাল থেকে ৩,৩৭৩ হেক্টর জমি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। রতুয়া, কালিয়াচকে ভাঙন বাড়ছে। ১৯৯৬ সালে এই চুক্তি করার সময় জ্যোতি বসুর সাথে আলোচনা করেছিল কেন্দ্র। পরে তাকে বাংলাদেশ সংবর্ধনাও দেয়। কিন্তু এবার বাংলাকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। ফারাক্কা ব্যারেজের পাড় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আগে পালন করুক কেন্দ্র। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করুক।’
পানি-সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, ভবিষ্যতে এর সমাধান কিভাবে করা যায়, তার উপায় বলে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘নদী সংক্রান্ত বিষয়ে সেচসচিব প্রতি দিন আমাকে জানান। আমি সব খবর রাখি। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিই। ৫০০ কোটি টাকার বাঁধ আমরা নির্মাণ করেছি। ‘পানি ধরো পানি ভরো’ প্রকল্পে পাঁচ লক্ষের বেশি পুকুর কেটেছি। ২,২৩২ কোটি টাকা খরচ করে লোয়ার দামোদর বেসিন করেছি। এতে বর্ধমানে বন্যা কমবে।’ ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পানি নিয়ে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব, জানান মমতা। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানান। পাশাপাশি কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে তার মন্তব্য, ‘শুনলাম ডিভিসির বেসরকারিকরণ হচ্ছে? রেল থেকে জেল, সব ওরা বেসরকারি করে দেবে। দেশের ঐক্যকেও বেসরকারি করে দেবে।’
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, পানি নিয়ে রাজ্যের প্রস্তাব কেন্দ্রকে জানাতে বিধানসভার কমিটি যাবে সেচ মন্ত্রণালয়ে। মমতার বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর বিধানসভার স্পিকার জানান, পরিষদীয় মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে এই কমিটি গঠন করা হবে। বিধানসভায় যা আলোচনা হল, তার কপি দলের এমপিদের কাছেও পাঠিয়ে দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, রাজ্যসভা এবং লোকসভা থেকে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল পানি-সমস্যা নিয়ে দিল্লিতে যাবে।