পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের ৫ মুসলিমপ্রধান জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাবি!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:১৯
ভারতের উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভাগ না চাইলেও উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে জোড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বুধবার। স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছেন তিনি। তা নিয়ে তৃণমূলের তরফে তোলা ‘বাংলা [পশ্চিমবঙ্গ] ভাগের চক্রান্ত’ অভিযোগে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই নতুন ‘অস্বস্তি’ বিজেপির। এবার ঝাড়খণ্ডের বিজেপি এমপি লোকসভায় নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘জনবিন্যাসের ভারসাম্য’ বজায় রাখার কারণ দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ জেলাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দেওয়া হোক। সেই সাথে বিহারের কিষাণগঞ্জ, অরারিয়া এবং কাটিহার জেলাকেও ওই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অন্তর্গত করা হোক।
দাবিদার ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বিজেপি এমপি নিশিকান্ত। প্রসঙ্গত, এই নিশিকান্তই প্রথম কৃষ্ণনগরের তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ‘অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন’ করার অভিযোগ তুলেছিলেন। যার জেরে গত লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হতে হয় মহুয়াকে। এবার নিশিকান্ত লোকসভাতেই পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের পাঁচটি মুসলমান প্রধান জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের দাবি তুলেছেন।
বৃহস্পতিবার লোকসভার জিরো আওয়ারে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের উল্লিখিত জেলাগুলোতে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের কারণে জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নিশিকান্ত। সেই সাথে দাবি করেন, ‘ওই জেলাগুলোকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে এনআরসি কার্যকরের উদ্যোগ নিক কেন্দ্র।’ তিনি দাবি করেন, তার রাজ্য ঝাড়খণ্ডে আদিবাসী জনসংখ্যা ১০ শতাংশ কমে গিয়েছে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের সাথে আদিবাসী মহিলাদের বিবাহের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন নিশিকান্ত। তিনি বলেন, ‘আমি সাঁওতাল পরগনা থেকে এসেছি। যখন বিহার থেকে ভেঙে ওই এলাকাকে ঝাড়খণ্ডে যুক্ত করা হয়, তখন আদিবাসী জনসংখ্যা ছিল ৩৬ শতাংশ। এখন তা ২৬ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এটা হয়েছে ভোটব্যাংক রাজনীতির কারণে। জেএমএম সরকার কোনো পদক্ষেপ না করায় আমাদের এলাকায় বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।’
ওই অভিযোগের পাশাপাশিই নিশিকান্ত বলেন, ‘মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ থেকে লোক এসে হিন্দুদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে। ঝাড়খণ্ড পুলিশ কোনো কাজ করছে না। আমার অনুরোধ মালদহ, মুর্শিদাবাদ, আরারিয়া, কিষাণগঞ্জ এবং কাটিহার নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হোক। নইলে হিন্দু আর থাকবে না। এনআরসি চালু করুন। কিছু করতে না পারলে আগে কমিটি পাঠান। ধর্মান্তরণ এবং বিবাহের ক্ষেত্রে অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হোক।’
তার বক্তব্যে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল সরকারের নামও টেনে আনেন নিশিকান্ত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশ সুনিশ্চিত করতে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ মালদহ ও মুর্শিদাবাদে গ্রামের পর গ্রাম খালি করে দিচ্ছে।’ একই সঙ্গে তিনি জানান, তার বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হলে তিনি পদত্যাগ করতেও তৈরি।
সুকান্তের মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের পরে সরাসরি রাজ্যের দুই জেলা সম্পর্কে নিশিকান্তের এমন প্রস্তাবের নিন্দায় সরব তৃণমূল। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘বিজেপি বাংলায় কিছু করতে পারছে না। হারাতে পারছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সে কারণেই এ সব করছে। জঘন্য কথা সব! নিশিকান্ত দুবে যা বলছেন, এর চেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক কথা আমি শুনিনি। এমন চললে তো দেশে আর একটা পাকিস্তান হয়ে যাবে! আমরা সর্বশক্তি দিয়ে এর বিরোধিতা করব।’
সুকান্তকেও আক্রমণ করে সৌগত বলেন, ‘সুকান্ত বলছেন, উত্তরবঙ্গকে আলাদা করতে হবে। ইনি (নিশিকান্ত) বলছেন, মুসলিম জেলাকে আলাদা করতে হবে। এগুলো বাংলাকে ভাগ করার চক্রান্ত। আমরা এ সব হতে দেব না।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা