মোদির মতো এত কম ব্যবধানে জিতেছিলেন মাত্র একজন প্রধানমন্ত্রী!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ জুন ২০২৪, ১৬:২৬
গত ৪ জুন ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ। প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদি।
তবে এবারের ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। যা মোদির দলকে কিছুটা অস্বস্তিতে রেখেছে। জোটের শরিকদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিজেপি।
রোববার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের জন্য শপথগ্রহণ করতে চলেছেন মোদি।
এনডিএ-এর শরিকেরা তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং নির্বাচিত প্রার্থীরা তাকে নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
বিজেপির এবারের নির্বাচনের ফলাফলে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল মোদির প্রাপ্ত ভোট। যে ব্যবধানে তিনি উত্তরপ্রদেশের বারাণসী আসনটি জিতেছেন, তা দলের অস্বস্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বারাণসী থেকে মোদির জয়ের ব্যবধান এ বার ১ লাখ ৫২ হাজার ৫১৩টি ভোট। শতাংশের হিসাবে যা ১৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত দু’বারের চেয়ে এই ব্যবধান বিপুল পরিমাণে কমেছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়েছেন মোদি।
২০১৪ সালে বারাণসী থেকে ৫ রাখ ৮১ হাজারের মতো ভোট পেয়েছিলেন মোদি। ব্যবধান ছিল ৩ লাখ ৭ লাখের মতো। তিনি হারিয়েছিলেন আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। ওইবার ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস অজয় রাইকে প্রার্থী করেছিল।
২০১৯ সালে বারাণসীতে মোদির ব্যবধান আরো বৃদ্ধি পায়। তিনি ওই কেন্দ্র থেকে ৬ লাখ ৭৪ হাজারের মতো ভোট পেয়েছিলেন। ব্যবধান ছিল ৪ লাখ ৭৯ হাজার প্রায়। ওইবার তার নিকটতম প্রতিপক্ষ ছিলেন সমাজবাদী পার্টির শালিনি যাদব।
গত দু’বার প্রায় চার লাখ এবং পাঁচ লাখ ভোটের ব্যবধানে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদি। এবার আর তা হয়নি। বারাণসী কেন্দ্রেই এবার তার নিকটতম প্রতিপক্ষ হয়েছেন কংগ্রেসের অজয় রাই।
অজয় শুধু মোদির ভোটের ব্যবধানই কমাননি, গণনা শুরুর পর প্রাথমিক ‘ট্রেন্ডে’ একবার তাকে পেছনেও ফেলে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ বারাণসী কেন্দ্রে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য পিছিয়ে ছিলেন স্বয়ং মোদি।
নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, এটাই মোদির সর্বনিম্ন জয়-ব্যবধান। শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রীদের ইতিহাসেও এত কম জয়ের ব্যবধান বড় একটা দেখা যায় না।
মোদির আগে কেবল একজন প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন, যিনি এর চেয়েও কম ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন। তিনি চন্দ্র শেখর। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময়ে তিনি কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯১ সালে চন্দ্র শেখরের জয়ের ব্যবধান ছিল দেড় লাখের চেয়েও কম। শতাংশের বিচারে তা মাত্র ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তিনি জিতেছিলেন, তবে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল বেশ কম। মেয়াদ ছিল মাত্র ২২৩ দিনের।
চন্দ্র শেখর ছাড়া ভারতের ইতিহাসে আর কোনো প্রধানমন্ত্রী নেই, যিনি দেড় রাখের কম ব্যবধানে জিতেছেন। মোদিই ওই তালিকায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন হয়ে রয়ে গেলেন।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। ১৯৭৭ সালে ৩৪ দশমিক ০৯ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
ভোট ব্যবধানের তালিকায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ওপরে রয়েছেন রাজিব গান্ধী। ১৯৮৪ সালে তিনি ৭২ দশমিক ১৮ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। যা দেশটিতে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
এই তালিকাতেই তিন নম্বরেও রয়েছে মোদির নাম। ২০১৯ সালে তার জয়ের ব্যবধান শতাংশের বিচারে ৪৫ দশমিক ২২ শতাংশ। তার আগে রয়েছে রাজিব গান্ধীর দু’বারের নজি-১৯৮৪ এবং ১৯৮৯।
লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে জয় একেবারেই আশানুরূপ নয় বলে মনে করছেন অনেকে। বিরোধীরা কেউ কেউ দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন মোদি।
বিজেপি তথা এনডিএ শিবিরের ভেতরই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আরো কিছু নাম উঠে এসেছিল মোদির এই ফলের পর। মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহান ৮ লাখের বেশি ভোটে জিতেছেন। অনেকে তার নাম করেছিলেন এই পদের জন্য। কেউ কেউ আবার নিতিন গডকড়ির নামও বলছেন।
তবে সর্বসম্মতিক্রমেই এনডিএ শিবির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবার মোদিকেই বেছে নিয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে তৃতীয়বারের জন্য শপথগ্রহণ করতে চলেছেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা