০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর সব হারিয়ে কয়েক শ' মানুষ আশ্রয় শিবিরে

হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই বলছেন তাদের ঘরের সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে - ছবি : বিবিসি

ভারতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার যে অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানকার বেশ কয়েক শ' মানুষ আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। ঘর জ্বলেছে হিন্দু - মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরই।

তারা বলছেন, ঘরের সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে - নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে এদের।

হুগলী জেলার চন্দননগর লাগোয়া তেলেনিপাড়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের দু`দিন পরে আজ সেখানে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে, তবে চাপা উত্তেজনা রয়েছে। পুলিশ বলছে এখন পর্যন্ত ১২৯ জনকে তারা গ্রেফতার করেছে, আটক করা হয়েছে আরো ২১ জনকে।

চটকল এলাকার কয়েক শ' ঘর দাঙ্গায় জ্বলে পুড়ে যাওয়ায় বহু মানুষ এখন স্থানীয় স্কুল বা আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আর তার মধ্যেই কেউ কেউ নিজের ঘরে ফিরে গিয়ে খুঁজে দেখছেন যে কিছু অবশিষ্ট আছে কি না।

দাঙ্গা হয়েছে যে এলাকায়, সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা আফতাব সুলতানের কয়েকটি ঘর পর থেকেই শুরু হয়েছিল ঘর-বাড়ি পোড়ানো।

সেই সব পোড়া ঘরে তিনি আজ গিয়েছিলেন।

বিবিসিকে তিনি বলছিলেন," ঈদগাহ ময়দানের কাছে আমি যেখানে থাকি, তার পাঁচটি বাড়ি ছেড়ে পরপর তিনটি বাড়ি একদম পুড়ে গেছে। সবগুলোই মুসলমানদের ঘর। দিল্লির দাঙ্গায় যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয়েছিল বলে টিভির খবরে দেখেছি, যেমন অ্যাসিড, পেট্রল আর গ্যাস সিলিন্ডার - এখানেও সেই সবের ব্যবহারের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি।"

"কোনো বাড়িতে ঈদের পরে বিয়ের ঠিক হয়ে আছে, তাই গয়না রাখা ছিল - সব পুড়ে গেছে। জমিয়ে রাখা টাকার গোছার পোড়া অংশও দেখেছি। কোনো কিছুই বাকি নেই ওইসব ঘরে," জানাচ্ছিলেন আফতাব সুলতান।

হিন্দু এলাকার মধ্যে যেমন মুসলমানদের ঘর-বাড়ি জ্বলেছে, তেমনই মুসলমান প্রধান এলাকাতে হিন্দুদের ঘরও জ্বলেছে।

যেসব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি জ্বলেছে, তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।

সুলতানকেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম কারা জ্বালালো বাড়ি-ঘর।

"মুসলমান প্রধান এলাকায় যে কয়েক ঘর হিন্দুরা থাকত, তাদের ঘর মুসলমানরা জ্বালিয়েছে, আবার একই ভাবে হিন্দু প্রধান এলাকায় মুসলমানদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর - আগুন লাগানো এসব করেছে হিন্দুরা। আমি নিজে মুসলমান হলেও এই তথ্য স্বীকার করতে দ্বিধা করব না। দাঙ্গা পরিস্থিতিতে যার যেখানে শক্তি বেশি, তারাই দুর্বলের ওপরে আক্রমণ করে," জানাচ্ছিলেন আফতাব সুলতান।

"আমাদের ফ্ল্যাটে পুলিশ ঢোকে বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ। মেইন গেট ভেঙে তারা প্রত্যেকটা ফ্ল্যাটে ঢুকছিল আর বলছিল আপনারা যদি না বেরিয়ে আসেন তাহলে দরজা ভেঙে ঢুকে খুব মারব। তাই করছিল ওরা। তালা ভেঙে যাকে পেয়েছে, তাকে মেরেছে। তারপর ঘরে ঢুকে যা যা জিনিষ ছিল - টিভি, ফ্রিজ, আলমারি সব তছনছ করে ফেলেছে। আবার সব নতুন করে গড়তে হবে আমাকে," বলছিলেন আইনুল হক।

হক যে অভিযোগ করছিলেন, পুলিশ তাদের ঘরে ঘরে ঢুকে মারধর, ভাঙচুর করেছে, সেই প্রসঙ্গে কথা বলেছিলাম চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে।

তিনি জানিয়েছেন, "কাউকে গ্রেফতার করতে গেলে দরজা যদি না খোলা হয়, সেক্ষেত্রে দরজার ছিটকিনি বা তালা ভাঙ্গার প্রয়োজনে পুলিশ দরজা ভাঙ্গতেই পারে। তবে তেলেনিপাড়া থেকে ঘরে ঢুকে ভাঙচুর করেছে পুলিশ, এরকম কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিশ্চয়ই নেব।"

করোনাভাইরাস পরীক্ষা এবং যাদের ফলাফল পজিটিভ এসেছে, তাদের কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে তেলেনিপাড়ায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়।

রোববার প্রথম উত্তেজনা তৈরি হলেও পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর থেকে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রগুলি বলছে কয়েক দিন আগে করোনা পরীক্ষার একটি শিবির করা হয়েছিল তেলেনিপাড়া এলাকায়। পরীক্ষায় প্রথমে একজন আর তারপরে আরো কজনের পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ঘটনাচক্রে তারা সকলেই মুসলমান।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলছিলেন, "ক্যাম্পটা মুসলমান প্রধান এলাকায় হয়েছিল, তাই স্বাভাবিকভাবেই পজিটিভ এলে মুসলমানদেরই হবে। কিন্তু সেটা নিয়ে হিন্দুদের একাংশ মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে থাকে। মুসলমানরাই করোনা ছড়াচ্ছে বলে টিটকিরি দেয়া হয়।"

তেলেনিপাড়া থেকে পাশের ভদ্রেশ্বরেও উত্তেজনা ছড়ায়। এরমধ্যেই মুসলিম প্রধান এলাকাটি ব্যারিকেড করে দেয়া হয়, যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।

তার পরেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছয় মঙ্গলবার দুপুরে। ব্যাপক বোমাবাজি চলে, দোকান বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

ওই অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে যাতে কেউ গুজব ছড়িয়ে অশান্তি না বাড়াতে পারে।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
দারিদ্র্যকে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনায় কাজ করছে সরকার : উপদেষ্টা আগ্রাসন চালাতে নয় আগ্রাসী শক্তিকে প্রতিহত করতে ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছি : ইরান দারিদ্র্যকে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনায় কাজ করছে সরকার : ফারুক ই আজম গোপালগঞ্জে মসজিদে যাওয়ার পথে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা কিশোরগঞ্জে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, নিজ ঘরে আত্মহত্যা রাশিয়া থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করল ইরান বাজারে আসছে শীতকালীন সবজি, কমছে দাম দেশে ইজতেমা দু’বার নয়, একবার হবে দেবিদ্বারে বাস-ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে আহত ২০ ‘ছলচাতুরি না করে কবে নির্বাচন দিবেন জাতি জানতে চায়’

সকল