দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের স্পিকার ওম বিড়লা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৬ জুন ২০২৪, ২২:৪৪
ভারতে ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের অনুরোধ, বিরোধীদের অসম্মতি প্রকাশ ও প্রার্থী দেয়া, সংসদে ‘ভয়েস ভোট’ এবং তা নিয়ে বিতর্কের মাঝেই দ্বিতীয়বারের জন্য দেশের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় স্পিকারের দায়িত্ব নিলেন ওম বিড়লা।
সাধারণত ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়ে থাকেন পার্লামেন্টের স্পিকার। কিন্তু বিজেপি বিরোধী জোট `ইন্ডিয়া' তাতে এবার সম্মতি প্রকাশ করেনি।
পরিবর্তে রাজস্থানের কোটা আসনের সংসদ সদস্য ওম বিড়লার বিরুদ্ধে স্পিকার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থী দিয়েছিল তারা। কংগ্রেস সংসদ কে সুরেশকে ওম বিড়লার বিপরীতে স্পিকার পদের জন্য মনোনীত করেছিল বিরোধী শিবির।
এরপর বুধবার ‘ভয়েস ভোটে’ (ধ্বনি ভোটে) দ্বিতীয়বারের জন্য স্পিকার পদে নির্বাচিত করা হয় ওম বিড়লাকে।
যদিও এ নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। একদিকে যেমন ইন্ডিয়া জোটের শরিক তৃণমূলের দাবি বিরোধীদের কণ্ঠস্বর শোনা হয়নি, অন্য দিকে কংগ্রেস জানিয়েছে তারা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে লোকসভা স্পিকারের পদে কেরালার আটবারের সংসদ কে সুরেশকে সমর্থনের প্রস্তাব এনেছিল, ভোটাভুটি চায়নি।
আবার জোট ইন্ডিয়ার অন্যতম শরিক তৃণমূলের দাবি বিরোধীদের‘অবজ্ঞা' করে ‘একতরফাভাবে ওম বিড়লাকে ওই পদে নির্বাচন করা হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, বুধবারের প্রক্রিয়ায় বিরোধীদের‘কণ্ঠস্বর গ্রাহ্য করা হয়নি!’
উল্লেখ্য, তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। এবারের সরকার শরিক নির্ভর।
তবে তেলুগু দেশম পার্টি এবং জনতা দল ইউনাইটেডের মতো শরিকদের নিয়ে গঠিত তৃতীয় দফার সরকারে এনডিএ-র ঝুলিতে ২৯৩টি আসন রয়েছে। জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেসের চার সাংসদও এনডিএ-এর নির্বাচিত প্রার্থী ওম বিড়লাকে সমর্থন করেছেন।
অন্যদিকে, বিরোধী ইন্ডিয়া শিবিরের কাছে ২৩৪টি আসন রয়েছে। সংখ্যার নিরিখে এনডিএ জোট বরাবরই এগিয়ে, কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল বিরোধীরা। তারা জানিয়ে দিয়েছিল ওম বিড়লাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত, কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে। সেই শর্ত আবার মানতে রাজি হয়নি বিজেপি, যে কারণে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
সোমবার থেকে চলা একাধিক‘নাটকীয়' মুহূর্ত পেরিয়ে শেষপর্যন্ত স্পিকারের পদে দয়িত্ব নেন ওম বিড়লা।
দায়িত্ব গ্রহণের পর বিড়লাকে তার দ্বিতীয় দফার জন্য শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি বিরোধী নেতা কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ ইয়াদবের মতো অনেকেই তাকে ‘স্মরণ' করিয়ে দিয়েছেন, সংসদে বিরোধীদের ভূমিকা কী আর স্পিকারের দায়িত্বই বা কী!
এবারের স্পিকার নির্বাচন ও বিরোধীদের বক্তব্য
বুধবার স্পিকার হিসেবে ওম বিড়লার নাম মনোনয়ন করা হয় এনডিএ-র তরফে। উল্টোদিকে কংগ্রেস, তৃণমূলসহ বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা প্রস্তাব করেন কে সুরেশের নাম।
এর পরেই ধ্বনিভোটের প্রস্তাব দেন লোকসভার প্রোটেম স্পিকার তথা বিজেপির ওড়িশার সাংসদ ভর্তৃহরি মহতাব।
ধ্বনিভোটে বিড়লার পক্ষে সম্মতি প্রকাশ করে এনডিএ। এরপর বিপক্ষে কারা তা জানতে চাওয়া হলে বিরোধী শিবির থেকে মতপ্রকাশ করা হয়।
কিন্তু প্রোটেম স্পিকার বিরোধীদের স্বর গ্রাহ্য করেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীদের কেউ কেউ।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি বলেন,‘যা হয়েছে, তা নিয়মবিরুদ্ধ। বিরোধী শিবিরের বহু সংসদই চেয়েছিলেন ভোটাভুটির মাধ্যমে স্পিকার নির্বাচন হোক। কিন্তু প্রোটেম স্পিকার সেই আবেদন গ্রাহ্যই করেননি।’
তিনি আরো বলেন,‘সংসদের নিয়ম অনুযায়ী, এক জন সংসদও ভোটাভুটি চাইলে সেই প্রস্তাবে সাড়া দিতে হবে। কিন্তু প্রোটেম স্পিকার তা করেননি।’
নিয়ম অনুযায়ী, ধ্বনিভোটে দুই শিবিরের ধ্বনি যদি সমান জোরালো হয়, তা হলে ভোটাভুটির পথে যাওয়া যেতে পারে।
বুধবারের স্পিকার নির্বাচন নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদল কংগ্রেস অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করে।
কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ স্পিকার নির্বাচনের ঘণ্টাখানেক পরে তার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্টে লেখেন, ‘বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার শরিকেরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে লোকসভা স্পিকার হিসেবে কেরলের সংসদ সুরেশকে সমর্থনের প্রস্তাব এনেছিল। ধ্বনিভোট গৃহীত হয়। তার পরে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ভোটাভুটির প্রস্তাব দিতেই পারত। কিন্তু তারা তা করেনি।’
‘কারণ, ইন্ডিয়া চেয়েছিল লোকসভায় ঐকমত্য এবং সহযোগিতার পরিবেশ যাতে বজায় থাকে। প্রধানমন্ত্রী এবং এনডিএ-র কাজে ঐকমত্য এবং সহযোগিতার অভাব অত্যন্ত স্পষ্ট।’
স্পিকার পদ নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের বিরোধিতা
সোমবার লোকসভার প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেশ চালনার ওপর জোর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানিয়েছিলেন সবাইকে একসাথে নিয়ে চলার কথাও। তবে তাতে ছন্দপতনের দৃশ্য ইতোমধ্যেই সামনে এসেছে।
লোকসভার স্পিকার পদে ওম বিড়লাকে সমর্থনের বিষয়ে সোমবার বিজেপির পক্ষ থেকে কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গের সাথে কথা বলেছিলেন রাজনাথ সিং।
তবে তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয় এনডিএ-র মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করতে প্রস্তুত বিরোধীরা, কিন্তু ডেপুটি স্পিকারের পদ ছেড়ে দিতে হবে তাদের (বিরোধীদের)। গত পাঁচ বছর ধরে ওই পদ ফাঁকা রয়েছে।
বিরোধীদের দাবি, রাজনাথ সিং জানিয়েছিলেন এ বিষয়ে নবনির্বাচিত সরকারের অবস্থান কী তা তিনি জানাবেন। যদিও পরে বিজেপির পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি বলে অভিযোগ কংগ্রেসের।
নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করে রাহুল গান্ধী বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর কথার কোনো অর্থ নেই। উনি ঐকমত্য হওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলেন আর ভেতরে অন্য কাজ করেন।’
এর পাশাপাশি মঙ্গলবার আরো একবার নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন তিনি। স্পষ্ট করে দেন, সংবিধান মেনে ডেপুটি স্পিকার পদে নিয়োগ করতে হবে, যে পদে মোদি সরকারের প্রথম দফায় নির্বাচিত করা হয়েছিল এআইডিএমকের এম থাম্বিদুরাইকে।
কিন্তু গত পাঁচ বছরে ওই পদে কেউ ছিলেন না। বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের দাবি ওই পদ তাদের ছেড়ে দিতে হবে।
এরপর সংসদ ভবনে কংগ্রেস নেতা কে সি ভেনুগোপাল এবং ডিএমকে-র টিআর বালুর সাথে কথা বলে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। যদিও তা সম্ভব হয়নি।
বিজেপির ভূমিকায় ‘ক্ষুব্ধ' বিরোধীরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে এনডিএ-র পক্ষ থেকে মনোনীত প্রার্থী ওম বিড়লার মনোনয়ন জমা দিয়ে দেয়া হয়। বিরোধীদের পক্ষ থেকে বিড়লার বিপরীতে মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়নও জমা দেয়া হয় তড়িঘড়ি।
উল্লেখ্য, ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সাথে কংগ্রেস সাংসদ কে সুরেশকে স্পিকার পদের জন্য মনোনয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে।
সংসদীয় বিষয়ক এবং সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু আগেই বিরোধীদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন স্পিকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সম্মতির ভিত্তিতে এগোনোর জন্য।
রিজিজু বলেন, ‘স্পিকার কোনো একটি দলের নন। সর্বসম্মতিক্রমে সংসদ পরিচালনার জন্য তাকে নির্বাচন করা হয়। এটা দুঃখজনক যে কংগ্রেস ওই পদের জন্য তাদের প্রার্থীকে মনোনীত করেছে।’
বিরোধীদের অনড় অবস্থানের বিষয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন,‘বিরোধীরা কেন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদের নির্বাচনকে এক করছেন? দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। আগে স্পিকার নির্বাচন হোক, ডেপুটি স্পিকারের বিষয় তো পরে আসবে।’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং জেডিইউ-এরএমপি লালন সিংয়ের অভিযোগ বিরোধীরা ‘চাপের রাজনীতি' করছে। তাই সংখ্যা গরিষ্ঠতা না থাকলেও বিরোধীরা স্পিকার পদের জন্য নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচন করেছে।
শরিকি ‘জটিলতা’
স্পিকার পদের জন্য মনোনয়নকে ঘিরে জটিলতা ইন্ডিয়া জোটের অন্দরমহলেও দেখা গিয়েছে। স্পিকার নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ‘একতরফা' বলে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। তাদের দলের সাথে কোনো রকম আলোচনা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন ইন্ডিয়া জোটের শরিক দল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি।
তিনি বলেন,‘বিরোধী জোটের সব শরিকদের সাথে কথা না বলেই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সাংসদ কে সুরেশকে স্পিকার পদের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সাথে কোনো আলোচনা হয়নি। দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি এই সিদ্ধান্ত একতরফা ভাবে নেয়া।’
এর পর অবশ্য ছবিটা বদলে যায়। সংসদে রাহুল গান্ধী এবং অভিষেক ব্যানার্জিকে পাশাপাশি বসে কথা বলতে দেখা যায়।
পরে স্পিকার পদে মনোনয়ন নিয়ে টেলিফোনে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির সাথে রাহুল গান্ধীর আলোচনাও হয়। আপাতত দুই শরিকের মধ্যে‘বরফ গলেছে' বলেই মনে হয়েছিল।
তবে বুধবার স্পিকার নির্বাচনের পর দুই শরিকের বক্তব্যের মধ্যে‘পার্থক্য’ আবারো দেখা গিয়েছে।
দ্বিতীয়বার স্পিকার পদে ওম বিড়লা
বুধবার ১১টা নাগাদ শুরু হয় স্পিকার নির্বাচনের প্রক্রিয়া। লোকসভা অধিবেশনের তৃতীয় দিনে ধ্বনি ভোট বা কণ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে স্পিকার নির্বাচিত হন এনডিএ-র প্রার্থী ওম বিড়লা।
লোকসভার স্পিকার নির্বাচনের পর ওম বিড়লাকে অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী। স্পিকার পদে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের পর বিড়লাকে শুভেচ্ছা জানান বিরোধী নেতারাও।
রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে বিরোধীদের কথা বলার সুযোগ দিয়ে, আমাদের ভারতের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দিয়ে, আপনি ভারতের সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন।’
‘এই কক্ষ ভারতের জনগণের কণ্ঠস্বরকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং আপনিই সেই কণ্ঠস্বরের চূড়ান্ত বিচারক। সরকারের রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে, কিন্তু বিরোধী দল ভারতের জনগণের কণ্ঠস্বরেরও প্রতিনিধিত্ব করে।’
রাহুল গান্ধী বলেন, এবার বিরোধীদল গতবারের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ভারতীয় জনগণের কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব করে। বিরোধীরা আপনার কাজে সাহায্য করতে চায়।
অন্য দিকে, বিগত লোকসভায় ১০০-রও বেশি সংসদকে সাসপেন্ড করার ঘটনার কথাও তাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন বিরোধীরা।
ওম বিড়লাকে শুভেচ্ছা বার্তা জানানোর সময় অখিলেশ ইয়াদব বলেন, ‘আমরা আশা করি বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমন করা হবে না এবং আর কোনো বহিষ্কার হবে না।’
ডিএমকের টিআর বালু আবার পদ্মের পাতার উদাহরণ দিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছেন স্পিকারের পদের দায়িত্বের কথা। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘যেভাবে পদ্মের পাতার ওপর কোনো জলের ফোঁটা থাকতে পারে না, সেভাবে স্পিকারেরও উচিত কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের কথা না শুনে সমস্ত পক্ষকে শোনা।’
অন্য দিকে স্পিকার ওম বিড়লা বলেছেন, ‘আমি প্রথম দফায় চেষ্টা করেছি প্রত্যেক সদস্যকে কথা বলার সুযোগ দিতে। আমি সবাইকে তাদের মতামত রাখার সুযোগ দেব। তবে আমি আশা করব যে এই সহযোগিতা দ্বারা হাউস পরিচালিত হবে। ’
তবে তার বক্তব্যে ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে ঘোষিত জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ আসলে বিরোধীরা তার প্রতিবাদ করেন। সংসদের বাইরেও তার রেশ দেখা যায়।
জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ এনে বিড়লা বুধবার বলেন,‘জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করছে এই কক্ষ। এর পাশাপাশি, যারা জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন, লড়াই করেছিলেন এবং ভারতের গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাদের দৃঢ় সংকল্পের আমরা প্রশংসা করি। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ভারতের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকবে।’
তার এই বক্তব্যের পর সংসদে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। এর আগে প্রধানমন্ত্রীও একই প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে বিরোধী শিবির কটাক্ষ করে জানিয়েছিল মোদির সরকারের শাসনকালে দেশ গত দশ বছরে ধরে‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা'তে আছে। বুধবার ওম বিড়লার মন্তব্য সেই বিতর্ক আবারো উসকে দেয়।
এই বিষয়ে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেছেন,‘অধিবেশনের শুরুটা বেশ নাটকীয় ছিল কারণ সমস্ত বিরোধী নেতারা উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন যে তারা আশা করেন যে স্পিকার এমনভাবে সভা পরিচালনা করবেন যা সমস্ত বিরোধী দলের পক্ষে ন্যায্য হবে। প্রত্যেকের মতামতকে বিবেচনা করা হবে।’
‘কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, তিনি এমন একটি বিষয় উত্থাপন করেছেন এবং যেভাবে করেছেন তা অধিবেশন শুরু করার জন্য সঠিক নয়।’
কংগ্রেস কেন ডেপুটি স্পিকার পদের দাবি করছে?
সংবিধান অনুযায়ী স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে দু’জনকে নির্বাচন করাটা নিয়ম। কিন্তু মোদি সরকারের দ্বিতীয় দফায় তা হয়নি।
এদিকে ক্ষমতায় থাকাকালীন অতীতে কংগ্রেস স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের পদ দুটিই নিজেদের কাছে রাখত। কিন্তু ১৯৬৯ সালে তা বদল হয়। কংগ্রেস এই পদে অল পার্টি হিল লিডারস নেতা গিলবার্ট জি সোয়েলকে দিয়েছিল, যিনি তখন শিলংয়ের সংসদ ছিলেন।
সংবিধান অনুযায়ী স্পিকারের অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্ব পালন করেন ডেপুটি স্পিকার।
যদি ডেপুটি স্পিকারের পদ শূন্য হয়, তবে সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি এই দায়িত্ব পালনের জন্য লোকসভার একজন সংসদকে বেছে নেন।
আবার স্পিকার পদত্যাগ করলে পদত্যাগপত্রে তাকে ডেপুটি স্পিকারকে সম্বোধন করতে হবে।
১৯৪৯ সালে গণপরিষদে এ নিয়ে বিতর্ক হয়। ওই সময় ড. ভীমরাও আম্বেদকর বলেছিলেন যে স্পিকারের পদটি ডেপুটি স্পিকারের পদের চেয়ে উচ্চতর, এমন পরিস্থিতিতে তার ডেপুটি স্পিকারকে সম্বোধন করা উচিত নয় বরং রাষ্ট্রপতিকে সম্বোধন করা উচিত।
কিন্তু যুক্তি দেয়া হয়েছিল, যেহেতু স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন, তাই এই পদের জবাবদিহি করতে হবে সংসদের সদস্যদের কাছেই।
এর সাথে সিদ্ধান্ত হয়, স্পিকার পদত্যাগ করলে তিনি তার পদত্যাগপত্রে ডেপুটি স্পিকারকে সম্বোধন করবেন এবং ডেপুটি স্পিকারের পদত্যাগের পরিস্থিতি এলে তিনি স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখবেন।
ডেপুটি স্পিকারের ক্ষমতার কথা মাথায় রেখেই ওই পদে বিরোধীদের কাউকে বসানোর কথা দাবি করেছিল কংগ্রেস।
এর আগে স্পিকার পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে?
গত কয়েকদিন ধরে স্পিকার পদকে ঘিরে ভারতের রাজনীতির ময়দান সরগরম থাকলেও এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘটনা প্রথম নয়।
ভারতের ইতিহাসে এর আগে তিনবার স্পিকার পদের জন্য এই প্রক্রিয়া দেখা গিয়েছে। প্রথমবার ১৯৫২ সালে কংগ্রেসের জিভি মভলঙ্কর ও শান্তারাম শংকররাও শান্তারাম মোরের মধ্যে স্পিকার পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। জিভি মভলঙ্কর নির্বাচিত হন স্পিকার পদে।
এরপর ১৯৬৭ সালে নীলম সঞ্জীব রেড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন টি বিশ্বনাথনের সাথে। স্পিকার হিসাবে নির্বাচিত হন নীলম সঞ্জীব রেড্ডি।
এরপর ১৯৭৬ সালে বলি রাম ভগত ও জগন্নাথ রাওয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় যেখানে জিতেছিলেন প্রথমজন।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা