ভোটে কেন লড়লেন না প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ মে ২০২৪, ১৫:৪৮
শুক্রবারের বিকেলে রায়বেরিলির ধূলিধূসর জনপদে তখন মে মাসের চাঁদিফাটা রোদ। বেলা ১২টা থেকেই স্থানীয় আইটিআই গ্রাউন্ড উপছে পড়ছিল ভিড়ে, আর সেই সাড়ে ৩টার দিকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা যখন বলতে উঠলেন তখন প্রায় হাজার ৩০ মানুষে ঠাসা মাঠ যেন গর্জে উঠল!
মাত্র সাড়ে ৩ মিনিটের ছোট্ট ভাষণ, গুনে গুনে ২১০ সেকেন্ড। এই পরিমিতির কারণ, সভায় ছিলেন ভাই রাহুল গান্ধী, মা সোনিয়া গান্ধী আর কংগ্রেসের জোটসঙ্গী সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবও।
প্রিয়াঙ্কা কারো সময়ে ভাগ বসাতে চাননি, কিন্তু সব চেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত অভিনন্দন পেলেন তিনিই। বললেন সেই রায়বেরিলি-আমেঠির মাটির সাথে তাদের পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধনের কথা, মঙ্গলসুত্র ছিনিয়ে নেয়ার নাম করে কংগ্রেসের নামে যে অপপ্রচার চলছে তার বিরুদ্ধেও কিছু কথা।
সভায় কিন্তু কংগ্রেসের চেয়েও অনেক বেশি সমর্থক ছিল লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে সমাজবাদী পার্টির, তারাও তুমুল উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন। এমন কী তাদের নেতা অখিলেশের চেয়েও বেশি হাততালি পেলেন প্রিয়াঙ্কা, সেটা বললেও ভুল হবে না।
আসলে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা যে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় তারকা প্রচারক, তা বলার কোনো অপেক্ষাই রাখে না। প্রিয়াঙ্কা যাতে একটা অন্তত সভা করে যান, কিংবা রোড শো-তে একটিবার অন্তত মুখ দেখিয়ে যান, সেটার জন্যই গোটা ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি আবদার আসে কংগ্রেসের সদর দফতরে।
প্রিয়াঙ্কা
বিগত ২৫ বছর ধরে মা সোনিয়া বা ভাই রাহুলের হয়ে ভোটের সময় নির্বাচনি প্রচারে নামলেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন সবেমাত্র বছর ২৫। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে কংগ্রেস তাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দিয়ে পূর্ব উত্তরপ্রদেশে দলের কাজকর্ম দেখাশুনোর দায়িত্ব দেয়, সেই তার সক্রিয় রাজনীতির শুরু।, কিন্তু ২০১৯’র ভোটে তো নয়ই, এবারেও কিন্তু প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভোটে লড়ছেন না!
মাসকয়েক আগে সোনিয়া গান্ধী রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে যোগ দেয়ায় তার পুরনো যে রায়বেরিলি লোকসভা আসনটি খালি হয়েছিল, সেখানে অথবা ওটা না-হলে লাগোয়া আসন আমেঠিতে অন্তত প্রিয়াঙ্কা নিজে ভোটে লড়বেন দেশের লাখ লাখ কংগ্রেস সমর্থক সেটাই আশা করেছিলেন।
ওই দুটি আসনকেই কংগ্রেস, বা আরো নির্দিষ্ট করে বললে গান্ধী পরিবারের গড় বলা যায়। সেই ষাটের দশক থেকে ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী ফিরোজ গান্ধী রায়বেরিলির এমপি ছিলেন, পরেও ইন্দিরা, সোনিয়া ও রাহুল (এবং তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠরা) বারবার এখান থেকে জিতেছেন। সেই পরম্পরা ভাঙে ২০১৯ সালে, যখন বিজেপির নেত্রী স্মৃতি ইরানি আমেঠি আসনটি রাহুল গান্ধীর হাত থেকে ছিনিয়ে নেন।
মায়ের আসন রক্ষা করতে, না-হয় স্মৃতি ইরানিকে মুখের মতো জবাব দিতে‘প্রিয়াঙ্কা দিদি’ নিজে এবার নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন এই আর্জি জানিয়ে হাজার হাজার চিঠি, ই-মেইল বা অনুরোধও গিয়েছিল এআইসিসির কাছে।
কিন্তু সব জল্পনায় জল ঢেলে কংগ্রেস একেবারে শেষ মুহুর্তে জানায়, না রায়বেরিলি থেকে রাহুল নিজেই (তার দ্বিতীয় আসন হিসেবে) লড়বেন। এবং আমেঠিতেও প্রিয়াঙ্কা নন, কংগ্রেস মনোনয়ন দেয় গান্ধী পরিবারের দীর্ঘদিনের নির্বাচনি এজেন্ট ও বিশ্বস্ত কর্মী কে এল শর্মাকে।
প্রিয়াঙ্কা যদিও জানিয়েছেন, কে এল শর্মাকে জেতাতে তিনি রাতদিন এক করে দেবেন এবং দিচ্ছেনও, তারপরও এই প্রশ্নটা কিছুতেই চাপা পড়ছে না যে তিনি নিজে কেন লড়ছেন না?
কংগ্রেসের নবীন ও প্রবীণ নেতারা অনেকেই প্রিয়াঙ্কাকে দলের‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বলে বর্ণনা করে এসেছেন বহুকাল ধরে। ইন্দিরা গান্ধীর মুখচ্ছবি আর ভাবভঙ্গীর সাথে তার দারুণ সাদৃশ্য আছে বলে অনেকেই মনে করেন, সেটাও তার জনপ্রিয়তার আর একটা বড় কারণ।
এই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’টিকে সরাসরি যুদ্ধে নামিয়ে কেন কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে শক্ত একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলো না, এটা ভারতে এবারের নির্বাচনে একটা খুব বড় হেঁয়ালি!
সেই রহস্যের জবাব খুঁজতেই হানা দিয়েছিলাম দিল্লিতে ২৪ নম্বর আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দফতর আর উত্তরপ্রদেশে গান্ধী পরিবারের ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিত রায়বেরিলি-আমেঠিতে।
যেখানে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আবেদন
৮৪-তে দাদি ইন্দিরা ও তার সাত বছর পর বাবা রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর টেলিভিশনে তাদের শেষকৃত্যের লাইভ সম্প্রচারের সময় গোটা ভারত একটি কিশোরীকে চিতার পাশে বিষণ্ণ ভঙ্গীতে বসে থাকতে দেখেছিল। মেয়েটি কখনো বা মায়ের হাত শক্ত করে ধরে সান্ত্বনাও দিচ্ছিল।
বাবাহীনা ওই মেয়েটির সাথে আপামর ভারতবর্ষের অগাধ স্নেহ ও ভালবাসা সেই তখন থেকেই।
নব্বইয়ের দশকে ভারতের তথাকথিত ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’র সেই মেয়েটি যখন অতি সাধারণ ঘরের এক যুবক রবার্ট ভাদরাকে পছন্দ করে বিয়ে করলেন, সেটাও কিন্তু আমজনতার মধ্যে তার জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়েছিল।
অনেক পরে রবার্ট ভাদরার বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকই, কিন্তু কংগ্রেস নেতারা বিশ্বাস করেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ভাবমূর্তিতে তা এক ফোঁটাও কালি ছেটাতে পারেনি।
ইতোমধ্যে ক্রমান্বয়ে তার মা সোনিয়া গান্ধী ও বড় ভাই রাহুল গান্ধীও রাজনীতিতে এসেছেন, কিন্তু পরিবারের সদস্যদের হয়ে প্রচার করলেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে কিন্তু কংগ্রেস রাজনীতির বৃহত্তর পরিসরে বহু দিনই দেখা যায়নি।
২০০৮ সালে ভেলোরের জেলে গিয়ে তিনি বাবা রাজীব গান্ধীর হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত নলিনী শ্রীহরণের সাথে আবেগঘন এক গোপন বৈঠকও করেন। দেশ সে কথা জানতে পেরেছিল অনেক পরে, নলিনীর মুক্তিতে প্রিয়াঙ্কা কোনো আপত্তি জানাননি এই তথ্য সামনে আসার পর।
১৯৯৯ সালে তিনি যখন আমেঠিতে মায়ের হয়ে প্রচার করছেন, গ্রীষ্মের এক সকালে গৌরীগঞ্জ হাসপাতালের গেস্ট হাউসের লনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সাথে দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা বলার সুযোগ হয়েছিল।
সেই সিকি শতাব্দী আগে তিনি কথায় কথায় বলেন,‘আমাদের গোটা পরিবারই আসলে দেশের জন্য বলিপ্রদত্ত। ফলে ব্যক্তিগতভাবে আমি কী চাই সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, রাজনীতিতে আজ না-হোক কাল আমাকেও হয়তো আসতেই হবে!’
এরপরও কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে তার আরো ২০ বছর লেগে গেছে।
মাঝে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও রায়বেরিলি-আমেঠির মাটি কামড়ে তাকে প্রচার করতে দেখেছি।
শুধু বড় জনসভা নয়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছোট ছোট পথসভাতেও গেছেন অম্লানবদনে গরিবের কুঁড়েঘরে ঢুকে গ্রামের মানুষের ভালমন্দের খোঁজখবর নিয়েছেন। তখনো গাড়িতে চেপে হাত নাড়তে নাড়তে রোড শো-র অত চল হয়নি, কিন্তু প্রিয়াঙ্কাকে ওই সময় হেঁটে লম্বা লম্বা পদযাত্রা করতেও দেখেছি।
কিন্তু প্রতিবার ভোট মিটে যেতেই প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও রাজনীতি থেকে উধাও হয়ে যেতেন।
অন্তত এমনটাই চলেছে বছর পাঁচেক আগে পর্যন্ত। অবশেষে রাজনীতিতে এসেছেন, কিন্তু ভোটের লড়াইতে এখনো নয়!
অথচ প্রিয়াঙ্কা হিন্দিতেও দারুণ চোস্ত, তার চেহারা ও কথাবার্তার মধ্যে পুরনো দিনের মানুষরা ইন্দিরা গান্ধীকে খুঁজে পান, তার ভাষণ দেয়ার ভঙ্গী প্রায় অননুকরণীয় এগুলোই তাকে একটা অন্য রকম জনপ্রিয়তা দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
কংগ্রেসের নেতাদের একটা অংশ মনে করেন, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রাজনীতি থেকে দীর্ঘদিন একটা দূরত্ব রেখেছেন বলেই এখনো তার‘আবেদন’ অক্ষুণ্ণ আছে।‘ব্রহ্মাস্ত্র’ও যেখানে-সেখানে ব্যবহার করলে তার ধার কমে যায় ফলে প্রিয়াঙ্কাকে ‘তুলে তুলে’ ব্যবহার করে কংগ্রেস আসলে ভুল করেনি বলেই তাদের যুক্তি।
তবে রায়বেরিলির মাঠে প্রিয়াঙ্কাকে দেখতে আসা সমাজবাদী পাটির মাঝারি মাপের নেতা ব্রিজশরণ যাদব আবার পরামর্শ দিলেন,‘তুরুপকা ইক্কা ভি সহি টাইমিং মে ইস্তেমাল করনা চাহিয়ে! খেল খতম হোনে কা বাদ কেয়া ফায়দা!’
সোজা কথায়, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যদি তুরুপের তাসই হন, তাহলে তাকে তো সঠিক সময়ে ব্যবহার করতে হবে? খেলা মিটে যাওয়ার পর সেই তাস ফেলে কী লাভ?
অন্যভাবে বললে, কংগ্রেস কেন তাকে এবারেও প্রার্থী করল না, ব্রিজশরণ তার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না!
ভোটে না-লড়ার সম্ভাব্য কারণ
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা কেন এবারে ভোটে লড়ছেন না, তার অন্তত তিন-চারটে কারণ‘কংগ্রেস সার্কিটে’ বা সাধারণ কংগ্রেস কর্মীদের সাথে কথা বললেই যে কেউ শুনতে পাবেন। বিজেপির নেতা-কর্মীরা অবশ্য তার সাথে যোগ করবেন আরো দু’তিনটে!
যে ব্যাখ্যাটা সব চেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে, তা হলো একটা লোকসভা কেন্দ্রে আটকে পড়লে বাকি দেশে ঘুরে ঘুরে যে অমানুষিক পরিশ্রম করে প্রিয়াঙ্কা এই নির্বাচনে প্রচারটা করছেন, সেটা কে করত? আমেঠি বা রায়বেরিলিতে আটকে পড়লে সুদূর মোরেনা, যোধপুর বা লুধিয়ানায় তিনি কীভাবে যেতেন?
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নিজেও দু-একটি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাতকারে মোটামুটি একই ধরনের যুক্তি দিয়েছেন। এবং বলেছেন, দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাই নাকি তিনি মেনে নিয়েছেন।
প্রায় তিন যুগ ধরে কংগ্রেস কভার করা দিল্লির প্রবীণ সাংবাদিক জাভেদ আনসারির কথায়,‘এবারে কংগ্রেসের সব চেয়ে বড় ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ অবশ্যই প্রিয়াঙ্কা। হিন্দিতে তার মতো ভাষণ দেয়ার দক্ষতা, মানুষের সাথে কানেক্ট করতে পারার ক্ষমতা এমন কী রাহুল গান্ধীরও নেই। সেই জায়গায় তাকে একটা কেন্দ্রে প্রচারে আটকে ফেললে বিজেপির পাতা ফাঁদে পা দেয়াই হত!’
গান্ধী পরিবারকে নিয়ে বহুকাল ধরে লেখালেখি করছেন বর্ষীয়ান রাজনৈতিক বিশ্লেষক রশিদ কিদোয়াই, তিনি আবার এর পেছনে অন্য একটা কারণ দেখাচ্ছেন।
কিদোয়াই বলেন,‘প্রিয়াঙ্কা এটা অনুধাবন করেছেন যে ২০২৪-র এই নির্বাচন রাহুলের নির্বাচন। ভারত জোড়ো যাত্রায় সারা দেশ পরিক্রমা করে রাহুল ভোটের আগে যে জমিটা তৈরি করেছেন এবং যে ধরনের প্যাশনেট প্রচার চালাচ্ছেন তাতে এই স্বীকৃতি তার প্রাপ্য। প্রিয়াঙ্কা ভোটে লড়লে মূল ফোকাসটা ভাইয়ের ওপর থেকে সরে আসতে পারে, যেটা তিনি কখনওই চান না।’
কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা, এই ভাই-বোনের জোড়া ফলাটা ব্যবহার করলে ক্ষতিটা কোথায়, এটা আবার দলের অনেক সাধারণ সমর্থকের বোধগম্য নয়!
রায়বেরিলি শহরে কংগ্রেসের মূল কার্যালয়ের বাইরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ছবিটাই সবচেয়ে বড়, তার অর্ধেক সাইজে সোনিয়া, রাহুল, ইন্দিরা, রাজীব বাকিরা সবাই! সেই কার্যালয়ে দলের ছোট-বড়-মাঝারি স্তরের সব কর্মকর্তাই আবার প্রায় একমত, প্রিয়াঙ্কা এবারে লড়েননি তো কী হয়েছে, সুযোগ তো সামনে পড়েই রয়েছে!
যুব কংগ্রেসের জাতীয় প্রেসিডেন্ট বিভি শ্রীনিবাসের যুক্তিটা ছিল, রাহুল গান্ধী যেহেতু দক্ষিণ ভারতের ওয়েনাড় ও উত্তর ভারতের রায়বেরিলি দুটি কেন্দ্র থেকেই অবধারিত জিতবেন এবং একটা তাকে ছেড়ে দিতেই হবে, সে ক্ষেত্রে ভাইয়ের ছেড়ে দেয়া রায়বেরিলি আসনের উপনির্বাচনে জিতেই শেষমেশ প্রিয়াঙ্কা পার্লামেন্টে যাবেন।
যার অর্থ, হয়তো মাসদুয়েকের মধ্যেই রায়বেরিলিতে আবার ভোট হবে এবং তখন ‘প্রিয়াঙ্কা বহেন’কে জেতাতে রায়বেরিলির মানুষ সানন্দে ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন।
কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে কোনো ফারাক হবে না, এই যা!
রায়বেরিলিতে হাতেগানা যে ক’জন বিজেপি সমর্থকের সাথে কথা হল বা টিমটিমে অফিসঘরে তাদের প্রার্থী দীনেশ প্রতাপ সিংয়ের কর্মীদের সাথে দেখা হলো, তারা সবাই আবার প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ভোটে না-লড়ার গড়গড় করে একগাদা কারণ শুনিয়ে দিলেন!
যেমন : এক, উনি ভয় পেয়েছেন! দুই, প্রার্থী হলেই নির্বাচন কমিশনকে হলফনামা দিয়ে সম্পত্তির হিসেব দিতে হবে এবং শত শত কোটি টাকার সে সব জিনিস প্রিয়াঙ্কা ফাঁস করতে চান না!
তিন নম্বরটা আরো মারাত্মক : সোনিয়া গান্ধীই না কি চান না মেয়ে এমপি হয়ে পার্লামেন্টে যাক এবং ছেলেকেও ম্লান করে দিক! যথারীতি মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
‘প্রিয়াঙ্কা বহেন কো ভি লাইয়ে’
রায়বেরিলিতে শুক্রবারের জনসভা থেকে সোনিয়া গান্ধী যে সংক্ষিপ্ত ও আবেগী ভাষণ দিলেন, তার মূল কথাটা ছিল, এখানকার মাটির সাথে আমাদের বহু বহু বছরের নাড়ির টান! আজ আমি নির্বাচনে লড়তে পারছি না, কিন্তু আমার ছেলেকে আপনাদের হাতে সঁপে দিয়ে যাচ্ছি!
সাথে সাথে হাজার হাজার মানুষ তুমুল হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়লেন, কিন্তু পাশাপাশি মৃদু গুঞ্জনও উঠল, ‘প্রিয়াঙ্কা বহেন কো ভি লাইয়ে’!
মানে রাহুলকে জেতানোর দায়িত্ব তো আমরা অবশ্যই নেব, কিন্তু বোন প্রিয়াঙ্কাকেও আমাদের মাঝে চাই, এটাই ছিল সোনিয়া গান্ধীর কাছে জনতার আবদার!
গান্ধী পরিবারের সাথে প্রায় ৬৫ বছরের সুদীর্ঘ আত্মীয়তার সুবাদে রায়বেরিলি-আমেঠির মানুষ হয়তো মনে করেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেও তাদের এমপি হিসেবে পাবার অধিকার আছে, আর সে কারণেই এটা কোনো অন্যায় দাবি নয়।
কিন্তু প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে কেন এখনো কোনো কেন্দ্রে লড়তে বলা হচ্ছে না, এটা আসলেই একটা দুর্বোধ্য ধাঁধা।
ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক ও জনপ্রিয় ইউটিউবার অজিত আনজুম গত বেশ কিছুদিন ধরে রায়বেরিলি-আমিঠি চষে বেড়াচ্ছেন, আইটিআই গ্রাউন্ডের জনসভা থেকে বেরোনোর সময় ভিড়ের মাঝেই তাকেও ঠিক এই প্রশ্নটাই করলাম।
অজিত আনজুম হেসে বলেন,‘সত্যি কথা বলতে আসল উত্তরটা আমারও জানা নেই! যদিও কেউ কেউ এমনও বলছেন, আমেঠিতে নিজে না লড়ে পারিবারিক গোমস্তাকে জিতিয়ে এনে প্রিয়াঙ্কা আসলে স্মৃতি ইরানিকে চরম আপমান করতে চাইছেন।’
‘তবে যদি রাজনীতির একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে আমাকে আন্দাজ করতে বলেন, তাহলে বলব হয়তো কোথাও প্রিয়াঙ্কার একটা ভয় কাজ করছে। কিংবা কোনো কারণে কোনো দ্বিধা বা সংকোচ! যদিও এটা আমার অনুমান মাত্র, তার বেশি কিছু নয়।’
‘তবে একটা কথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এটার উত্তরটা জানেন শুধু সোনিয়া, রাহুল আর প্রিয়াঙ্কা এই তিনজনই, এমন কী কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গেরও আসল কারণটা নিয়ে বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা নেই এটা গ্যারান্টি দিয়েই বলা যায়!’
এরই মধ্যে ধুলো উড়িয়ে মাঠ থেকে বেরোতে শুরু করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর লম্বা কনভয়, তিনি রওনা হয়ে যান পরের জনসভার পথে।
(উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি ও আমেঠি আসনে ভোটগ্রহণ হবে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফায়, আগামী ২০ মে, সোমবার। ভোট গণনা বাকি দেশের সাথে একই সাথে, আগামী ৪ জুন।)
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা