০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১ মহররম ১৪৪৬
`

এসসিও-এর শীর্ষ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি কেন নিজে গেলেন না

রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং - ফাইল ছবি

কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) ২৪তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো ৩ ও ৪ জুলাই।

রাশিয়া, চীন, ইরান এবং মধ্য এশিয়ার কিছু দেশ এসসিওর সদস্য। এই সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বৈঠকে যোগ দিলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিন্তু তাতে যোগ দেননি।

তার পরিবর্তে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

সম্মেলনে এসসিওর গত ২০ বছরের কাজকর্ম পর্যালোচনা করার পাশাপাশি পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জারি করা বিবৃতি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘সুরক্ষিত এসসিওর’ দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে শীর্ষ সম্মেলনে।

নিরাপত্তা, অর্থনীতি, সহযোগিতা, যোগাযোগ, ঐক্য, সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, আঞ্চলিক ঐক্য এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে জোর দিচ্ছে ভারত, সে কথাও বলা হয়েছে।

পাশ্চাত্যের দেশগুলো বরাবর এসসিওকে সন্দেহের চোখে দেখলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই জোটের গুরুত্ব প্রায়ই আলোচিত হয়।

এই সম্মেলনে যোগ দিতে আগেই কাজাখস্তানে পৌঁছে যান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ আরো অনেকে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাজাখস্তান যাননি। এখন প্রশ্ন হলো কেন এই সিদ্ধান্ত, আর এর তাৎপর্যই বা কী? কেন সম্মেলনে যোগ দিলেন না প্রধানমন্ত্রী মোদি?

জেএনইউ-এর ‘সেন্টার ফর সেন্ট্রাল এশিয়া অ্যান্ড রাশিয়ান স্টাডিজ’-এর অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় পান্ডের কাছ এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।

উত্তরে অধ্যাপক সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, ‘নতুন সরকার গঠনের পরে প্রধানমন্ত্রী মোদির ব্যস্ততা রয়েছে। তবে আমাদের এটাও লক্ষ্য করতে হবে যে গত বছর ভারত যখন এসসিওর সভাপতিত্ব করেছিল, তখন আমরা এই সম্মেলন ভার্চুয়ালি করেছিলাম। এ থেকে কোথাও না কোথাও এটাই অনুমান করা যেতে পারে যে ভারতের অগ্রাধিকারের তালিকায় এসসিও নেই।’

এই সম্মেলনে না যাওয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সাথে একই মঞ্চে বসতে হলো না প্রধানমন্ত্রী মোদিকে।

দীর্ঘদিন ধরেই চীন ও পাকিস্তান দু’দেশের সাথেই ভারতের সম্পর্কের ভালো নয়।

এসসিও সম্মেলনে আগত রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিনও। তার সাথে পরে বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি, তবে পৃথকভাবে।

আগামী সপ্তাহে ৮ ও ৯ জুলাই রাশিয়া সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে বৈঠক করবেন তিনি।

মোদির অনুপস্থিতি মধ্য এশিয়ার দেশের নেতাদের ‘হতাশ’ করতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

বিগত বছরগুলোতে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ওই নেতাদের সাথে মোদির পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। তবে রাশিয়া সফরে এর ‘ক্ষতিপূরণ’ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কানওয়াল সিববল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘সংসদে অধিবেশন থাকায় এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী মোদি। জুলাই মাসে রাশিয়া সফরে গিয়ে এর ক্ষতিপূরণ করা হবে।’

পরবর্তীতেও দূরত্ব বজায় রাখবে ভারত?
২০২৩ সালে ভার্চুয়ালি এসসিও সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভারত। এসসিও জোটের পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলন চলতি বছরের শেষের দিকে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর ২০২৫ সালে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা চীনে।

এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতেও এসসিও সম্মেলনে মোদির অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

অধ্যাপক সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, ‘এসসিও গোষ্ঠী চীন এবং কিছুটা রাশিয়ার পরিচালিত বলে মনে করা হয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সাথে এই দু’দেশের সম্পর্ক ভালো নয়। ভারতের এই সিদ্ধান্তকেও সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে।’

আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্রহ্মা চেলানি ‘নিক্কেই এশিয়া’র ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটা প্রতিবেদন লেখেন।

ব্রহ্মা চেলানি লেখেন, ‘ভারত এসসিওতে তার অংশগ্রহণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছে। এসসিওকে পাশ্চাত্যবিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার বিদেশনীতির ক্ষেত্রে মোদির পাশ্চাত্যের দিকে ঝুঁকছেন।’

প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো একটা বিষয়েও উল্লেখ করেছেন ব্রহ্মা চেলানি।

তিনি লেখেন, ‘ভারত ছাড়া এসসিওর সব সদস্য চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সদস্য। ভারত কিন্তু ওই প্রকল্পের বিরোধিতা করছে। এসসিও দেশগুলোর মধ্যে ভারতই একমাত্র সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ। এসসিওতে চীনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলছে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই সম্মেলনে না যাওয়ার কারণ হিসেবে সংসদ অধিবেশনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে ব্রহ্মা চেলানি বলেন, ‘কর্মকর্তারা বলছেন যে সংসদের অধিবেশনের কারণে মোদি কাজাখস্তান যাননি। কিন্তু অতীতে তিনি সংসদের অধিবেশন চলাকালীন বিদেশে গিয়েছেন। এই গোষ্ঠীতে (এসসিও) ভারত আসলে ঠিক খাপ খায় না। ভারতের সবচেয়ে মার্কিনপন্থী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা হয় মোদিকে। আর এসসিওর ভাবমূর্তি কিন্তু পাশ্চাত্যবিরোধী।’

সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন
২০০১ সালে চীন, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার চারটি দেশ কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান যৌথভাবে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) প্রতিষ্ঠা করে। উজবেকিস্তান ছাড়া বাকি দেশগুলো এর আগে ‘সাংহাই ফাইভ’-এর সদস্য ছিল।

সীমান্ত অঞ্চলে সামরিক ক্ষেত্রে আস্থা তৈরির চুক্তি (সাংহাই, ১৯৯৬) এবং সীমান্ত অঞ্চলে সশস্ত্র বাহিনী হ্রাস করা নিয়ে যে চুক্তি (মস্কো, ১৯৯৭) হয়েছিল, তার ওপর ভিত্তি করে গঠন হয়েছিল ‘সাংহাই ফাইভ’ গোষ্ঠী।

২০০১ সালে এই গোষ্ঠীতে যোগ দেয় উজবেকিস্তান। ওই সময় সাংহাই ফাইভের নাম বদলে রাখা হয় ‘সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন।’

ভারত ও পাকিস্তান যোগ দেয় ২০১৭ সালে এবং ২০২৩ সালে ইরান এসসিওর সদস্য হয়।

এসসিওর সদস্য দেশ
বর্তমানে এসসিওর সদস্য দেশের সংখ্যা নয়। এই তালিকায় আছে ভারত, ইরান, কাজাখস্তান, চীন, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান।

আফগানিস্তান, বেলারুশ এবং মঙ্গোলিয়া এসসিওর পর্যবেক্ষক দেশের মর্যাদায় রয়েছে এবং আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, বাহরাইন, কম্বোডিয়া, মিসর, কুয়েত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ‘সংলাপ অংশীদারের’ (ডায়ালগ পার্টনার) মর্যাদায় রয়েছে।

সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক জোরদার করা, রাজনীতি, বাণিজ্য ও অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতির পাশাপাশি শিক্ষা, শক্তি, পরিবহন, পর্যটন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কার্যকর সহযোগিতার কথা বলে এই জোট। এর উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।

সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা মজবুত করার বিষয়েও এসসিও জোর দেয়।

বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ এসসিওর সদস্য দেশগুলোর বাসিন্দা। বিশ্বের জিডিপির ২০ শতাংশ আসে এই দেশগুলো থেকে। বিশ্বের মজুদ মোট তেলের ২০ শতাংশই এই দেশগুলোর দখলে।

এসসিওতে ভারত
অধ্যাপক সঞ্জয় পান্ডে বলেন, ‘ভারত ভেবেচিন্তেই এসসিওর সদস্য হয়েছিল। কিন্তু এখন ভারত এসসিওকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। আগামী দিনে, রাশিয়ায় ব্রিকস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। আশা করা যায় প্রধানমন্ত্রী ওই সম্মেলনে যাবেন। ব্রিকসে রাশিয়া ও চীন ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অনেক দেশ রয়েছে যাদের নিজস্ব পরিচয় এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি আছে।’

তার প্রতিবেদনে ব্রহ্মা চেলানি লেখেন, ‘সত্যিটা হলো ভারত এসসিওর সদস্যপদ থেকে কিছু কৌশলগত সুবিধা পেয়েছে। ভারতের বিদেশনীতির স্বতন্ত্রতা দেখানোর জন্য এসসিওর সদস্যপদের প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে।’

অন্যদিকে, অধ্যাপক পাণ্ডে বলেন, ‘এসসিওর সদস্যপদ প্রমাণ করে যে ভারতের বিদেশনীতি স্বাধীন। যদি তারা আমেরিকার সাথে কোয়াডে থাকতে পারে, তাহলে রাশিয়া এবং চীনের সাথে এসসিওতে থাকবে।’

চীনের কারণে ভারতের ‘অস্বস্তি’?
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেই সম্মেলনে আসেননি। এর আগে, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস-এর শীর্ষ সম্মেলনে মুখোমুখি হয়েছিলেন শি জিনপিং এবং নরেন্দ্র মোদি। তবে দু’জনের মধ্যে কোনো দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনা হয়নি।

আর গত বছর ভারত এসসিওর সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভার্চুয়ালি।

এখন প্রশ্ন হলো চীনের সাথে সম্পর্কে টানাপোড়েন থাকলেও তাদের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীগুলোর সাথেও কি ভারতের বিরোধ রয়েছে?

এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, ‘ভারত অস্বস্তি বোধ করছে, কিন্তু তারা এই গোষ্ঠীতেই থাকবে। কারণ এই গোষ্ঠীগুলো পাশ্চাত্যবিরোধী হলেও যাতে ভারত বিরোধী না হয়ে ওঠে সেটাও দেখা দরকার। ভারত চায় তাদের কথা ওই গোষ্ঠী পর্যন্ত পৌঁছাক। এসসিও গোষ্ঠীতে এমন অনেক দেশ রয়েছে যাদের সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো। এই সম্পর্ক ভারত বজায় রাখতে চায়।’

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে ভারত কখনোই চাইবে না এই সম্পর্ককে নষ্ট করতে।

অধ্যাপক পাণ্ডের কথায়, ‘ভারত চায় এই দেশগুলো যাতে ভারত-বিরোধী গোষ্ঠীর অংশ না হয়ে ওঠে। ভারত এই গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত থাকবে কিন্তু ফোকাসের কেন্দ্রবিন্দুতেও একে (এসসিও) রাখবে না।’

তিনি বলেন, ‘জিনপিংয়ের দিল্লি না আসায় ভারতের পক্ষে ভালোই হয়েছে। জি২০-এর কেন্দ্রে চীনকে দেখা যায়নি, বরং দেখা গিয়েছিল ভারতের। আমার মনে হয় না এটাকে জি২০-তে শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা উচিত।’

ব্রিকস এবং এসসিও-দুইয়েরই সদস্য রাশিয়া, চিন ও ভারত। আবার রাশিয়ার সাথে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে।

রাশিয়া কি ভারত-চীনকে বন্ধু বানাতে পারবে?
ভারত এবং চীনের সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে কি রাশিয়া?

এর উত্তরে অধ্যাপক সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, ‘ডোকলাম নিয়ে বিবাদের সময় চীনের সাথে রাশিয়ার কথাবার্তা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। রাশিয়া চীনকে বলেছিল এর একটা সমাধান হওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘তা সত্ত্বেও রাশিয়া চায় চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকুক। যাতে এই দু’দেশের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে রাশিয়ার কোনো রকম সমস্যা না হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের পর চীনের ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে রাশিয়া। তাই রাশিয়া এখন সেভাবে ভূমিকা পালন করতে পারছে না।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement