২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভারতে নির্বাচন : জেলে বসে ওমর আবদুল্লাহকে হারিয়েছেন রশিদ

ভারতে নির্বাচন : জেলে বসে ওমর আবদুল্লাহকে হারিয়েছেন রশিদ - সংগৃহীত

ভারত শাসিত জম্মু ও কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ওমর আবদুল্লাহ। তাকেই লোকসভা নির্বাচনে হারিয়েছেন শেখ আবদুল রশিদ। তাও আবার জেলে বসে। শেখ আবদুল রশিদ জিতেছেন প্রায় চার লাখ ভোটে।

জম্মু ও কাশ্মিরের বারামুল্লা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন জে অ্যান্ড কে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর। সেখানে তাকে প্রায় চার লাখ ভোটে পরাজিত করেছেন রশিদ, নির্দল প্রার্থী হয়ে। যদিও এই প্রথম নয়, এর আগেও ভোটে লড়ে জিতেছিলেন রশিদ। তবে তা জেলে বসে নয়।

রশিদের ছেলে আব্রার রশিদ এই রায় প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই জনাদেশ মানুষের জয়।’

তার বাবার নির্বাচনী প্রচারে কত রুপি খরচ করা হয়েছে, তিনি তাও জানিয়েছেন। মাত্র ২৭ হাজার রুপি খরচ করা হয়েছে রশিদের প্রচারে। বাবার হয়ে প্রচারের দায়িত্ব সামলেছিলেন ২২ বছরের ছেলেই।

গণনা তখনও বাকি, নিজের হার স্বীকার করে নেন ওমর। জানান, ভোটারেরা নিজেদের মত‌ামত দিয়েছেন। গণতন্ত্রে এটাই সব কিছু। তিনি বিপক্ষকে অভিনন্দনও জানান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ওমর লিখেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে এই জয়ের ফলে তাড়াতাড়ি জেল থেকে মুক্তি পাবেন ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। উত্তর কাশ্মিরের মানুষের জনপ্রতিনিধি পাওয়ার যে অধিকার রয়েছে, তাও পূরণ হবে না। তবে ভোটারেরা মতদান করেছেন, গণতন্ত্রে সেটাই আসল কথা।’

২০১৯ সালের ৯ আগস্ট থেকে তিহাড় জেলে বন্দী রয়েছেন শেখ রশিদ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল। তার বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসের’ খরচ জোগানোর অভিযোগ রয়েছে।

ছেলে আব্রার জানান, তার বাবার ভোটে জয় প্রমাণ করে দেয় যে আসলে তিনি নিরপরাধ।

তাকে দ্রুত জেল থেকে মুক্তি দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আব্রার জানান, যখন ভোটে লড়ার কথা তার বাবা প্রথম ঘোষণা করেছিলেন, পাশে প্রায় কেউই ছিলেন না। ধীরে ধীরে বহু মানুষ এগিয়ে আসেন। পাশে দাঁড়ান। ক্রমে তিনি যখন মিছিল করতে শুরু করেন, সাথে হাঁটতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ।

রশিদের ভোটপ্রচারে খরচ হয়েছে ২৭ হাজার রুপি। আব্রার জানিয়েছেন, তার গাড়িতে তেল ভরার জন্যই এই খরচ হয়েছে। গাড়ি চেপে তিনি বারামুল্লা কেন্দ্র প্রায় চষে ফেলেছেন। আর বাকি খরচ?

আব্রার জানিয়েছেন, হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রচারে অনুদান দিয়েছেন। তার ফলে এই বিপুল জয়।

অনন্তনাগ-রাজৌরি লোকসভা কেন্দ্রে হেরেছেন মেহবুবা মুফতি। পিডিপি নেত্রী জম্মু এবং কাশ্মির রাজ্যের শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ওই আসনে জয়ী হয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা মিয়া আলতাফ। মুফতিও ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

জম্মু এবং কাশ্মির আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হলেন রশিদ। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে জম্মু ও কাশ্মিরের লাঙ্গাটে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০১৯ সালেও লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন। তবে হেরেছিলেন। ওই তিনটে নির্বাচনেও নির্দল হয়েই লড়েছিলেন তিনি।

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন রশিদ। ২০০৮ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন তিনি। সেই কারণেই নাম হয় ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। ইস্তফার দেয়ার পর শুরু করেন বিধানসভা ভোটের প্রচার। মাত্র ১৭ দিন প্রচার করে জিতেছিলেন ভোটে।

২০১৯ সালে এনআইএ-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে ওই প্রথম কোনো রাজনৈতিক নেতা গ্রেফতার হন। সেই থেকে তিনি জেলে। দুই ছেলে আব্রার এবং আসরারই সামলেছেন প্রচার। তাতেই এমন সাফল্য।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রশিদ কি সংসদে শপথগ্রহণ করতে পারবেন? যদিও শপথগ্রহণ করা তার সাংবিধানিক অধিকার, কিন্তু যেহেতু তিনি বন্দী, তাই বাধাও রয়েছে।

শপথগ্রহণের জন্য রশিদকে আগে জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে সংসদে গিয়ে শপথ নিতে পারবেন তিনি। তবে তার পর আবার জেলে ফিরতে হবে তাকে।

শপথগ্রহণের পর রশিদকে লোকসভার স্পিকারকে লিখিতভাবে জানাতে হবে যে তিনি সংসদে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। অনুপস্থিত হিসেবে তিনি সংসদের সদস্য থাকতে পারেন কিনা, ভোটাভুটির মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

তবে রশিদ যদি দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাকে দু’বছর বা তার বেশি সময় জেলে থাকতে হয়, তা হলে সাথে সাথে সংসদের পদ হারাবেন তিনি। এমনটাই নিয়ম।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement