২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভারতে কত রকমের করোনাভাইরাস ঘুরে বেড়াচ্ছে?

ভারতে কত রকমের করোনাভাইরাস ঘুরে বেড়াচ্ছে? - ছবি : সংগৃহীত

মারণ অণুজীব করোনাভাইরাস যে সময়ের সাথে সাথে তার চরিত্রে বদল ঘটাচ্ছে, এ কথা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যেই গত বছরের শেষের দিক থেকে ইউনাইটেড কিংডমে ছড়িয়ে পড়ে করোনার নতুন ধারা। জানা যায় যে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট নামে করোনাভাইরাসের নতুন এক গোত্র তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে ওই দেশে। বিজ্ঞানীরা এটাও জানাতে ভোলেননি ওই সময়ে যে এই নতুন ধারার করোনাভাইরাস আগের চেয়ে অনেক বেশি ছোঁয়াচে, অন্তত পক্ষে ৭০ শতাংশ বেশি আগ্রাসী সে। এর পরই দেখতে দেখতে ছড়িয়ে পড়ে খবর, ভারতেও এই ইউকে ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের পরিসংখ্যান উঠে আসতে থাকে। ওই সময় পেরিয়ে এসে এখন ভারতও দাঁড়িয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঝড়ের মুখে, প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে সংক্রমিতের সংখ্যা। আর ওই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যাচ্ছে যে করোনাভাইরাসের ইউকে ভ্যারিয়েন্ট ভারতে বেশ ভালো মতো জাঁকিয়ে বসেছে।

সম্প্রতি ভারত থেকে সংগ্রহ করা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনা বলছে যে এদের মধ্যে ইউকে ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছেন ৭৩৬ জন। তার মধ্যে পাঞ্জাবে ৩৩৬ জন, তেলঙ্গানায় ৮৭ জন, মহারাষ্ট্রে ৫৬ জন, গুজরাতে ৩৯ জন, কর্নাটকে ৩০ জন, পশ্চিমবঙ্গে ১০ জন ও রাজস্থানে ২২ জনের শরীরে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান মিলেছে। তবে শুধুই করোনাভাইরাসের ইউকে ভ্যারিয়েন্ট নয়, পশ্চিমের দেশগুলোর মতো ভারতেও অতিমাত্রায় সক্রিয় ভাইরাসের আরো দুই গোত্র, এরা হলো সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ও ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। এ ক্ষেত্রে দেশে সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৩৪; তার মধ্যে তেলঙ্গানায় ১৭ জন, মহারাষ্ট্রে ৫ জন, দিল্লিতে ৪ জন, কর্নাটকে ৩ জন, অন্ধ্রপ্রদেশে ৩ জন, তামিলনাড়ুতে ১ জন এবং পশ্চিমবঙ্গে ১ জনের শরীরে এই ভাইরাস মিলেছে। তেমনই দেশে ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের মোট সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১ জন, মহারাষ্ট্রে এর সন্ধান মিলেছে।

তবে শুধু এই তিন ভ্যারিয়েন্ট নয়, এরা আবার নিজেদের মধ্যে বংশবিস্তার করে নতুন নতুন মিউটেশনেরও জন্ম দিচ্ছে। যেমন, N501Y, E484Q, L452R, N440K। এই মিউটেশনগুলো কীভাবে সংক্রমিত করছে জনতাকে, তার পরিসংখ্যানটাও দেখে নেয়া যাক। এক্ষেত্রে N501Y মিউটেশনে আক্রান্ত জনতার সংখ্যা পঞ্জাবে ৩২৪, দিল্লিতে ৭৫ এবং গুজরাতে ১৬। E484Q মিউটেশনে আক্রান্ত জনতার সংখ্যা মহারাষ্ট্রে ১১২, মধ্যপ্রদেশে ৫ এবং এবং পঞ্জাবে ৫। E484Q এবং L452R যৌথ মিউটেশনে আক্রান্ত জনতার সংখ্যা মহারাষ্ট্রে ২০৬, দিল্লিতে ৯ ও পাঞ্জাবে ২। L452R মিউটেশনে আক্রান্ত জনতার সংখ্যা মহারাষ্ট্রে ১১৮, পাঞ্জাবে ৪ ও গুজরাতে ২। N440K মিউটেশনে আক্রান্ত জনতার সংখ্যা কেরলে ১২৩, তেলঙ্গানায় ৫৩ ও মহারাষ্ট্রে ৩৬।

এই বিশদ সরকারি পরিসংখ্যান পেশ করার অর্থ একটাই- ভারত কিন্তু খুব একটা নিরাপদে নেই। এই ভ্যারিয়েন্ট এবং তার মিউটেশনগুলো কিভাবে ছড়াচ্ছে, সে সম্পর্কেও কোনো সুষ্ঠু সিদ্ধান্তে এখন পর্যন্ত উপনীত হতে পারেননি ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। যদি দেখা যায় যে এই ভ্যারিয়েন্টগুলো পর্যটনের সূত্রে ছড়িয়েছে, তাহলে চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু যদি দেখা যায় যে এগুলো এখন ভারতেই বংশবিস্তার করছে, তাহলে গুরুতর আশঙ্কার কারণ আছে বলে জানাচ্ছেন তারা। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আক্রান্তদের ডিএনএ নিয়ে পরীক্ষা চলছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে না। এই লক্ষ্যে INSACOG বা Indian SARS-CoV2 Consortium on Genomics নামে সংগঠন তৈরি করেছে সরকার, কিন্তু আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কাজ এগোচ্ছে না। তাছাড়া রাজ্যগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে নমুনা কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে না, ওই বিষয়টিও প্রকাশ্যে এসেছে।

সূত্র : নিউজ ১৮


আরো সংবাদ



premium cement