২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পঙ্গপাল প্রতিরোধে একসাথে ভারত-পাকিস্তান

- ছবি : সংগৃহীত

পাকিস্তান হয়ে পঙ্গপালের ঝাঁক আসতে শুরু করায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বিষয় ফের একবার সামনে এসেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এ ব্যাপারে পাকিস্তানের সহায়তা চাওয়া হয়েছে এবং উত্তরের অপেক্ষা করা হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চাপান-উতোর থাকলেও পঙ্গপাল সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় সহযোগিতা কিন্তু যুদ্ধ, হামলা এবং রাজনৈতিক ঝামেলা সত্ত্বেও টিকে থেকেছে।

১৯৯৩ সালে ভারতের জয়সলমিরে যখন পঙ্গপালের ঝাঁক দেখা গিয়েছিল, সে সময়ে পঙ্গপাল সতর্কীকরণ কর্মকর্তা অনিল শর্মাকে এক উচ্চপদস্থ অফিসার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারত-পাক সীমান্তে বেড়া থাকা সত্ত্বেও পঙ্গপাল আসছে কী করে? শর্মা উত্তর দিয়েছিলেন, পঙ্গপাল একধরনের কীট যারা বেড়া মানে না।

প্রাদুর্ভাবের ইতিহাস
আধুনিক রেকর্ড অনুসারে পঙ্গপাল দেখা দিতে শুরু করে উনিশ শতকের গোড়ায়, এবং ১৮১২ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে ভারতে ৮ বার পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল, নবমবার দেখা গিয়েছিল ১৮৯৬-১৮৯৭-এ।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পঙ্গপাল সতর্কীকরণ দফতর প্রকাশিত ইতিহাস থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯০০-য় প্রায় প্রতি বছর পঙ্গপালের গুরুতর হানার ঘটনা ঘটত ভারতে। ১৯২৬-১৯৩১ পর্যন্ত পাঁচ বছরের হানায় প্রায় দু কোটি টাকার শস্যের ক্ষতি হয়েছিল যা এখনকার বাজারদরে ১০০ মিলিয়ন ডলার।

তখনকার সময়ে রাজন্যশাসিত রাজ্য ও প্রদেশগুলির এর মোকাবিলা করার জন্য নিজস্ব পরিকাঠামো থাকলেও কোনো সমন্বয় ছিল না। ১৯২৬-৩২-এর হানার পরে ভারতের ব্রিটিশ সরকার একটি গবেষণা খাতে অর্থ ব্যয় করে, যার জেরে ১৯৩৯ সালে গড়ে ওঠে পঙ্গপাল সতর্কীকরণ সংস্থা- এর সদর দফতর ছিল দিল্লিতে ও সাবস্টেশন করাচিতে।

১৯৪১ সালে মরু এলাকার পঙ্গপাল হানায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজন্যশাসিত রাজ্য ও প্রদেশগুলির মধ্যে এক সম্মেলন হয়। ১৯৪২ সালে তার প্রসার ঘটে এবং ১৯৪৬ সালে একটি আমলাতান্ত্রিক চেহারা নেয়।

সমন্বয়ের শুরু
পঙ্গপালের হানায় ভুগছিল ইরানও। ১৮৭৬ সালে এবং ১৯২৬-৩২-এ। এফএডব্লিউ বলছে, “সম্ভবত প্রথম সমন্বয়ের ঘটনা ঘটে ১৯৪২ সালে, যখন দক্ষিণ পশ্চিম পারস্যের পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেন ব্রিটিশ ভারতের প্রতিনিধিরা। পরের দু বছরে সাহায্য করে ওমান ও পারস্যকে। এর পরেই মরু পঙ্গপাল এলাকার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, ১৯৪৫ সালে তেহরানে, যাতে অংশ নিয়েছিল ইরান, ব্রিটিশ ভারত, সৌদি আরব ও মিশর। দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫০ সালে ফের তেহরানে, এবার অংশ নেয় পাকিস্তানও।”

পঙ্গপালের দঙ্গল শহরাঞ্চলে কেন, এরা ফসলের কতটা ক্ষতি করতে পারে?
৫০-এর দশকে ভারত ও ইরানের মধ্যে সহযোগিতা ঘটে এবং সৌদি আরবে পঙ্গপালের সমীক্ষায় দুটি বিমান দেয় পাকিস্তান। ১৯৫৮-৬১ সালের ফের হানার পর, ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানকে নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়, ১৯৬৪ সালে গড়ে ওঠে ফাওয়ের মরু পঙ্গপাল কমিশন। কমিশনের বার্ষিক সভায় মিলিত হয়। ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালে কমিশনের বার্ষিক সভা হয়নি, তবে ১৯৭১ সালে হয়েছিল। গত ৬ বছরে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক খারাপ হলেও ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে এই বৈঠক হয়েছে।

এই বৈঠকে কেবল পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরাই উপস্থিত থাকেন, কোনো কূটনীতিবিদ নয়।

ভারত ও পাকিস্তান
১৯৭৭ সালে দুই দেশ সীমান্তে মিলিত হয়। ১৯৯১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত বিশেষ সীমান্ত সমীক্ষা অনুষ্ঠিত হত গ্রীষ্মের সময়ে, থাকতেন দু দেশের পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা।

২০০৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিবছর, ২০১১ বাদ দিয়ে, যৌথ সীমান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রতি বছর। ২৬-১১-র মুম্বাই হামলার মত কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি সত্ত্বেও ঘটেছে। মাসিক বৈঠক সংঘটিত হয়েছে জুন ও অক্টোবর-নভেম্বরে, জিরো পয়েন্টে, পশ্চিম বারমেরে, রাজস্থানের মত জায়গায়। দু দেশের তিন-চারজন করে অফিসার এই বৈঠকে উপস্থিত থাকেন। প্রতি বছর এক এক দেশ নিজেদের সীমান্তে বৈঠক করে।

সমস্ত প্রস্তুতি আগে করা হয়ে থাকে এবং সীমান্ত পেরোনোর প্রটোকল মানা হয়। বৈঠক হয় সকালে। এই বৈঠকে পাক্ষিক বুলেটিন, ফাও বুলেটিন এবং সমীক্ষাস্থলের মানচিত্র, পঙ্গপালের বাসস্থান, সবুজ এলাকা ও উভয় দেশের বৃষ্টিপাত নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। এই আলোচনায় রাজনীতি ও কূটনীতি বাদ রাখা হলেও নিরাপত্তাহীনতা ও অতি সংবেদনশীলতার কারণে এই কমিশনের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে গণ্য।

১৯২৬-১৯৩১ পর্যন্ত পাঁচ বছরের পঙ্গপাল হানায় প্রায় দু কোটি টাকার শস্যের ক্ষতি হয়েছিল যা এখনকার বাজারদরে ১০০ মিলিয়ন ডলার। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।


আরো সংবাদ



premium cement