ভারতে সরকার গঠনে যেসব দলের সমর্থন পেলেন মোদি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ জুন ২০২৪, ২২:৫৪
ভারতের নতুন সরকার গঠনের জন্য যতগুলো আসন দরকার, তার চেয়ে কম থাকলেও নতুন সরকার গঠন করতে জোট সঙ্গীদের সমর্থন পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) সব দলের পক্ষ থেকে তাদের সমর্থন নিশ্চিত হয়েছে বলে দলটি ঘোষণা দিয়েছে।
দলটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক বিবৃতি বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদিকেই সর্বসম্মতিক্রমে জোটের নেতা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা ২১ নেতার মধ্যে রয়েছে তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) নেতা এন চন্দ্রবাবু নাইডু এবং জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) এক প্রতিনিধির নাম।
লোকসভায় কাঙ্ক্ষিত ২৭২ আসন নিশ্চিত করতে এই দুটি দলের সমর্থন বিজেপির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সরকার গঠন করতে শরিকদের পাশে পাওয়ার ব্যাপারে বিজেপির আত্মবিশ্বাসে আর কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারতের দরিদ্র, নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষ এবং নারী, যুবক ও কৃষকদের সেবায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এর আগে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এক সভায় অংশ নেন জোট নেতারা। সেখানে তাদের বেশ নির্ভার দেখা যায়। কেউ কেউ তার সাথে হাসিতেও মেতে ওঠেন।
‘কিংমেকার’
টিডিপি এবং জেডিইউ উভয় দলই কংগ্রেসের সাবেক মিত্র। নির্বাচনের মাস কয়েক আগে তারা মোদির জোটে যোগ দেয়।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দলের (ইউনাইটেড) প্রধান নীতিশ কুমার একটা সময়ে বিজেপির জোট সঙ্গী থাকলেও তিনি কয়েক বছর আগে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন এবং বিজেপি-বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের অন্যতম কারিগরও ছিলেন।
তবে এ বছরের জানুয়ারিতে আবারো জোট বদল করে এনডিএতে যোগ দেন তিনি। বিহারে এখন এনডিএ-এর সাথে সরকার চালাচ্ছেন তিনি এবং লোকসভা নির্বাচনেও এই জোটে সামিল ছিল তার দল।
জেডি (ইউ) বিহারে ১২টি আসন জিতেছে, এতটা তারা প্রত্যাশা করেননি। আবার বিজেপিও সে রাজ্যে ১২টি আসন পেয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) পেয়েছে ১৬টি আসন।
নীতিশ কুমারের মতো চন্দ্রবাবু নাইডুও কিছুদিন আগে পর্যন্ত মোদি সরকার-বিরোধী অবস্থানে ছিলেন।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বের হওয়ার পরে এই দুই নেতাই এখন হয়ে উঠেছেন ‘কিংমেকার’।
আঞ্চলিক দলগুলোর পক্ষে চমক দেখানো অসম্ভব কিছু নয়। তবে আপাতত জোটের মধ্যে সব ঠিকঠাক আছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
বিরোধীরা কী করছে?
অন্যদিকে, দেশটির রাজধানীতে বৈঠকে বসেছেন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের নেতারা। নির্বাচনের ফলাফল যখন মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, তখন কংগ্রেস সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে সরকার গঠন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জানান, বুধবার জোটের বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সেই বৈঠক এখনো চলছে।
মল্লিকার্জুন খাড়গে তার এক্স অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছি, ভালোভাবে লড়াই করেছি। জনরায় সুনির্দিষ্টভাবে মোদি এবং তিনি যে ধরনের রাজনীতি করেন তার বিপক্ষে গেছে। স্পষ্ট নৈতিক পরাজয়ের পাশাপাশি এটা ব্যক্তিগতভাবে তার জন্যও বড় ধরনের রাজনৈতিক পরাজয়।’
মঙ্গলবার জেডিইউ নেতা খালিদ আনোয়ার একটি রাজনৈতিক জল্পনা উস্কে দিয়েছিলেন এক্সে। তিনি লেখেন, ‘নীতিশ কুমারের চেয়ে ভালো আর কে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন?’
তবে সেটি জল্পনাই থেকে গেল শেষ পর্যন্ত।
পরের ধাপ কী?
যেহেতু জোট সঙ্গীদের সমর্থন নিশ্চিত হয়ে গেছে, শিগগিরই নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেই সাক্ষাতে সরকার গঠনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সমর্থনের কথা ব্যক্ত করবেন তিনি।
এনডিটিভিসহ স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, তিনি শনিবারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন।
যদিও এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি।
অন্যদিকে, সরকার গঠনের জন্য কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক আসন না পেলেও বিরোধীরা এখনো হাল ছাড়েনি। তবে এই পর্যায়ে এসে ঘটনার মোড় ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জোট সামলানোর চ্যালেঞ্জ
এর আগে একাধিকবার রাজ্য ও কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে কোনোবারই আসনের সংখ্যার বিচারে সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করতে অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে হয়নি।
গত ১০ বছরেও কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনায় ক্ষমতার ব্যবহার পুরোটাই তার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতেই থেকেছে, অন্য কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন না।
কিন্তু এখন জোট সরকার হলে সেখানে অন্যরাও অংশগ্রহণ করবে, তাদের কথাও শুনতে হবে।
সেই জোট সঙ্গীদের পক্ষ বদলের প্রবণতা আবার সর্বজন বিদিত।
প্রবীণ সাংবাদিক সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলেন, ‘নীতিশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর ক্রাচ ছাড়া এই সরকার চলতে পারবে না এবং নীতিশ কুমার তো হাওয়ার দিক বদলের মতো জোট বদলিয়ে ফেলেন।’
তার কথায়, ‘মোদি জীবনেও এই মডেলে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। গত ২২ বছরে তিনি তিনবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে একরকম একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে কাজ করেছেন। এখন হঠাৎ করে সমন্বয় করে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনীতি করা তার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এই নতুন কাজের ধরন তিনি কতটা গ্রহণ করতে পারবেন, তার ওপরেই এই সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে।’
সূত্র : বিবিসি