পশ্চিমবঙ্গে কেন খারাপ ফলাফল করল বিজেপি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ জুন ২০২৪, ২০:৫৪, আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ২১:০২
পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের গণনা প্রায় শেষের পথে। কিন্তু যত রাউন্ড গণনা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে, তা থেকে কে কোন আসনে জিততে চলেছেন, তা মোটামুটি ভাবে স্পষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকটি আসনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই চলছে।
কিন্তু মোটের ওপরে যেটা স্পষ্ট, তা হল তৃণমূল কংগ্রেস গত লোকসভা নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ২২টি আসনের তুলনায় আসন সংখ্যা অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে চলেছে। অন্যদিকে বিজেপি যেখানে আগের নির্বাচনে-২০১৯ সালে জয়ী হয়েছিল ১৮টি আসনে, তা কমে যেতে চলেছে।
বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত যা ট্রেন্ড, তাতে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টিতে আর বিজেপি ১২টিতে এগিয়ে আছে।
জাতীয় কংগ্রেস আগের বারের জেতা দুটি আসনের বদলে একটি পেতে চলেছে হয়তো।
তৃণমূল কীভাবে আসনসংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হলো?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণের দুটি দিক আছে। একটি যদি হয় তৃণমূল কীভাবে আসনসংখ্যা বাড়াতে পারল আর দ্বিতীয়টি হল বিজেপি কেন খারাপ ফলাফল করল?
প্রথম দিকটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে বোঝা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ইত্যাদির মতো যেসব সামাজিক প্রকল্পগুলি চালায় যেগুলির মাধ্যমে সরাসরি অর্থ পৌঁছায় ভোটারদের হাতে। বিশেষত নারীদের হাতে, সেই ব্যবস্থায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, তা সুনিশ্চিত করতে চেয়েছেন ভোটাররা।
তৃণমূল কংগ্রেস তাদের প্রচারে এটা বারেবারে বলেছে যে বিজেপি যদি সরকারে আসে তাহলে এ ধরনের প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিত ভট্টাচার্য বলেন,‘সাধারণ মানুষ স্থিতাবস্থা চান। তারা দেখলেন, যদি বিজেপি সরকারে আসে, হোক না তা কেন্দ্রীয় সরকার, যদি তখন এই ধরনের সামাজিক প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেয়, তাহলে তো সমস্যায় তারাই পড়বেন।
তিনি আরো বলেন, আবার বিজেপি নেতারা বলছিলেন গতবারের থেকে সামান্য বেশি আসন পেলেও তারা রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দেবেন। এই হুমকিতে মানুষ কিছুটা হলেও আতঙ্কিত হয়েছেন।
আবার কয়েক বছর ধরেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রচার চালাচ্ছে যে কেন্দ্রীয় সরকার বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অর্থ আটকিয়ে রেখেছে। সাধারণ মানুষ নিজেরা প্রত্যক্ষভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছেন গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পে কাজ করেও তারা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না।
বিজেপির বিরুদ্ধে এই দুটি প্রচার তৃণমূল কংগ্রেসকে নির্বাচনি সাফল্য এনে দিতে অনেকটা সহায়তা করেছে।
বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি
দ্বিতীয় দফার ভোটের পর থেকেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করে। তার আগে নিজেদের ১০ বছরের কাজের খতিয়ান দিচ্ছিল তারা।
কিন্তু সেটা কতটা কাজ করছে ভোটে, তা নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা তৈরি হয় বিজেপি নেতাদের মনে। তাই মোদি নিজেই ধর্মীয় মেরুকরণের বিষয়গুলি সামনে আনতে থাকেন। যেমন কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে হিন্দু নারীদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে, হিন্দুদের ধনসম্পত্তি ছিনিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে ইত্যাদি।
যখনই এই মেরুকরণ শুরু করলেন তারা, পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান ভোটার, যার হয়তো একটা সময়ে ভাবছিলেন কংগ্রেস-বাম জোটকে ভোট দেয়ার কথা, তারা সম্ভবত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন যে বিজেপিকে আটকাতে হলে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত মমতা ব্যানার্জির দলকেই ভোট দেয়া দরকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশিস বিশ্বাস বলেন,‘এদিক থেকে বিজেপির প্রচারে বুমেরাং হয়েছে। তারা ভেবেছিল ধর্মীয় মেরুকরণ করে ফলাফল ভাল করবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হয়েছে বিপরীত। এটা তাদের প্রচারাভিযানে একটা বড় ভুল ছিল।'
তিনি বলেন, অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস জোট কিন্তু একনিষ্ঠ-ভাবে প্রচারণা চালিয়েছিল। তাদের অনেক নতুন, তরুণ মুখ জনপ্রিয়ও হয়েছেন ভোট প্রচারে। কিন্তু তাদের ভোটও মোটামুটিভাবে একই আছে গতবারের তুলনায়। কিছু ক্ষেত্রে কমেছে।
তিনি বিজেপির ভুল প্রচার নীতির যে বিষয়টি উল্লেখ করছিলেন, তারই ব্যাখ্যা দিলেন আরেক বিশ্লেষক বিশ্বজিত ভট্টাচার্য।
তার কথায়,‘বিজেপি এরাজ্যের প্রচারটাকে মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে অ্যান্টি ইনকামবেন্সির প্রচারে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এটাতো রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন নয়। এটা নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১০ বছরের কাজের পরীক্ষা ছিল। তাই তাদের প্রচার পরিকল্পনার গোড়ায় গলদ ছিল।’
এছাড়াও বিজেপির নিচু তলায় প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ, দলে অন্তর্দন্দ্বও কাজ করেছে।
ভোট গণনার দিনেও বিজেপি কর্মীরা বাড়িতে বসে টিভি দেখছেন, এই ঘটনাও জেনেছে বিবিসি।
সূত্র : বিবিসি