যে কারণে ধাক্কা খেলেন মোদি, হারালেন সংখ্যাগরিষ্ঠতা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ জুন ২০২৪, ১১:৫২
এই প্রথমবার দলকে নেতৃত্ব দিয়ে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন না নরেন্দ্র মোদি। এই প্রথমবার ধাক্কা খেতে হলো তাকে।
শুরু সেই ২০০২ থেকে। গুজরাটে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বারবার জিতিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনেও তার নেতৃত্বে বিপুলভাবে বিজেপি জিতেছে এবং একার ক্ষমতায় সরকার গঠনের জায়গায় পৌঁছে গেছে। এবারই ব্যতিক্রম হলো। ২২ বছরের মধ্যে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এই প্রথমবার পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে পারলেন না নরেন্দ্র মোদি।
গত দু’বারের মতো এবারো দলের প্রচার ছিল মোদি-কেন্দ্রিক। তিনি দুই শ’টির বেশি জনসভা ও রোড শো করেছেন। একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে কলকাতায় দুই দিন কাটিয়েছেন। উত্তর কলকাতায় বিশাল রোড শো করেছেন। দেশের প্রায় সব প্রান্তে গেছেন। চেষ্টার কোনো কসুর করেননি মোদি। তা সত্ত্বেও এবার তিনি পারেননি।
বারাণসীতে এবার জিতেছেন মোদি, কিন্তু ব্যবধান ও ভোটপ্রাপ্তির হার কমেছে। গতবারের তুলনায় নয় দশমিক ৩৮ শতাংশ ভোট কম পেয়েছেন। গতবার তিনি জিতেছিলেন চার লাখ ৭৯ হাজারের বেশি ভোটে। এবার জিতেছেন এক লাখ ৫২ হাজারের বেশি ভোটে। বারাণসীতে কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী অজয় রাইয়ের ভোট বেড়েছে ২৬ শতাংশের বেশি। তিনি চার লাখ ৬০ হাজার ভোট পেয়েছেন।
এবার লোকসভার আসনসংখ্যার নিরিখে দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে মোদি-ম্যাজিক কাজ করেনি। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৩৭টি আসন এবং কংগ্রেস ছয়টি। বিজেপি ৩৩ ও তাদের জোটসঙ্গী আরএলডি দুইটি আসন পেয়েছে।
মোদি ও যোগি আদিত্যনাথ প্রচার করা সত্ত্বেও কেন এমন হলো? প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা মনে করেন, ‘অনগ্রসর ভোট এবার ইন্ডিয়া জোটের দলগুলোতে ফিরেছে। বিজেপি-র কিছু নেতা চার শ’ আসন পেলে সংবিধান বদল করার কথা বলেছিল। সেটাকেই প্রচারের হাতিয়ার করেছিল ইন্ডিয়া জোট। সেই প্রচার কাজ করেছে।’
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জামিন পেয়ে প্রচারের শুরুতেই বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি চার শ’ আসন পেলে প্রথমেই যোগি আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেবেন। তার ওই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।
এমনকী দীর্ঘদিন পর নিজের রাজ্য গুজরাটেও সবগুলো লোকসভা আসন জিততে পারেননি মোদি। গত দু’বার পেরেছিলেন। এটাও তার একটা ধাক্কা।
জোটকে নেতৃত্ব দেয়া
তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হলে নরেন্দ্র মোদিকে জোট সরকরের নেতৃত্ব দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এতদিন তিনি যেভাবে সরকার চালিয়েছেন, সেই ভাবে কি পারবেন? গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাকে কি জোটের শরিকদের সাথে কথা বলতে হবে?
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদির জোট চালানোর কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাকে কাজের ধরণ বদলাতে হবে। বাজপেয়ি মডেলে ফিরতে হবে। আর বিজেপি-র কোর এজেন্ডা, যেমন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, সংবিধান সংশোধন এসব করা সম্ভব হবে না।’
কেন ধাক্কা?
শুভাশিসের বক্তব্য, ‘নরেন্দ্র মোদি চার শ’ পারের ডাক দিয়েছিলেন। অনেক কম পেয়েছেন। তার দায় তিনি না নিলেও মানুষ মনে করবে, তিনি পারেননি। আরেকটা কথা এই নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে, মানুষের সমস্যা, জিনিসের দাম বাড়া, চাকরি না পাওয়ার বিকল্প হিন্দুত্ব হতে পারে না। কিছুদিনের জন্য তা হতে পারে, কিন্তু বেশিদিন এই প্রশ্নগুলো হিন্দুত্ব দিয়ে চেপে রাখা যায় না।’
শুভাশিস মনে করেন, ‘বাজপেয়ি-আডবানির আমলে বিজেপি নিজের মতো করে একটা মূল্যবোধের রাজনীতি করত। এইভাবে কাউকে প্রথমে চোর বলে, তারপর তাকে দলে নিত না। মোদির আমলে অন্য দলের সাথে বিজেপি-র যাবতীয় বিভেদ মুছে গেছে। তাদের মহারাষ্ট্রে দল ভেঙে সরকারে আসাও বুমেরাং হয়েছে। মহারাষ্ট্র তাকে বিশাল ধাক্কা দিয়েছে।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে