পশ্চিমা বিশ্বের কাছে মোদির রাশিয়া সফরের তাৎপর্য কী?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ জুলাই ২০২৪, ২১:৫২
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা।
ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে সামরিক ও অন্য সাহায্য প্রদানের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে। সেই সময়ে যেকোনো ইউরোপীয় নেতার রাশিয়া সফরকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে দেখা হতে পারে।
উল্লেখ্য, ইউরোপে হাঙ্গেরিকে একটা পৃথক ধরনের দেশ হিসেবে দেখা হয়। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী অরবানকে অনেকে একনায়ক হিসেবে বিবেচনা করেন।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও রাশিয়া সফরে গিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল এই আবহে প্রধানমন্ত্রী মোদির ৮ ও ৯ জুলাইয়ের এই সফরকে পশ্চিমা দেশের নেতারা কী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবেন?
ভারতে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এটা তার প্রথম রাশিয়া সফর।
রাশিয়া সফর নিয়ে পশ্চিমা দেশের মনোভাব
এখনো পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা নরেন্দ্র মোদির রুশ যাত্রা নিয়ে সে অর্থে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে বৃহস্পতিবার ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি জানিয়েছেন, ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে একজোট হয়ে রাশিয়াকে জবাবদিহি করানোর বিষয়ে তার দেশ ভারতের সাথে লাগাতার যোগাযোগ রাখছে।
এখন এই বিষয়টা স্পষ্ট যে নরেন্দ্র মোদি ও ভ্লাদিমির পুতিনকে একসাথে দেখে যুক্তরাজ্য বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই খুশি হবে না। কারণ ওই দুই দেশই মনে করে ইউরোপে অস্থিরতার কারণ হল ইউক্রেনে রুশ হামলা। এবং এর জন্য দায়ী রাষ্ট্রপতি পুতিন।
আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হচ্ছে, ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে ২২তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়া সফরে গিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
গত তিন বছরে এই দুই দেশের মধ্যে শীর্ষতম পর্যায়ে কোনো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়নি।
সম্ভাব্য আলোচনাসূচি
দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে সে প্রসঙ্গে রাশিয়া জানিয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিন এবং নরেন্দ্র মোদি ভারত এবং রাশিয়ার ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো মজবুত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক যেসমস্ত প্রাসঙ্গিক বিষয় রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করবেন।
এদিকে নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফর একাধিক পশ্চিমা দেশের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আর কী অর্থ হতে পারে, সে বিষয়ে সন্দিহান ওই দেশগুলো।
লন্ডনের কিংস কলেজে ‘সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ’-এর প্রফেসর ক্রিস্টোফ জাফরেলট জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির রাশিয়া সফরের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে।
তার মতে,‘ভারত রাশিয়ার সাথে তার সম্পর্ক গড়ে তুলতে খুবই আগ্রহী। এবং সেটা শুধুমাত্র তাদের (ভারতের) সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতার কারণেই নয়, ভারত একটা বহুমেরু বিশ্বকে তুলে ধরতে চায় যেখানে তারা (ভারত) সমস্ত অংশীদারদের সাথে তার নিজের স্বার্থ প্রচার করার মতো অবস্থায় আছে।’
মোদির রাশিয়া সফর
অধ্যাপক জাফরেলট মনে করেন রাশিয়ার সাথে চীনের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার সাথেও এই সফরের একটা যোগ রয়েছে।
ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করে সে দেশের (রাশিয়া) সাথে চীনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ‘কমানো’ যেতে পারে বলে তার অভিমত।
২০১৯ সালে একটা অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়ার শহর ভ্লাদিভোস্টকে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
ভ্লাদিমির পুতিন শেষবার দিল্লি সফরে এসেছিলেন ২০২১ সালে। সে বছর ভারতে আয়োজিত হয়েছিল ২১তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন।
রাষ্ট্রপতি পুতিন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল উজবেকিস্তানে ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’ বা এসসিও-র শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন ২০২২ সালে।
উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগে (৩ ও ৪ জুলাই) অনুষ্ঠিত এসসিও-র ২৪তম শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি যোগ দিলেও নরেন্দ্র মোদি যাননি।
ভারত, রাশিয়া, চীন, ইরান এবং মধ্য এশিয়ার কিছু দেশ এসসিও-র সদস্য। এই সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বৈঠকে যোগ দিলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিন্তু নিজে তাতে যোগ দেননি।
তার পরিবর্তে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ওই বৈঠকে ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা না হলেও পূর্বনির্ধারিত রাশিয়া সফরে এর ‘ক্ষতিপূরণ’ দেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কানওয়াল সিব্বল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছিলেন, ‘সংসদে অধিবেশন থাকায় এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী মোদি। জুলাই মাসে রাশিয়া সফরে গিয়ে এর ক্ষতিপূরণ করা হবে।’
এসসিও সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদির অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
এদিকে, নরেন্দ্র মোদির রুশ সফর এমন একটা সময়ে ঘটছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়াকে বিশ্বস্তরে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপও করা হয়েছে।
ভারতের দাবি, তাদের পররাষ্ট্র নীতি ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ এবং ‘জাতীয় স্বার্থ’র ওপর ভিত্তি করে তৈরী।
কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়া রুশ-বিরোধী মনোভাবের কথা বিবেচনা করলে এই সফর কি ভারতের কৌশলগত অংশীদার আমেরিকাকে ক্ষুব্ধ করতে পারে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ হতে পারে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত অর্থনীতির অধ্যাপক স্টিভ এইচ হাঙ্কে মনে করেন, ভারতের সাথে রাশিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। অধ্যাপক হাঙ্কে রাষ্ট্রপতি রেগানের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে ভারত সব দেশের সাথেই সুসম্পর্ক চায়, বিশেষত রাশিয়ার সাথে। কারণ এটা এমন একটা দেশ যার সাথে সোভিয়েত আমল থেকেই ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে।’
ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্ব
১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত ভারতে বেড়ে ওঠা যে কারো পক্ষে সোভিয়েত প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল।
ভারতে অনেক বড় বড় ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে রাশিয়া। শুধু তাই নয়, ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিতেও রাশিয়া সাহায্য করেছে।
কঠিন পরিস্থিতিতেও ভারতের পাশে থেকেছে তারা। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল।
রাশিয়া সফরে গিয়ে পরলোকগত চলচ্চিত্র অভিনেতা রাজ কাপুরের কথা না বলে থাকতে পারেন না কোনো ভারতীয়ই।
২০০০ সালে ভ্লাদিমির পুতিন যখন প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হন, সেই সময়ে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঘোষণার আওতায় প্রতিরক্ষা, মহাকাশ ও অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর করে এই দুই দেশ।
সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার ক্ষেত্রে ‘এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ চুক্তি এবং জ্বালানি সহযোগিতা সম্পর্কিত চুক্তিও উল্লেখযোগ্য বিষয়।
বিভিন্ন জটিলতার মোকাবিলা করার সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো মজবুত করে তোলার ক্ষমতা রয়েছে ভারত এবং রাশিয়ার। যার ওপর ভিত্তি করে নিশ্চিত করা যায় যে পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যেও এই সম্পর্ক শক্তিশালী থাকে।
দক্ষিণপন্থী তাত্ত্বিক ড. শুভ্রকমল দত্ত মনে করেন, যে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক এখন ‘শীর্ষে রয়েছে’।
তার কথায়, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর একটা নতুন, পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক বিশ্ব ব্যবস্থার সূচনা করবে। যার ফলে অনেক নতুন সংযোজনের আবির্ভাব ঘটবে।’
ভারতের ‘নিরপেক্ষতা’ পশ্চিমাদের জন্য হতাশার কারণ?
একটা শক্তিশালী গণতন্ত্র হিসাবে ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা না করার বিষয়ে বহুবার দুঃখ প্রকাশ করেছে বহু পশ্চিমা দেশ।
তবে ভারতের ‘নিরপেক্ষতা’কে প্রায়ই রাশিয়ার পক্ষে বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
ভারতের অনেকে বিশ্বাস করেন যে রাশিয়ার প্রসঙ্গ এলে নিজেদের ‘নিরপেক্ষতা’ হারিয়ে ফেলে পশ্চিমা মিডিয়া।
ড. দত্ত বলেছেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে তারা (ভারত) নিন্দা করবে, পশ্চিমা দেশগুলোর এই প্রত্যাশা কোনও অবস্থাতেই পূরণ হবে না। কারণ ভারতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের রাষ্ট্রীয় হিত।’
তা সত্ত্বেও, পশ্চিমা দেশগুলো ভারত-রাশিয়ার মজবুত সম্পর্ক এবং ইউক্রেনে আক্রমণের বিষয়ে রাশিয়ার নিন্দা করার ক্ষেত্রে (ভারতের) ‘অনীহা’ নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’!
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা মনে করে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য তাদের চেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে ভারতের এই অবস্থান।
পশ্চিমা দেশের চিন্তার কারণ কী?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ করতে রাশিয়ার ওপর যে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরিতে চেষ্টা করা হচ্ছে তাকে দুর্বল করে তুলতে পারে ভারতের সাথে সে দেশের (রাশিয়ার) বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা-সহ বিভিন্ন বিষয়ের অংশীদারিত্ব।
রাশিয়া থেকে ভারত মোট জ্বালানি আমদানির সিংহভাগ কেনে। পশ্চিমা দেশগুলো চায় রাশিয়ার ওপর মার্কিন যে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাকে সম্মান করুক ভারত।
এদিকে বিষয়টা যে বেশ জটিল ভারত তা জানে। কৌশলগত স্বার্থ এবং শক্তি সুরক্ষার চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখতে আলাপ আলোচনা এবং কূটনীতির কথা বলে থাকে তারা।
চলতি বছরের শুরুতে, ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’ (সিআরইএ) রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি নিয়ে একটা বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে।
সেই বিশ্লেষণ বলছে অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে ১৩ গুণ বেড়েছে।
এই কারণেই ২০২৩-২৪ সালে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ভারতের রফতানির মূল্য মাত্র ৪০০ কোটি ডলার।
ইউক্রেনে আক্রমণের আগের সময়ের চেয়ে রাশিয়া আজ অনেক বেশি সমৃদ্ধ বলে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে পশ্চিমা গণমাধ্যমে।
এর জন্য ভারত ও চীনকে অনেকাংশে দায়ী করে সেখানকার গণমাধ্যম। কারণ দুটো দেশই রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার ক্ষেত্রে বড় ক্রেতা।
রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কাজ করছে?
তাহলে কি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে রাশিয়ায় অর্থায়ন বন্ধ করার উদ্দেশে সে দেশের ওপর যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা কার্যকর হচ্ছে না?
দুই বছর আগে ওয়াশিংটনে এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জোরদার জবাব দিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
তিনি জানিয়েছিলেন নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া থেকে ভারতের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করছে।
সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি যদি রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার কথা বলে থাকেন, তাহলে আমি পরামর্শ দেব ইউরোপের দিকে আপনার দৃষ্টি দেয়া উচিত। আমরা অল্প পরিমাণে শক্তি কিনে থাকি যা আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়। ভারত রাশিয়া থেকে এক মাসে যতটা তেল কিনে থাকে ইউরোপ সেই পরিমাণ তেল এক রাতে কেনে।’
অধ্যাপক হাঙ্কে সেই বিশেষজ্ঞদের একজন যারা বিশ্বাস করেন যে রাশিয়ার ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা কাজ করছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার সাথে সহমত পোষণ করেন এমন বিশেষজ্ঞের সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি বলেছেন, ‘আমি নীতিগতভাবে এবং বাস্তবে, দুই ক্ষেত্রেই মুক্ত বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও হস্তক্ষেপের বিরোধী। প্রত্যাশা অনুযায়ী এই সমস্ত নিষেধাজ্ঞা প্রায় কখনোই কাজ করে না। তেলের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি আর আমার দৃষ্টিভঙ্গি এক।’
যদিও অধ্যাপক ড. জাফরেলট অধ্যাপক হাঙ্কের মতের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন,‘আমি কিন্তু এ বিষয়ে একমত নই। পশ্চিমের অনেকেই ভিন্ন কথা বলেন। নিষেধাজ্ঞাগুলো কার্যকর না হওয়ার কারণ তা সম্পূর্ণভাবে কাজ করার সুযোগ পায় না। বিশেষত ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেই দেশগুলোর কারণে, যারা রাশিয়াকে তেল বিক্রি করতে সাহায্য করে। তবে এই জাতীয় বিধি বিতর্কের জন্ম দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে কী হবে?
এই প্রসঙ্গে আরো একটা প্রশ্ন থেকে যায়। সেটা হলো ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আবার ক্ষমতায় আসেন (এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যা সম্ভব বলেও মনে হয়) তা হলে কী হবে?
তবে ভ্লাদিমির পুতিনের শাসনকালে রাশিয়া আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলো থেকে।
ইউক্রেনে আগ্রাসন ও ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।
ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্য সহযোগী দেশগুলোর কাছ থেকে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক প্রতিরোধের মুখে পড়েছে রাশিয়া।
তবে চীন, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অনেক দেশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে রাশিয়া।
অধ্যাপক স্টিভ হাঙ্কে মনে করেন, রাশিয়ার রাজধানীতে মোদি ও অন্য রাষ্ট্রনেতাদের আগমন রাশিয়া বা ভ্লাদিমির পুতিনের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার লক্ষণ নয়।
তিনি বলেন, ‘মোদি ও পুতিন সামনাসামনি বৈঠক করছেন, এটা ভালো বিষয়। কূটনীতি তো এভাবেই কাজ করে।’
একইসাথে অধ্যাপক ড. ক্রিস্টোফ জাফরলট আবার মনে করেন, পুতিন মূলত স্বৈরাচারী শাসকদের ঘনিষ্ঠ।
তিনি বলেন, ‘আফ্রিকা, ইরান, চীনের মতো দেশের সাথে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। হাঙ্গেরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একমাত্র দেশ যারা রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ। হাঙ্গেরি বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে অনুদার দেশ।’
ভারত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দুই দেশেই গণতন্ত্র অনুপস্থিত। আর একই ধরনের মিল থাকায় রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে ভারত। কিন্তু একইসাথে পশ্চিম ও তার আধিপত্যের বিরুদ্ধে গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টাও করছে ভারত।’
ফলে অনেকে মনে করেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুতিনকে বিচ্ছিন্ন করতে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা