রাজস্থানে ‘জয় শ্রী রাম’ ও ‘মোদি জিন্দাবাদ’ স্লোগান না দেয়ায় মুসলিম বৃদ্ধকে বেধড়ক মারধর
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ আগস্ট ২০২০, ১০:২৪
ভারতের রাজস্থানে ‘জয় শ্রী রাম’ ও ‘মোদি জিন্দাবাদ’ ধ্বনি না দেয়ায় এক মুসলিম অটো চালককে বেধড়ক মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। গফফার আহমেদ কাছওয়া (৫২) নামে ওই অটোচালকের কাছে থেকে নগদ ৭০০ টাকা ও হাত ঘড়িও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।
শনিবার গণমাধ্যমে প্রকাশ, শুক্রবার রাজস্থান রাজ্যের সিকার জেলার ওই ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত শম্ভুদয়াল জাট (৩৫) এবং রাজেন্দ্র জাট (৩০) নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত অটো চালক গফফার আহমেদ কাছওয়া বলেন, মারধরের ফলে তার দাঁত ভেঙে গেছে এবং মুখ ও চোখে আঘাত লেগেছে। তাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়া হয় বলেও অভিযোগ।
সিকার সদর থানার পুলিশ কর্মকর্তা পুষ্পেন্দ্র সিং বলেন, এফআইআরের ভিত্তিতে আমরা দু’জনকে গ্রেফতার করেছি। ধৃতরা হল- শম্ভুদয়াল জাট (৩৫) এবং রাজেন্দ্র জাট (৩০)। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, ওই দুই ব্যক্তি গাড়ি দাঁড় করিয়ে মদ পান করছিল। এরপরেই গফফার আহমেদ কাছওয়াকে আটকে তাকে মারধর করা হয়।
অভিযোগপত্রে ক্ষতিগ্রস্ত অটো চালক গফফার আহমেদ জানান, এক ব্যক্তি তাকে ‘মোদি জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিতে বলতে বলেন। তিনি তা অস্বীকার করলে তাকে সজোরে চড় মারা হয়। এরপরেই তিনি গাড়ি নিয়ে সিকারের দিকে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা গাড়ি অনুসরণ করে জগমালপুরার কাছে তাকে আটকায়।
তিনি বলেন, এসময় জোর করে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় এবং তারা আমাকে জোর করে ‘মোদি জিন্দাবাদ’ ও ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে বলে। মারধরের পাশাপাশি তাকে পাকিস্তানে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয় বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দেওয়ান আব্দুল গণি কলেজের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও সমাজকর্মী ড. মুহাম্মাদ ইসমাইল শনিবার বলেন, ‘ভারতে যাদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেয়ার কথা নয়, যারা মনেপ্রাণে চায় না তা বলতে, তাদেরকে জোর করে বলানো হচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনকে। এখন আবার নতুন করে গত ৫ আগস্ট রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যদিয়ে বিজেপি আরো একটা চেষ্টা করতে চাচ্ছে, সমান্তরালভাবে শ্রী রামের পাশাপাশি মোদিকেও আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে। আসলে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ধরে রাখা। দীর্ঘ প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে এপর্যন্ত গঠনমূলক কাজকর্ম দেখলে স্পষ্ট হবে, বর্তমানে ভারতের অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বেকারত্ব ও অন্যান্য সমস্যা বেড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ওরা ধর্মকে কেন্দ্র করে একটা শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। যার মধ্য দিয়ে অশিক্ষিত মানুষজনকে মগজ ধোলাই করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে। এটাই ওদের মূল উদ্দেশ্য এবং এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। কারণ জোর করে কাউকে ‘জয় শ্রীরাম’ও বলানো যায় না, আর মোদির নামে ধবনিও দেয়ানো যায় না। শাসকশ্রেণির প্রশ্রয়ে এসব যুবক এবং বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব কাজকর্ম করাচ্ছে।’
আমরা বরাবরই এসবের নিন্দা জানিয়েছি এবং সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এসব ঘটনার নিন্দা জানাবে বলেও অধ্যাপক ও সমাজকর্মী ড. মুহাম্মাদ ইসমাইল মন্তব্য করেন। সূত্র : পার্সটুডে