দলিতের সঙ্গে ব্রাহ্মণ কন্যার বিয়ে নিয়ে তোলপাড় তামিলনাড়ুতে
- এ এইচ ইমরান
- ০৮ অক্টোবর ২০২০, ০৬:২১
বিয়ে করাও এক বিষম বিপদ! এটা অবশ্য ভুক্তভোগী স্বামীরা বহু যুগ থেকেই বলে আসছেন। তবে তা বিয়ে করে কিছু দিন সংসার করার পর।
কিন্তু ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের এআইএডিএমকে দলভুক্ত একজন বিধায়ক বিয়ে করা মাত্রই ফাঁপরে পড়েছেন। বিয়ে করার ‘অপরাধে’ তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। শুধু তাই নয়, উচ্চ আদালতেও তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
আর হবে নাই বা কেন? শাসকদল এআইএডিএমকে-র এই বিধায়ক ‘বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়েছিলেন’। বামন হলে চাঁদের দিকে হাত বাড়ানো যে নিষেধ, এই ধ্রূব সত্যটি ওই বিধায়ক বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন। বিধায়ক ভদ্রলোকের নাম এ. প্রভু। তিনি হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী নিম্নবর্ণ বা দলিত হয়েও বিয়ে করে বসেছিলেন এক ব্রাহ্মণ-কন্যাকে। যে-সে ব্রাহ্মণ নয়, তার শ্বশুরমশাই তামিলনাড়ুর একটি মন্দিরের পুরোহিত।
এমনিতে তামিলনাড়ুতে জাতপাতের বড়ই বাড়াবাড়ি। ইরোড ভেঙ্কাটাপ্পা রামাস্বামী পেরিয়ার ও বাবা সাহেব আম্বেদকরের সংগ্রাম কিংবা এআইএডিএমকে বা ডিএমকে-র ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন, কোনো কিছুই যে সমাজ থেকে উচ্চবর্ণের প্রভাব এবং তাদের বিরুদ্ধে ‘স্বীকৃত বৈষম্য’-কে দূর করতে পারেনি, দলিত বিধায়ক এ. প্রভু তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়। সমাজ ও মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশে ও ব্রাহ্মণ-কন্যার সঙ্গে দলিত বা ‘অস্পৃশ্য জাতি’র বিবাহ বন্ধনের প্রতিবাদে কন্যার পিতা ওই পুরোহিত স্বামীনাথন গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেন। তবে রক্ষা! তিনি প্রাণ বিসর্জন দিতে সক্ষম হননি। বিয়ে নিয়ে অশান্তির খবর পুলিশের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। মোক্ষম মুহূর্তে তারা এসে ওই দলিত বধূর পিতাকে রক্ষা করেন।
প্রাপ্তবয়স্ক ওই ব্রাহ্মণ-কন্যা এস. সৌন্দর্যার পিতার এই বিয়েতে একেবারেই মত ছিল না। বিয়েটা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিধায়কের কোয়ার্টারে। কিন্তু ব্রাহ্মণ-কন্যার পিতা চুপ করে এই বিয়ে মেনে নেবেন, তা কী হয়! তিনি সদলে বিধায়কের বাসস্থানে হামলা চালান। ‘গেট ক্রাশ’ করে তিনি বিবাহ মণ্ডপে ঢুকে পড়েন। তবে ‘মিয়া-বিবি রাজি, তো ক্যায়া করেগা কাজি’, এই প্রবাদ বাক্য অনুযায়ী তিনি খুব সুবিধা করতে পারেননি। তূনই ব্যর্থ পিতা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা এ সম্পর্কে বলেছেন, বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পরই কালাকুর্চি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক এ. প্রভু সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন। এতে তিনি বলেন, ‘সৌন্দর্যা ও আমি স্বইচ্ছায় পরস্পরকে বিয়ে করেছি। এই বিবাহে কোনো জোরজবরদস্তি কিংবা অপহরণের ঘটনা নেই। আমি সৌন্দর্যাকে অপহরণ করে বিয়ে করেছি বলে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা গত ৪ মাস ধরে পরস্পরের সঙ্গে ভালোবাসায় আবদ্ধ ছিলাম।’
অন্যদিকে, দলিতের সঙ্গে ব্রাহ্মণ-কন্যার বিয়েতে চরম অসন্তুষ্ট কন্যার পিতা। তার অভিযোগে তিনি বলেছেন, এমএলএ তার কন্যাকে অপহরণ করে বিয়ে করেছে। কন্যার পিতার আরও অভিযোগ, বিগত ৪ বছর আগে যূন তাঁর মেয়ে সাবালিকাও হয়নি, তখন থেকেই প্রভু তাকে প্রেমের অভিনয় দ্বারা প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। অবশ্য সৌন্দর্যা ও প্রভু এ কথা অস্বীকার করে বলেছেন, তাদের সম্পর্ক মাত্র ৪ মাসের। সৌন্দর্যা আরও বলেছেন, তিনি প্রভুকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। এরমধ্যে কোনও জোরাজুড়ির ঘটনা নেই।
এ দিকে মামলাটি এখন রয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্টে। বুধবার মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা। সকলের দৃষ্টি এখন মাদ্রাজ হাইকোর্টের দিকে। প্রভু ও সৌন্দর্যার বিয়েটা শেষপর্যন্ত টিকবে তো! ব্রাহ্মণ কন্যা কি নিম্নবর্ণের এক দলিতের স্ত্রী থেকে ঘর করতে পারবেন?
সূত্র : পুবের কলম